রাজনৈতিক দলগুলোকে জনরায় মানার আহ্বান জানিয়েছেন পিটিআই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ওমর আইয়ুব। রাওয়ালপিণ্ডি কমিশনারের ভোট জালিয়াতির অভিযোগের তদন্তও দাবি করেন তিনি।
Published : 18 Feb 2024, 07:38 PM
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারান্তরীণ ইমরান খানের দল ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ’ (পিটিআই)-ই কেন্দ্র এবং প্রদেশে সরকার গঠন করবে বলে জোর গলায় অটল অবস্থান ব্যক্ত করেছেন দলটির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ওমর আইয়ুব খান।
পাকিস্তানের ‘দ্য ডন’ পত্রিকা জানায়, রাজধানী ইসলামাবাদে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে আইয়ুব গত কয়েকমাস ধরে পিটিআইয়ের ওপর দমনপীড়নের সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত পুলিশ দলের নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে চাপ দিচ্ছে। এটি কোনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজ না। তারা তাদের ম্যান্ডেটকে ছাড়িয়ে গেছে।”
এ বক্তব্য রাখার সময় আইয়ুব জোর দিয়ে বলেন, পিটিআই-ই কেন্দ্র এবং প্রদেশে সরকার গঠন করবে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের দেওয়া রায় মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, “এই রাজনৈতিক দলগুলো এমনকি ৪০ আসনও জিতেনি। জনগণ কি বলছে সেটি তাদের প্রত্যোকেরই শোনা দরকার। আর তা হল, তারা ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং তারা আরও ভাল একটি পাকিস্তান চায়।”
গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট ডাকাতি থেকে পিপিপি এবং পিএমএল-এন সুবিধা পেয়েছে বলে মন্তব্য করে আইয়ুব বলেন, কে কার পিঠে আগে ছুরি মারে তাই এখন দেখা বিষয়।
ভোট ডাকাতি সম্পর্কে তিনি বলেন, পিটিআই-য়ের বিরুদ্ধে ভোট ডাকাতি ‘সব ভোট ডাকাতির মা’। এই ভোট ডাকাতি পিটিআই কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করছে। ভোট ডাকাতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান আইয়ুব।
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির নির্বাচন কমিশনার লিয়াকত আলী চাতা শনিবার ভোট জালিয়াতির সঙ্গে নিজের জড়িত থাকা নিয়ে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তারপর বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ প্যানেলে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ বিচারবিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন আইয়ুব।
আইয়ুব খানের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন পিটিআই এর বর্তমান চেয়ারম্যান গহর আলি খানও। তিনিও বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অনেক বাধার সম্মুখীন হলেও জনগণ ইমরান খানের পক্ষেই তাদের রায় দিয়েছে।
গহর দাবি করেন, নির্বাচনে ইমরান খানের দল পিটিআই ১৮০ আসনে জয় লাভ করেছে। বিজিত আসনগুলোর মধ্যে ১১৫টি পাঞ্জাবের, ১৬টি সিন্ধু, ৪২টি খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং ৪টি বেলুচিস্তানের।‘পাকিস্তানের মানুষ ইমরান খানকেই তাদের নেতা নির্বাচন করেছে’, বলেন তিনি।
গহর বলেন, পাঞ্জাবে পিটিআই এর জয় মিশ্র হয়েছে। সিন্ধুতে জয় উল্টে দেওয়া হয়েছে। আর বেলুচিস্তানে কমানো হয়েছে। রাওয়ালপিণ্ডির কমিশনারের বক্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, “এই প্রথম একজন গভর্নর নিজের বিবেক থেকে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ভোট কারচুপির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করা এবং তদন্ত করা উচিত।”
পাকিস্তানে ৮ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক চলার মধ্যে শনিবার বিস্ফোরক মন্তব্য করেন লিয়াকত আলী চাতা। তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে ভোট জালিয়াতিতে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দেন।
লিয়াকত আরও অভিযোগ করেন, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ও প্রধান বিচারপতি কাজী ফায়েজ ইসা ভোট কারচুপিতে জড়িত। যদিও নির্বাচন কমিশন ও প্রধান বিচারপতি ফায়েজ ইসা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফসহ (পিটিআই) আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশজুড়ে ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরুর প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ই লিয়াকত আলী চাতা ওই অভিযোগ করেন। এরপর পদত্যাগ করে চাতা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণও করেছেন।
রোবারের সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই-য়ের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ওমর আইয়ুব খান বলেন, চাতা যে ৭০ হাজার ভোটের কথা বলেছেন, সেগুলো পিটিআইয়ের। পিটিআই প্রার্থীদেরকে ভোটের প্রকৃত ফল জানানোর দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমি এটিও বলতে চাই যে, করাচিতে আমাদের ১৮-১৯ আসন চুরি করেছে এমকিউএমপি। কারচুপি সেইভাবেই হয়েছে যেভাবে চাতা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আমরা চাই এই প্রক্রিয়া পাল্টে দেওয়া হোক।”
পাঞ্জাব এবং অন্যান্য প্রদেশে সরকার গড়ার মতো সংখ্যা পিটিআই এর আছে দাবি করে আইয়ুব প্রদেশগুলোতে পিটিআই সরকার গঠন করবে বলে ঘোষণা দেন।