বাংলাদেশের প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন, বুধবার তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় একযোগে এই ভোটগ্রহণ হবে।
Published : 27 Dec 2016, 10:40 PM
প্রায় ক্ষমতাহীন এই পরিষদের নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে আগ্রহ তেমন লক্ষ্য করা যায়নি; কেননা স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানের এই নির্বাচনে সরাসরি ভোটের বিধান রাখা হয়নি।
ভিন্ন ধরনের এই নির্বাচন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জ অনুভব করছে ইসিও, যা সাংবিধানিক এই সংস্থার সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহও স্বীকার করে নিয়েছেন।
স্থানীয় সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই কেবল ভোট দিয়ে নিজ নিজ জেলায় একজন করে চেয়ারম্যান এবং ২০ জন সদস্য নির্বাচিত করবেন।
জেলা ও উপজেলা পরিষদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত ভোট কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে।
ইসি সচিব আব্দুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
এটাই হতে যাচ্ছে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসির শেষ নির্বাচন। সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের পর জেলা পরিষদেরও ভোট করতে যাচ্ছে তারা।
২০০০ সালে আইন প্রণয়ন হলেও ১৬ বছর পর হতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন। তবে সরাসরি ভোটের বিধান না রাখার সমালোচনাও উঠেছে।
এই নির্বাচন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে ভোট বর্জন করেছে বিএনপি। ‘তামাশার নির্বাচনও’ বলছেন দলটির নেতারা। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ একে আইয়ুব খানের ‘বেসিক ডেমোক্রেসি’র সঙ্গেও তুলনা করেছেন।
সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও নির্দলীয় এই নির্বাচন থেকে দূরে থেকেছে।
বেশিরভাগ দলের বর্জনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে স্থানীয় পর্যায়ে পদ-পদবির দেওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের ভারসাম্য আনতে দেখা গেছে এই নির্বাচনে।
যেমন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে প্রার্থী করার পর মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যজন আনোয়ার হোসেনকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দাঁড় করানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে আনোয়ার হোসেনের মতো আরও ২০টি জেলাই আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে ৬১ জেলার বাকি ক’টিতে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হওয়াদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন দলটির বিদ্রোহী নেতারা। এর মধ্যে পাবনায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মেয়ে।
অন্য দলগুলোর বর্জনের মধ্যে এই বিদ্রোহী প্রার্থীদের আটকানোর চেষ্টা যে শেষ সময়ে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ, তা দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায় স্পষ্ট।
তিনি মঙ্গলবারই বলেন, “আমরা একটা পর্যায়ে চিন্তা করলাম যে, অপজিশন নেই ইলেকশনটায়, একেবারেই আনঅপোজড সবাই হয়ে যাবে, এটা কেমন যেন একটা রং মেসেজ যায়।
“যারা প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচন করছে, দলীয় লোক হলেও তাদের প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ বা কনভিন্স করা- সে বিষয়টা আছে, কিন্তু চাপাচাপিটা করা থেকে আমরা বিরত থেকেছি।”
তবে স্বল্প পরিসরের এই নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনদের প্রভাব, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোট কেনাবেচা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ উঠেছে।
৩৯ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটে রয়েছেন ১২৪ জন। এসব জেলার মধ্যে অন্তত ৩৭টিতে ক্ষমতাসীন দলের ৭৭ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে।
ইসির হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, অনেক প্রার্থী তাদের জয় নিশ্চিত করতে ভোটারদের বলছেন ক্যামেরায় ছবি তুলে আনতে, কেউ বলছেন ব্যালট পেপারের পেছনে বিশেষ চিহ্ন দিতে।
এর মধ্যে টাকা ছড়ানোর অভিযোগটিই বেশি উঠেছে। মঙ্গলবারও সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে আড়াই লাখ টাকাসহ জেলা পরিষদ নির্বাচনে এক সদস্য প্রার্থীর সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ।
ভোট কেনা-বেচার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “এখানে টাকার যে একটা ভূমিকা আছে, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।”
আরেকটি বিষয় আলোচিত হচ্ছে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রভাব। ভোটকে প্রভাবমুক্ত রাখতে সংসদ সদস্যদের এলাকা ছাড়তে স্পিকারের কাছে চিঠিও দেয় ইসি।
তবে তাতে খুব একটা সাড়া দেখা যায়নি। পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়ালকে তার এলাকাতেই দেখা গেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আউয়াল এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
এছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে জামালপুরের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করার কথাও জানান ইসি সচিব আব্দুল্লাহ।
এই ভোটের নিরাপত্তায় বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ২৩ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাকবে ২০ জন পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, ব্যাটালিয়ান আনসার ও আনসার ভিডিপির সদস্য। টহলে থাকবে বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা।
“এ নির্বাচনটিও আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জের। সব মিলিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো এ নির্বাচনে সুষ্ঠু করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে,” বলেন সচিব।