অনশনে থাকা শ্রমিকরা সব দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান নেয়ায় তোবা গ্রুপের আংশিক পাওনা পরিশোধে বিজিএমইএ’র উদ্যোগ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।
Published : 06 Aug 2014, 10:05 PM
বুধবার কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে দেড় হাজার শ্রমিকের দুই মাসের বেতন দেয়ার প্রস্তুতি থাকলেও মাত্র এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিক যান বেতন নিতে।
অধিকাংশ শ্রমিক বাড্ডায় কারখানা ভবনে অনশন অব্যাহত রেখেছেন। পোশাক শ্রমিক নেতা মোশরেফা মিশুর সঙ্গে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও রয়েছেন সেখানে।
সকাল থেকে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এই সময় পুলিশি লাঠিপেটার শিকার হন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ কয়েকজন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনশনরত শ্রমিকদের বের করে দিতে চাইছে বলে শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করলেও পুলিশ বলছে, শ্রমিকরা নয়, তারা কারখানায় বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
শ্রমিকদের সাড়া না পেয়ে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম সন্ধ্যায় বলেছেন, তোবা গ্রুপের পাঁচ কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেয়ার কাজটি আরো একদিন চালানো হবে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত বেতন দেয়া হবে।
অন্যদিকে কারখানায় অবস্থান নিয়ে ৫ দফা দাবিতে অনড় থেকে তা পূরণের জন্য মালিক পক্ষকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটি।
নিজের একটি কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানির মামলায় তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেন কারাবন্দি থাকা অবস্থায় শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন বকেয়া পড়ে।
তবে সেই মামলায় জামিন নিয়ে দেলোয়ার মঙ্গলবার কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
বেতন দাবিতে আন্দোলনের এক পর্যায়ে ঈদের আগের দিন গত ২৮ জুলাই কারখানায় অনশনে বসেন শ্রমিকরা। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ১৫টি শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এর মধ্যে সরকারের মধ্যস্থতায় বিজিএমইএ তোবার শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন দিতে রাজি হয় এবং বুধবার বেতন দেয়ার দিন ঠিক করে।
বেতন নেননি আন্দোলনকারী শ্রমিকরা
কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে সকাল থেকে তোবা গ্রুপের দেড় হাজার শ্রমিকের বেতন দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বসেন আতিকুল ইসলামসহ শিল্প মালিক সংগঠনের নেতারা।
কয়েকদিন আগে ঘোষণা দেয়ার পর শ্রমিকরা তাদের পাওনা কারখানায় গিয়ে দেয়ার দাবি জানালেও বিজিএমইএ তাতে রাজি হয়নি। বুধবার বেতন নিতে না এলে পরে তা না দেয়ার হুমকিও দেয় তারা।
সকাল ১০টায় বেতন দেয়া শুরু হলে তখন কোনো শ্রমিকই ছিলেন না, দুপুর পর্যন্তও ফাঁকা ছিল বিজিএমইএ ভবন। তবে বিকালে কিছু শ্রমিক উপস্থিত হন।
বিজিএমইএ সভাপতি জানান,তাদের হিসেবে তোবা গ্রুপের ১৪৫৮ জন শ্রমিকের বেতন পাওনা ছিল। নির্ধারিত সময় বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত ৫৫০ জন শ্রমিক বেতন নিয়েছেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ার পর শ্রমিকদের বেতন দেয়ার কাজটি আরো একদিন চালানোর ঘোষণা দেন বিজিএমইএ সভাপতি। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত বেতন দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিজেএমইএ ভবনে আতিকুল ইসলাম সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সবাই মিলে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি-অনেকেই যেহেতু আজকে আসতে পারেনি, কাল (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৫টা পর্যন্ত বেতন দেয়া হবে।”
