হাতির আক্রমণে মারা গেলে ৭ লাখ ইউয়ান (এক কোটি টাকার বেশি) পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। ফসলের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ মেলে হিসাব অনুযায়ী।
Published : 09 Jul 2023, 08:55 AM
চীনের ইউনান প্রদেশে বন্য হাতির বাসস্থান ঠিক রেখে গড়ে তোলা হয়েছে পার্ক। নিজেদের এলাকায় ঘোরাঘুরি আর সংসার পাতার সুযোগ পাচ্ছে শিসুয়াংবান্না ওয়াইল্ড এলিফ্যান্ট ভ্যালির প্রাণীরা।
বন্য হাতি হলে কি, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকে সেগুলো। আবার চাইলে নিজের এলাকা ছেড়ে বাইরেও যেতে পারে।
অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে গিয়ে মানুষ বা ফসলের ক্ষতি করলে ক্ষতিপূরণের জন্য রয়েছে বীমার রক্ষাকবচ।
প্রতিটি হাতির নামে বীমা কোম্পানিকে প্রিমিয়াম পরিশোধ করে সরকার। আর মানুষের ক্ষতির হিসাবে পরিশোধ করা হয় বীমা দাবি।
শিসুয়াংবান্না ওয়াইল্ড এলিফ্যান্ট ভ্যালির কর্মীরা জানান, হাতির আক্রমণে মারা গেলে ৭ লাখ ইউয়ান (এক কোটি টাকার বেশি) পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। ফসলের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ মেলে হিসাব অনুযায়ী।
এই অভয়ারণ্যে প্রায় তিনশ এশীয় হাতি রয়েছে। চিরহরিৎ বনের ভেতর দিয়ে হাতি দেখার জন্য রয়েছে প্রায় ৪ হাজার মিটার দীর্ঘ কাঠের তৈরি হাঁটার পথ।
শিসুয়াংবান্না দাই অটোনোমাস প্রিফেকচারের প্রধান শহর জিনহং থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থান এই হাতি উপত্যকার। অভয়ারন্যের বিস্তৃতি দুই লাখ ৪২ হাজার ৫০০ হেক্টর, যা শিসুয়াংবান্নার ভূমির ১২ শতাংশ।
চীনা গণমাধ্যম সিজিটিএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাণীদের জন্য চীনের সর্বপ্রথম থিম পার্ক এই শিসুয়াংবান্না ওয়াইল্ড এলিফ্যান্ট ভ্যালি। সেখানে খুব কাছ থেকে নিরাপদে এশীয় হাতি দেখা যায়।
ওয়াইল্ড এলিফ্যান্ট ভ্যালির কর্মকর্তারা জানান, ২০১০ সালে বন্য প্রাণীর সরকারি দায়বদ্ধতা থেকে পরীক্ষামূলক বীমা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। পরে বাণিজ্যিক মডেল প্রবর্তনের মাধ্যমে ২০১৪ সালে পুরো প্রদেশকে বীমা সুবিধার আওতায় আনা হয়।
সরকারি হিসাব বলছে, ২০২১ সালে এই হাতি বীমার পরিমাণ পৌঁছায় ৬৫ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ইউয়ানে। চলতি বছর কেবল পুয়ার নগরী এবং শিসুয়াংবান্না প্রিফেকচারেই বীমা করা হয় ৫০ মিলিয়ন ইউয়ানের।
এশীয় হাতির ক্ষয়ক্ষতির কারণে ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৭ কোটি ৩০ লাখ ইউয়ান ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করেছে ইউনান প্রদেশ।
একেক ধরনের ফসলের বিপরীতে বিভিন্ন বীমা কোম্পানি একেক ধরনের ক্ষতিপূরণের হিসাব করে থাকে। ভুট্টার ক্ষেত্রে প্রতি একশ বর্গমিটার ক্ষতির জন্য ১০৩ ইউয়ান এবং ধানে ১৬২ ইউয়ান ক্ষতিপূরণ ধরা হয়।
এভাবে বন্য প্রাণীর সুরক্ষা এবং মানুষের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা সমানতালে করার কথা তুলে ধরে ইউনান প্রদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক কার্যালয়ের উপ-মহাপরিচালক মা জুয়োশিন বলেন, “এই বন্য হাতির অভয়ারণ্য আমাদেরকে দেখাচ্ছে কীভাবে উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা যায়।”
বাংলাদেশে বীমার এমন ব্যবস্থা না থাকলেও বন্য প্রাণীর আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
২০২১ সালের বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত জানমালের ক্ষতিপূরণ বিধিমালা অনুযায়ী, বন্য প্রাণীর আক্রমণে মৃত ব্যক্তি তিন লাখ টাকা, গুরুতর আহত ব্যক্তি সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা এবং সম্পদ নষ্টের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন।
ওই বিধিমালায় বলা হয়েছে, বন্য হাতি ছাড়াও বাঘ, কুমির, ভালুক বা সাফারি পার্কে থাকা বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হলেও ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করা যাবে।