“পানির নিচের এসব জিনিস খুঁজে বের করার কাজটি রোমাঞ্চকর; এগুলো দেখলে বিস্ময়ে মন ভরে ওঠে,” বলেন ম্যাকগেচিন।
Published : 23 Apr 2024, 09:01 AM
ইউটিউবে ভিডিও দেখে শখের বশে ম্যাগনেট-ফিশিং শুরু করেছিলেন স্কটল্যান্ডের মার্ক ম্যাকগেচিন ও তার ছেলে জেমস; পাঁচ বছর ধরে তারা বিভিন্ন খালবিল থেকে উদ্ধার করেছেন বোমা, কুড়াল, ছুরি ও বন্দুকসহ অসংখ্য ধাতব জিনিস।
পানির নিচে এসব ধাতব জিনিসপত্র উদ্ধার এখন তাদের নেশায় পরিণত হয়েছে। ৪২ বছর বয়সী ম্যাকগেচিন ও তার নয় বছরের ছেলে জেমস প্রতি সপ্তাহেই স্কটল্যান্ডের নদী বা খাল-বিল চষে বেড়ান।
চুম্বক দিয়ে পানির নিচে ধাতব জিনিসপত্র অনুসন্ধানকে বলা হয় ম্যাগনেট-ফিশিং। দড়ির সঙ্গে বড় শক্তিশালী চুম্বক বেঁধে সেটি নদী বা খালে ছুড়ে মারা হয়। এরপর সেটি টেনে তুললে চুম্বকের সঙ্গে উঠে আসে পানির নিচে কাদায় পড়ে থাকা ধাতব জিনিসপত্র।
বিবিসি জানিয়েছে, ম্যাগনেট-ফিশিং শুরুর পর ম্যাকগেচিন ২০১৯ সালে ‘গ্লাসগো ম্যাগনেট ফিশিং’ নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপ খোলেন। অল্প সময়ের মধ্যে তার সেই গ্রুপে যোগ দেয় শত শত মানুষ। ইউটিউবে আমেরিকান ম্যাগনেট ফিশারদের ভিডিওি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ওই গ্রুপ খোলেন। পানির নিচ থেকে বন্দুক কিংবা বোমা উদ্ধার করলেই তারা পুলিশকে খবর দেন।
ম্যাগনেট-ফিশিং শুরু করতে ১৩.৯৯ পাউন্ড দিয়ে একটি চুম্বক কিনেছিলেন ম্যাকগেচিন। তিনি বলেন, “প্রথম দিন আমি কিরকিনটিলোচে গিয়েছিলাম এবং সাতটি ছুরি ও একটি কুড়াল পেয়েছিলাম।”
কোভিডের সময় তার গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। ম্যাগনেট-ফিশিংয়ে আগ্রহী শত শত মানুষ তার দলে যোগ দেন। প্রতি শনিবার স্কটল্যান্ডের কোনো জায়গায় সমবেত হতেন তারা।
ম্যাকগেচিন বলেন, “ম্যাগনেট-ফিশিং শুরু করার পর আমি প্রচুর ছুরি-বন্দুক খুঁজে পেয়েছিলাম। আমি সহিংস মানুষ নই, কিন্তু পানির নিচের এসব জিনিস খুঁজে বের করার কাজটি রোমাঞ্চকর। এগুলো দেখলে বিস্ময়ে মন ভরে ওঠে।
“মনে হয়, যখন এই মজার কাজটি থেমে যাবে, তখন আমিও থেমে যাব।”
ম্যাকগেচিনের ছেলে জেমস বলেন, “আমি এই কাজটি উপভোগ করি। কারণ আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে যেতে পারি। বিভিন্ন ধাতব জিনিসপত্রের সঙ্গে বোমাও পেয়েছি, যেগুলোর কিছু আবার সক্রিয় বা অবিস্ফোরিত।”
বোমা পাওয়া গেলে বম স্কোয়াডকে খবর দেন ম্যাকগেচিন। বেশিরভাগ সময় তিনি ডালমারনক ব্রিজে ম্যাগনেট-ফিশিংয়ের জন্য যান। তার পাশেই একসময় ছিল অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরির কারখানা।
ম্যাকগেচিনের ভাষ্য, এসব বন্দুক ও বোমা উদ্ধার করে দেওয়ায় পুলিশ তাকে একভাবে ভালোবাসে, আবার অপছন্দও করে।
“পুলিশ আমাকে ডালমারনক ব্রিজ থেকে দূরে থাকতে বলেছিল। কারণ সেখানে আমি এমন কিছু অস্ত্র খুঁজে পাই, যা নিস্ক্রিয় করার জন্য পুলিশকে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়। পাশাপাশি জনগণের নিরাপত্তার কথাও তাদের ভাবতে হয়।
“কিন্তু এই কাজটি আমার শখ। আমার অপরাধের কোনো রেকর্ড নেই, আর সেরকম কিছুই চাইও না।”
ম্যাকগেচিনের গ্রুপ অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও মোটরবাইক ও গাড়িও খুঁজে পেয়েছে পানির নিচে। অসংখ্য অস্ত্র উদ্ধার করতে করতে খানিকটা ‘বিরক্তও’ ম্যাকগেচিন। তিনি এখন ঐতিহাসিক বা প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসপত্র খুঁজতে চান।
স্কটল্যান্ড পুলিশের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ম্যাগনেট-ফিশিং বেআইনি না হলেও জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি বা অবহেলা থাকলে এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দায়ী করা হতে পারে।