অন্যদিকে বিজিএমইএ সভাপতি পাল্টা অভিযোগ করেছেন, তোবা কারখানায় অবস্থান নেয়া কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শ্রমিকদের বেতন নিতে আসতে বাধা দিয়েছেন।
আতিকুল বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি, কারখানা তালা মেরে শ্রমিকদের আটকে রাখা হয়েছে। অনেকের আইডি আটকে রাখা হয়েছে। এ কারণে অনেকে আসতে পারেনি বেতন নিতে।”
বেতন নিতে আসা শ্রমিকদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, জোর করে তাদের ধরে নিয়ে আসা হয়েছে।
এদের একজন বুকশান গার্মেন্টের অপারেটর রাজু বেতন নিতে আসেন বিকালে। তিনি দুই মাসের বকেয়া বাবদ পেয়েছেন ১৫ হাজার ৩৪০ টাকা।
নিজেও আন্দোলনে ছিলেন জানিয়ে রাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুরে ওষুধ কিনতে হোসেন মার্কেট (তোবা কারখানা ভবন) থেকে বের হওয়ার পর সেলিম নামে বাড্ডার এক শ্রমিক নেতা আমাকে জোর করে এখানে নিয়ে আসেন।”
তোবা টেক্সটাইলের হেলপার নার্গিস জানান, সকালে কারখানায় যাওয়ার সময় শুনতে পান, কারা যেন সেখানে তালা দিয়েছে। এরপর তিনি বিজিএমইএ ভবনে চলে আসেন টাকা নিতে।
আন্দোলনের মধ্যেও টাকা নিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সবাই যেহেতু মেনে নিয়েছে, আমরাও মেনে নিয়েছি।”
আবার কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, কারখানা থেকে বের হওয়ার সময় আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বাধার কারণে সময় সময়মতো বের হতে পারেননি।
এদের একজন তুবা টেক্সটাইলের সুইংকর্মী রিয়া মনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তিন বোন এক সঙ্গে কাজ করি। বেতন দেয়া হচ্ছে শোনার পর থেকে আমরা বের হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু দরজায় তালা দেয়ার কারণে বের হতে পারিনি।”
পরে ফটক খোলার পর অন্য দুই বোন ডলি ও পলিকে নিয়ে বিজিএমইএ ভবনে চলে আসেন তিনি।
আর্থিক অসঙ্গতির কারণে প্রয়োজনের টানেও অনেককে আসতে দেখা যায় বেতন নিতে। এদের একজন শরিফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ছেলে অসুস্থ। এ কারণেই টাকা নিতে এসেছি।”
ধর্মঘটের ডাক অনশনকারীদের
বৃহস্পতিবারের মধ্যে পাঁচ দফা দাবি না মানলে আগামী শনিবার সারা দেশে সব গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তোবা গ্রুপের আন্দোলনরত শ্রমিকরা। এছাড়া বৃহস্পতি ও শুক্রবার সারা দেশে বিক্ষোভ করবে তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটি।
কমিটির সমন্বয়ক মোশরেফা মিশু সন্ধ্যায় কারখানার ছয়তলায় দাঁড়িয়ে মাইকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তোবাকর্মীদের পাঁচ দফা দাবি হলো- শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, ওভারটাইম এবং ঈদের বোনাস অবিলম্বে পরিশোধ, তোবা গ্রুপের দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য সব কারখানা সচল রাখা, যে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাদের সরকারিভাবে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, তোবা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেনের জামিন বাতিল এবং তাজরীন গার্মেন্টসে হতাহত ও নিখোঁজ শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া।
মিশু অভিযোগ করেন, কারখানার নিচে সংবাদ সম্মেলন করতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
তবে কর্মসূচি ঘোষণার সময় তোবার আন্দোলনরত শ্রমিকরা নিচে চিরকূটে ফেলে জানায়, মালিকপক্ষ বা বিজিএমইএ যদি কারখানায় এসে বকেয়া পরিশোধ করে, তাহলে দুই মাসের বেতন নিতেও তাদের আপত্তি নেই।
তোবা কারখানার এই ঘটনা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে নেয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল।
এজন্য বামপন্থি দলগুলোকে দায়ী করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এটা আন্দোলন, না কি কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন?
