চাঁদে এক চন্দ্রদিন অর্থাৎ ১৪ দিন ধরে পরীক্ষা চালানোর কথা রয়েছে চন্দ্রযান-৩ এর।
Published : 23 Aug 2023, 09:20 PM
নির্ধারিত সময়ের আগেই চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে ভারতের চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম। এ মুহূর্তে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রয়েছে যানটি।
গত ১৪ জুলাই থেকে দেশবাসীর চোখ ছিল যানটির অবতরণের অপেক্ষায়। আজ খুশিতে বাঁধ ভেঙেছে ভারতবাসীর। বুধবার কাঁটায় কাঁটায় সন্ধ্যা ৬টা ০৪ মিনিটে চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে বিক্রম। এরপরই জয়জয়কার হচ্ছে ভারতের।
কয়েকদিন আগেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে নামতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়ার মহাকাশযান। সেদিক থেকে চাঁদের একই মেরুতে নিরাপদে নেমে যেন রাশিয়াকে টেক্কা দিল ভারত।
চাঁদে নিরাপদে অবতরণ তো হল, এবার কী করবে যানটি?
চাঁদে এক চন্দ্রদিন অর্থাৎ ১৪ দিন ধরে পরীক্ষা চালানোর কথা রয়েছে চন্দ্রযান-৩ এর। যানটির ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের মাটিতে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তা থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে রোভার বা রোবটযান প্রজ্ঞান। তাতে লাগানো রয়েছে চাকা।
চাঁদের মাটিতে এটি ঘুরে বেড়াবে। নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত রোভার ঘোরাফেরা করতে পারে। সেখান থেকে রোভারটি বিভিন্ন তথ্য পাঠাবে। শুধু তাই নয়, চাঁদের ছবিও তুলবে এটি। এ রোবটযানে আছে নেভিগেশন ক্যামেরা এবং একটি সোলার প্যানেল।
প্রজ্ঞান রোভারে আছে দুটি পেলোডও। এগুলোর কাজ কী?
লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ (এলআইবিএস) চাঁদের মাটিতে উপস্থিত রাসায়নিকের পরিমাণ এবং গুণমান পরীক্ষা করবে। খনিজের সন্ধান করবে।
আর আলফা কণা এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (আলফা পার্টিকেল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার – এপিএক্সএস) পরীক্ষা করবে নানা উপাদান। যেমন- ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, টিন ও আয়রন। চন্দ্রপৃষ্ঠের এই রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণের পাশাপাশি চলবে পানির সন্ধানও।
যেভাবে হবে কাজ:
ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান তাদের অভিযান পরিচালনার জন্য ব্যবহার করবে সৌরশক্তি। চাঁদের এক মাস সমান পৃথিবীর ২৮ দিন। এক চান্দ্রমাসে টানা ১৪ দিন রাত আর টানা ১৪ দিন দিনের ভাগ থাকে। ফলে চাঁদ অন্ধকারে ডুবে থাকলে কাজ করতে পারবে না ল্যান্ডার। তাই সূর্যের আলো থাকতেই ল্যান্ডার ও রোভার চাঁদের মাটিতে অনুসন্ধান চালাবে।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর হিসাবে ২৩ অগাস্ট থেকে টানা ১৪ দিন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে দিন থাকবে। সূর্যের আলোয় ঝকঝক করবে চন্দ্রপৃষ্ঠ। ফলে সৌরশক্তি ব্যবহার করে নিজেদের কাজ চালাবে বিক্রম ও প্রজ্ঞান। পাশাপাশি, ভবিষ্যতের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে রাখবে তারা।
চন্দ্রাভিযানে মূল কাজটি ল্যান্ডার বিক্রমই করবে। তবে অবতরণের জায়গা থেকে সেটি নড়াচড়া করবে না। ল্যান্ডারের যোগাযোগ হবে মাটিতে ঘুরে বেড়ানো রোভার প্রজ্ঞানের সঙ্গে। এরপর রোভারের দেওয়া সব তথ্য ল্যান্ডারই পাঠিয়ে দেবে পৃথিবীতে।
বিজ্ঞানীদের কী লাভ?
সামগ্রিকভাবে, বিক্রম ল্যান্ডার এবং প্রজ্ঞান রোভারের একযোগে চাঁদের বায়ুমণ্ডল, পৃষ্ঠতল, রাসায়নিক পদার্থ, ভূকম্প ও খনিজ অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের জন্য গবেষণার তথ্য পাবেন। গবেষণা করা সহজ হবে। এটি বিজ্ঞানীদের জন্য সুবিধাজনক হবে।