বিপদে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ব্যাংক, উদ্ধার করতে ৩০ বিলিয়ন ডলার

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতে সংকট সৃষ্টি হতে পারে শঙ্কায় বিশ্বজুড়েই উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2023, 08:11 AM
Updated : 17 March 2023, 08:11 AM

আঞ্চলিক ছোট ব্যাংক ফার্স্ট রিপাবলিককে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে তাদেরকে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বড় ব্যাংকের একটি গ্রুপ।

দেশটিতে একের পর এক ব্যাংক পতনের পর ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্য নিয়ে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক দূর করতে মার্কিন কর্তৃপক্ষের তোড়জোড়ের মধ্যে বড় ব্যাংকের ওই গ্রুপের পক্ষ থেকে এ পদক্ষেপের ঘোষণা এলো।

বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতে সংকট সৃষ্টি হতে পারে শঙ্কায় বিশ্বজুড়েই উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।  

তার মধ্যে ফার্স্ট রিপাবলিককে উদ্ধারে ব্যাংকগুলোর এ পদক্ষেপকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছে মার্কিন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।

আর বড় ব্যাংকগুলো বলছে, তারা যে ব্যাংকিং খাত নিয়ে প্রবল ‘আত্মবিশ্বাসী’ এই পদক্ষেপ তারই প্রতিফলন।

ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর নগদ অর্থ আছে এবং তারা ব্যাপক লাভও করছে, ভাষ্য তাদের।

“সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতেও এই অবস্থার নড়চড় হবে না। আমেরিকার সবচেয়ে বড় ব্যাংকগুলোর এই পদক্ষেপ দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের আত্মবিশ্বাসেরই প্রতিফলন,” বলেছে ওই ১১টি ব্যাংক।

জেপি মরগান ও সিটিগ্রুপের নেতৃত্বে একদল ব্যাংকের সহায়তার খবর মার্কিন শেয়ারবাজাকেও চাঙ্গা করে দেয়, এক পর্যায়ে ফার্স্ট রিপাবলিকের শেয়ারের দাম ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়, যার ফলে লেনদেন সাময়িক স্থগিতও হয়ে যায়।

শেষবেলায় ফের ব্যাংকটির শেয়ার কম দামে বিক্রি শুরু হয়, যা উদ্বেগ জিইয়ে রেখেছে।

গ্রাহকরা তাদের জমা তুলে নিতে ভিড় করার পর এই ব্যাংকটিই ঝুঁকিতে পড়া পরবর্তী ব্যাংক হতে যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের এমন উদ্বেগ গত সপ্তাহজুড়ে সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক ব্যাংকটির শেয়ারের দাম প্রায় ৭০ শতাংশ পড়ে যায়।

“একদল বড় ব্যাংকের এই ধরনের সহায়তাকে স্বাগত জানাচ্ছি, এটা (যুক্তরাষ্ট্রের) ব্যাংকিং খাতের দৃঢ়তাকেই দেখাচ্ছে,” বলছেন মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ নম্বর বৃহত্তম ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো দৃশ্যমান হতে থাকে।

দুইদিন যেতে না যেতেই পতন ঘটে নিউ ইয়র্কের সিগনেচার ব্যাংকের।

আর কোনো ব্যাংক যেন বিপদে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ সাধারণ সীমা ছাড়িয়ে গ্রাহকদের আমানতের গ্যারান্টি দিতে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করলেও শেয়ার বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতি থামাতে পারেনি।

Also Read: যুক্তরাষ্ট্রে দুই ব্যাংকের পতন: প্রভাব গড়াবে কতদূর

এই পরিস্থিতিতে মার্কিন ব্যাংকগুলো ফেডারেল রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়। গত সপ্তাহে কয়েকদিনের ভেতর তারা ৩১৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়, অথচ আগের সপ্তাহেই এই পরিমাণ ছিল মাত্র ১৫ বিলিয়ন ডলার।

“ব্যাংকিং খাত যে গুরুতর সংকটে রিজার্ভ কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়াই তা দেখাচ্ছে, বাস্তব অর্থনীতিতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে,” বলেছেন ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের উত্তর আমেরিকা বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ পল অ্যাশওর্থ।

এদিকে ওয়াশিংটনে রাজনীতিকদের সামনে উপস্থিত হওয়ার আগে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন উদ্বেগের কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, অর্থ জমা দানকারীদের মার্কিন ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর আস্থা থাকা উচিত।

“মোটাদাগে ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিরাপদ ও ঠিকঠাক ভাবে চলছে, আমরা এমনটা বলার পরও অনেক ব্যাংকের বিপদে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে,” বলেছেন তিনি।

ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট লুই দে গুইদো বলেছেন, ইউরোপের ব্যাংক খাত ‘সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে’ আছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতির ধাক্কা তাদের গায়ে খুব একটা লাগবে না। 

সুদের হার আড়াই থেকে বাড়িয়ে তিন শতাংশ করার ঘোষণা দিতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।

সুদের হার বৃদ্ধির পদক্ষেপ টালমাটাল বাজারে কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও ইসিবি গত কিছুদিন ধরে নিয়মিত বিরতিতেই সুদের হার বাড়িয়ে চলছে।