রাশিয়া-ভারতের তেল চুক্তিতে বিপাকে দশক পুরোনো ডলারের আধিপত্য

বাজারে অন্য মুদ্রা শক্তিশালী অবস্থান করে নিচ্ছে এবং এই ধারা যে অব্যাহতও থাকতে পারে- নিষেধাজ্ঞাজনিত টালমাটাল পরিস্থিতি এবং ইউক্রেইনে যুদ্ধের মধ্যে ভারতের তেল বাণিজ্য তারই শক্ত প্রমাণ হাজির করছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2023, 12:35 PM
Updated : 8 March 2023, 12:35 PM

সমুদ্রপথে অপরিশোধিত তেল বেচাকেনায় ভারত ও রাশিয়ার শীর্ষ কোম্পানিগুলো তাদের মধ্যকার বেশিরভাগ চুক্তি অন্য মুদ্রাতে করতে থাকায় রাশিয়ার ওপর ‍যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উল্টো আন্তর্জাতিক তেল বাণিজ্যে দশক পুরোনো ডলারের আধিপত্যই খর্ব করা শুরু হয়েছে।

ডলার প্রাধান্য পাওয়ার বিষয়টি সময়ে সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবচেয়ে প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই মুদ্রা এতদিন তার আধিপত্য ধরে রেখেছিল। 

কিন্তু বাজারে অন্য মুদ্রা শক্তিশালী অবস্থান করে নিচ্ছে এবং এই ধারা যে অব্যাহতও থাকতে পারে- নিষেধাজ্ঞাজনিত টালমাটাল পরিস্থিতি এবং ইউক্রেইনে যুদ্ধের মধ্যে ভারতের তেল বাণিজ্য তারই শক্ত প্রমাণ হাজির করছে বলে এক প্রতিবেদনে বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ভারত বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ তেল আমদানিকারক দেশ; গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে মস্কো তার অভিযান শুরু করলে ইউরোপ রাশিয়ার তেলে নানা ধরনের বিধিনেষধ আরোপ করতে থাকে, সেই সুযোগে ভারত দেশটিকে তার সর্ববৃহৎ সরবরাহকারীতে পরিণত করেছে।

যুদ্ধবিরোধী একটি জোট গত বছরের ৫ ডিসেম্বর থেকে রাশিয়ার তেলের মূল্যসীমা বেধে দেওয়ার পর ভারতীয় ক্রেতারা তাদের কেনা বেশিরভাগ রুশ তেলের দাম পরিশোধ করেছে ডলার নয় এমন মুদ্রায়; এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিরহাম আর রাশিয়ার রুবলও আছে বলে একাধিক তেল ব্যবসায়ী ও ব্যাংকিং সূত্র জানিয়েছে। 

গত তিনমাসে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে তেল কেনাবেচায় কয়েকশ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা; এমন প্রবণতার কথা আগে শোনা যায়নি।

শিল্পোন্নত ৭টি দেশের জোট জি৭, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও অস্ট্রেলিয়া গত বছর মস্কোর যুদ্ধের অর্থ আটকাতে পশ্চিমা বিভিন্ন কোম্পানি ও জাহাজ কোম্পানি যেন বেধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রুশ তেল কেনাবেচা ও সরবরাহ না করতে পারে তা নিশ্চিতে মূল্যসীমা ঠিক করে দেয়।

বেশকিছু দুবাইভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রুশ জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম ও রোসনেফট সুনির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির তেলের ক্ষেত্রে ডলারের বাইরের মুদ্রায় লেনদেন করতে চাইছে, যেসব তেল সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেধে দেওয়া ৬০ ডলার মূল্যসীমার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে বলে বিষয়টি সম্বন্ধে সরাসরি জ্ঞাত তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। বিষয়টির সংবেদনশীলতা বিবেচনায় ওই সূত্রগুলো তাদের নাম প্রকাশ করতে নিষেধ করেছে। 

তবে এই তেলের পরিমাণ ভারতে রাশিয়ার বিক্রি করা মোট তেলের খুবই সামান্য এবং এতে নিষেধাজ্ঞার লংঘন ঘটেনি বলেই মনে হচ্ছে।

অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটাতে রাশিয়ার জাহাজ পরিচালনাকারী কোম্পানি ও বীমা কোম্পানিগুলোর মতো পশ্চিমা নয় এমন অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই তৎপর বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা।

নিজের অর্থনীতিকে ডলারের কবল থেকে বের করে আনতে ও ব্যবসায়ীরা যেন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে পারে তা নিশ্চিতে অন্য মুদ্রায় বেশ কয়েকটি লেনদেন ভারতীয় তিনটি ব্যাংকও করেছে বলে বাণিজ্য সূত্রগুলোর পাশাপাশি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অর্থনৈতিক কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন।

অবশ্য দিরহামে রুশ তেল কেনাবেচা সামনের দিনগুলোতে কঠিন হয়ে উঠবে বলেই মনে করা হচ্ছে, কেননা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন গত মাসে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা রুশ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মস্কো ও আবু ধাবিভিত্তিক এমটিএস ব্যাংককেও ঢুকিয়েছে।

এমটিএস ভারতের তেল ক্রয়ের কিছু ডলারবিহীন লেনদেনে ভূমিকা রেখেছে বলে বাণিজ্য সূত্রগুলোও জানিয়েছে। এই প্রসঙ্গে এমটিএস বা মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দিক থেকে সাড়া পায়নি রয়টার্স।

ভারতের একটি তেল শোধনাগার সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অধিকাংশ রুশ ব্যাংকই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়লেও ভারতীয় ক্রেতা ও রুশ সরবরাহকারীরা রুশ তেলের লেনদেন অব্যাহত রাখার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। 

“তেলের দাম নিতে অন্য ব্যাংক ঠিকই খুঁজে বের করতে রুশ সরবরাহকারীরা। যেহেতু সরকার আমাদের রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে বলছে না, তাই, যদি এখনকার ব্যবস্থা বন্ধও হয়ে যায় তাও বিকল্প পদ্ধতিতে লেনদেনের কৌশল ঠিকই বের হয়ে যাবে,” বলেছে ‍সূত্রটি।