নতুন রুটে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে ক্রিস্টাল মেথ পাচার হচ্ছে উন্নত দেশে: জাতিসংঘ

মারাত্মক এই মাদক মিয়ানমার হয়ে নতুন রুটে বাংলাদেশ এবং ভারতের ভেতর দিয়েও পাচার হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2023, 05:30 PM
Updated : 3 June 2023, 05:30 PM

ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, পুরো নাম ক্রিস্টাল মেথামফেটামিন। মাদকের জগতে অপেক্ষাকৃত নতুন এই মাদকটি দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে উন্নত দেশগুলোতে পাচারে নতুন নতুন পথ বের করছে মাদক পাচারকারীরা। যেখানে কয়েকগুণ বেশি দামে এই মাদক বিক্রি হয়।

সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন এমনই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বলে জানায় বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদক পাচার প্রতিরোধে থাইল্যান্ড ও চীন সরকারের কড়া ব্যবস্থার কারণে মাদকচক্র এখন সড়ক পথ ব্যবহার না করে সমুদ্র পথ বেশি ব্যবহার করছে।

মাদকনিয়ন্ত্রণে সড়ক পথের তুলনায় সমুদ্রপথে পাহারা বেশ কঠিন।

এছাড়াও মাদক পাচারকারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্ভাব্য অভিযানের বিষয়ে ‘আগেই অনুমান করতে পারা, তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা’ খুব ভালো ভাবেই রপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে করে ইউএন অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম।

ক্রিস্টাল মেথ বা আইস জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডে বিক্রি হচ্ছে।

ইউএন অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম থেকে সতর্ক করে আরো বলা হয়, মেথামফেটামিন এবং অন্যান্য মাদক যেগুলোর বেশির ভাগই মিয়ানমারের একটি অংশের সুপার ল্যাবগুলোতে তৈরি, সেগুলোর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার গতি কমার কোনো লক্ষণই নেই।

বিশ্বাস করা হয়, মিয়ানমারের শান রাজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি ক্রিস্টাল মেথ বিশ্বজুড়ে পচার হয়।

পাচারকারীরা লাওস, কম্বডিয়া এবং থাইল্যান্ড সীমান্ত দিয়ে এই মাদক পাচার করে। ওই এলাকা ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল’ নামে পরিচিত।

জাতসিংঘের সংস্থাটির আঞ্চলিক প্রতিনিধি জেরেমি ডগলাস বলেন, ‘‘আমরা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ২০২২ সালে তাদের থাইল্যান্ড সীমান্ত জুড়ে অনেক বেশি সক্রিয় হতে দেখেছি।

‘‘পাচারকারীরা লাওস এবং থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকের চালান পাঠানো অব্যাহত রেখেছে। একইসঙ্গে তারা মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চল থেকে আন্দামান সাগর হয়েও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাদক পাচার করেছে।”

মেথ প্রধানত দুইটি আকারে পাচার হয়। বড়ি আকারে, যেটির নাম ইয়াবা এবং অত্যন্ত উত্তেজক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস আকারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে থাইল্যান্ড ও চীন সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় মাদক পাচার বন্ধে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল জুড়ে অভিযান জোরদার করেছে।

অপরাধী চক্রগুলো থাইল্যান্ডকে মাদক পাচারের ‘ট্রানজিট কান্ট্রি’ হিসেবে ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের মত দেশে পৌঁছায়। এসব দেশে ব্যাংককের তুলনায় এই মাদকের ১০গুণ পর্যন্ত বেশি দাম পাওয়া যায়।

মিয়ানমার থেকে ক্রিস্টাল মেথের বড় বড় চালান প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারত হয়েও অন্যান্য দেশে যায় বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছর থাইল্যান্ড ও চীনে মাদক জব্দের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।

ইস্ট এশিয়া ও সাউথ ইস্ট এশিয়ায় গত বছর প্রায় ১৫১ টন মেথামফেটামিন জব্দ হয়। তার আগের বছর যে পরিমাণ ছিল ১৭১ টন।

এর কারণ হিসেবে কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, অপরাধী দলগুলি মাদক পাচারের রুটে ‘বৈচিত্র’ আনার উপায় খুঁজে পেয়েছে। এবং বিকল্প সামুদ্রিক পথ ব্যবহার করে মাদক পাচার করে যাচ্ছে।

এ সপ্তাহের শুরুতে থাই কর্তৃপক্ষ গল্ফ অব থাইল্যান্ডে একটি ট্রলার থেকে নয়শ কেজির বেশি ক্রিস্টাল মেথ জব্দ করে। প্রায় চার মাস ধরে অভিযান পরিচালনার পর মাদকের এত বড় চালান ধরা পড়েছে।

সমুদ্রে যেখান থেকে ট্রলারটি আটক করা হয় সেখান থেকে পর্যটকপ্রিয় দ্বীপ সামেদ মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে। ট্রালারের ছয় ক্রুকেও আটক করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেন, খুব সম্ভবত ছোট থাই নৌকায় করে মাদকগুলো নিয়ে গভীর সমুদ্রে বড় ট্রলারে তোলা হয়। ট্রলারটির গন্তব্য ছিল অস্ট্রেলিয়া।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে কম্বডিয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, দেশটি মাদক পাচারের গুরুত্বপূর্ণ পথ হয়ে উঠছে।

‘‘এছাড়াও দেশটি ওই অঞ্চলের মাদক কারবারের বাড়তি উৎপাদন ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।”