“শ্রমিকরা টাকার জন্যে আন্দোলন করছে। আমরা টাকা নিয়ে বসে আছি। তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে দেশের কোটি মানুষের জীবন জড়িয়ে আছে। কেউ যেন তাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।”
তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে ‘রাজনীতি’ না করার আহ্বান জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি রাজনীতিবিদের উদ্দেশে বলেন, “অর্থনীতি ও রাজনীতি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। পোশাক শিল্পকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখবেন।”
কারখানায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
দুপুরে দুই নারী শ্রমিককে বেতন নিতে বের করে আনার ঘটনা নিয়ে তোবা কারখানার সামনে কয়েকটি সংগঠন ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে থেকে দেখা যায়, নীলা নামে এক শ্রমিকের বাবা আব্দুস ছাত্তারকে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতা বের করে নিয়ে আনতে বলে। তসলিমা নামে আরেক শ্রমিকের বাবা আবুল হোসেনকেও একই কথা বলা হয়।
জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি আক্তার, সংগ্রামী গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রাবেয়া সুলতানা রানী, গার্মেন্ট টেক্সাটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামীমা আক্তার শিরীনকে এই সময় তৎপর দেখা যায়।
দুপুর পৌনে ৩টার দিকে বাংলাদেশ বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজকে তোবার ফটক থেকে আটক করে পুলিশ। এসময় অন্যরা প্রতিবাদ করলে তাদেরকেও লাঠিপেটা করা হয়।
এই সময় পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা এবং নৃ-বিজ্ঞানের গবেষক সাইদিয়া গুলরুখ।
সামিনা লুৎফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্দোলনরত শ্রমিকদের জন্য খাবার ও স্যালাইন নিয়ে এসেছিলাম। দেয়ার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। গেটের দিকে গেলে পুলিশ লাঠিপেটা করে।”
তালাকাণ্ড ও পুলিশের অভিযান
সকাল ১০টার দিকে খবর পাওয়া যায়, হোসেন মার্কেটের নিচ তলায় চারটি প্রবেশ পথের সবগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় প্রধান ফটকে একটি নতুন তালা ঝুলছে।
নিচে দেখা যায় ভ্যান, জলকামান ও এপিসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শতাধিক পুলিশ সদস্য। আর ওপরে রেলিং ধরে চিৎকার করে পুলিশকে দায়ী করছেন শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিচতলায় আমাদের কয়েকজন শ্রমিক ছিলেন। তারা জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা নতুন একটি তালা নিয়ে এসে প্রধান ফটকে লাগিয়ে দিয়েছে।”
এরপর বেলা ১২টার দিকে পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙে প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে বেতন নেয়ার জন্য শ্রমিকদের অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের ভ্যান থেকে মাইকিং শুরু হয়।
এর কিছুক্ষণ পর ‘বহিরাগতদের’ বের করে দিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ বাড্ডার হোসেন মার্কেটে ঢোকে। এ সময় অনশনরত শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনরত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের বের করে দেয় পুলিশ।
এই সময় অনশনস্থলে থাকা চিকিৎসকদেরও বের করে দেয়া হয় বলে গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু অভিযোগ করেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, পুলিশ অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের জন্য স্যালাইন নিতেও বাধা দিচ্ছে।
“আমাদের জোর করে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছে। এখানে দুইশর বেশি শ্রমিক অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের জন্য ডাক্তার বা স্যালাইন আনতে দেয়া হচ্ছে না।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, তারা পরিচয়পত্র দেখে কেবল বহিরাগতদেরই বের করে দিচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের এডিসি মাহাবুব হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি অনেক শ্রমিক বেতন নিতে বিজিএমইএতে যেতে চাইলেও যারা ওই কারখানার শ্রমিক নয় তারা বাধা দিচ্ছে।
“শ্রমিকদের সিদ্ধান্ত তারাই নেবে। বাকিদের বের করে দেয়া হবে। আমরা আইডি কার্ড দেখব। যাদের আইডি কার্ড নেই, তাদের বের করে দেয়া হবে।”
এ সময় লাঠি হতে হেলমেট মাথায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ওই ভবনের ভেতরে ঢোকেন, যাদের মধ্যে নারী পুলিশও ছিলেন।
এ সময় সাংবাদিকসহ সবাইকে ভবনে ঢুকতে বাধা দেয়া হয় এবং প্রায় ২০-২৫ জনকে কারখানা ভবন থেকে বের করে দেয় পুলিশ।
ভবন থেকে বেরিয়ে এসে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা মঞ্জুর মইন সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ তাকে জোর করে বের করে দিয়েছে।
এ সময় তোবা গ্রুপের তায়েফ ডিজাইনের কর্মী নুপূর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্ট্রেচারে করে বাইরে এনে হাসপাতলে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
ঠিক কতজনকে বের করে দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে একজন উপ পরিদর্শক বলেন, “আমরা সংখ্যা গুণছি না। পরিচয়পত্র দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক মোশরেফা মিশু বলেন, পুলিশ চতুর্থ তলা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আন্দোলনকারীদের বের করে দিয়েছে।
“বাড্ডা থানার ওসি এমএ জলিল কয়েকজনকে নিয়ে সাত তলায় আমাদের এখানেও এসেছিলেন। যারা তোবার কর্মী নন, তাদের সবাইকে বের হয়ে যেতে বলেছেন তিনি। আমরা আশঙ্কা করছি, আমাদেরও তারা জোর করে বের করে দেবে।”
১৫ শ্রমিক অসুস্থ
অনশনরত শ্রমিকদের ১৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে চিকিৎসা সেবা দিতে সেখানে উপস্থিত গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক তাহমিনা নওশীন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কারখানা থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,“ভেতরে প্রায় ৩০০ শ্রমিক এখনো রয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা ভাল নয়। পানিশূন্যতার কারণে তাদের শারীরিক সমস্যা হচ্ছে। রাতের মধ্যে সেবা না দিলে আরো ৪০ জনের অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
ডা. নওশীন অভিযোগ করেন, পুলিশের বাধা দেয়ার কারণে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে।
“পুলিশের কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে আমি সকালে একবার কারখানার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিলাম। সকালে আমাকে বাধা দেয়া হয়েছিল অনেক অনুরোধ করার পর দুপুরে ঢুকতে দেয়া হয়েছে।”
বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে সংহতি জানাতে ভেতরে ঢোকার সময় বাধা পান মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির, শিক্ষক নেতা এ এন রাশেদা ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
ইমরান বলেন,“এখানে যা কিছু ঘটছে তা অমানবিক। শ্রমিকরা পরিশ্রম করেছে। অথচ ন্যায্য পাওনার দাবিতে তাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। তারা ঈদ করতে পারেননি, উল্টে তাদের ওপরে পুলিশি নির্যাতন হচ্ছে।”:
এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ওসি আব্দুল জলিল বলেন, “বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে আমরা কারখানার শ্রমিক ছাড়া আর কাউকে ঢুকতে কিংবা বের হতে দিচ্ছি না। তবে চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি অন্যভাবে বিবেচনা করছি।”
তিনি দাবি করেন, শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। বেতন নিতে আস্তে আস্তে সব শ্রমিক বের হয়ে আসবে।
প্রতীকী অনশনে অংশ নিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তা দ্রুত মেনে আহ্বান জানিয়েছেন কয়েকটি সংগঠন ও বিশিষ্টজনরা।
তোবার অনশনরত শ্রমিকদের সমর্থনে বুধবার সকাল ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশ নেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়্যারম্যান মিজানুর রহমান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক এম এম আকাশ, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, খুশি কবির, অরূপ রাহী, ভাস্কর রাসা প্রমুখ।