প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় গত বছর বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল।
Published : 09 Jan 2024, 09:09 PM
বিজ্ঞানীরা আগেই আভাস দিয়েছিলেন। এবার নিশ্চিত করে বললেন, মানব ইতিহাসে এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে উষ্ণ বছর ২০২৩।
এই রেকর্ড হওয়ার পেছনে কাজ করেছে মানব সৃষ্ট কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক কারণে হওয়া এল নিনোর প্রভাব।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্লাইমেট সার্ভিস থেকে বলা হয়, প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় গত বছর বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল।
বিবিসির বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত বছর জুলাই থেকে প্রায় প্রতিদিনই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন নতুন রেকর্ড হয়েছে।
আর অক্টোবর মাসের গড় উষ্ণতা দেখার পরই বিজ্ঞানীরা ২০২৩ উষ্ণতম বছর হতে চলেছে বলে নিশ্চিত হন। শিল্পবিপ্লবের আগে অর্থাৎ, ১৮৫০-১৯০০ সালের মধ্যে অক্টোবরের গড় উষ্ণতা যা ছিল, তার চেয়ে এ বছর অক্টোবরে উষ্ণতা ০ দশমিক ৪ ডিগ্রি বেশি ছিল। অনেকের কাছে এই মাত্রা নগণ্য মনে হলেও জলবায়ু বিজ্ঞান তা মনে করছে না।
আর কেবল অক্টোবর নয়। একইভাবে বিশ্বের গড় উষ্ণতা বেড়েছিল গত সেপ্টেম্বরেও। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের উষ্ণতা রীতিমতো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিজ্ঞানীদের কাছে।
ইউরোপভিত্তিক জলবায়ুবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে ২০২৩ সাল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হতে চলার পূর্বাভাস দেওয়া হয় গত নভেম্বরের শুরুতেই।
এ বিষয়ে টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ডেসলার বলেন, “আমাকে যেটা ভাবাচ্ছে সেটা শুধুমাত্র ২০২৩ সালের রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রাই নয়। বরং আগের রেকর্ডের তুলনায় এবারের রেকর্ডের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি।
“এই রেকর্ডগুলির মধ্যে কয়েকটির মার্জিন সত্যিই আশ্চর্যজনক।”
এটা সবারই জানা যে, বিশ্ব গত ১০০ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে অনেক বেশি উষ্ণ। এর কারণ মানুষ। মানুষই নানা কারণে বায়ুমণ্ডলে রেকর্ড পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মত গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন করছে।
তা সত্ত্বেও ২০২২ সালেও জলবায়ু বিজ্ঞানীরা ধারণা করতে পারেননি যে ২০২৩ সাল সবচেয়ে উষ্ণ বছরের রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। পৃথিবীর জলবায়ুর জটিল আচরণের কারণেই তারা এমনটা অনুমান করতে পারেননি।
২০২৩ সালের শুরুর কয়েক মাসেও এমন পূর্বাভাস ছিল না। বরং প্রথম কয়েক মাসে অল্প কয়েকদিন বাতাসে তাপমাত্রার নুতন রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড হয়েছে এবং তাপমাত্রা অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়েছে।
২০২৩ সাল সবচেয়ে উষ্ণ বছরে পরিণত হওয়ার পেছনে বিশ্ব জুড়ে চলা এল নিনো বড় ভূমিকা রেখেছে।
এল নিনো একটি প্রাকৃতি অবস্থায়। যখন পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ পৃষ্ঠের জল বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত তাপ ছাড়ে।
তবে এল নিনো শুরু হওয়ার আগেই তাপমাত্রা অস্বাভাবিক রকম বেড়েছে। এল নিনোর সম্পূর্ণ প্রভাব এখনো দেখা যায়নি বলে ধারণা জলবায়ু বিজ্ঞানীদের। বরং সেটা এ বছরের শুরুতে দেখা যাবে এবং এল নিনো তার সর্বোচ্চ শক্তিতে পৌঁছাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আর এটাই অনেক বিজ্ঞানীকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। তারা বুঝতে পারছেন না জলবায়ুতে ঠিক কি ঘটছে।
২০২৩ সাল শুধু উষ্ণতম বছরই ছিল না। বরং গত বছর বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খুবই স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়েছে।
গত বছর পুরো বিশ্বকেই চরম আবহাওয়া মোকাবেলা করতে হয়েছে। প্রায় সব দেশেই তাপদাহ দেখা গেছে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ইতিহাসের ভয়াবহতম দাবানল দেখেছে। খরাও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।
পূর্ব আফ্রিকা জুড়ে হয়েছে ভয়াবহ বন্যা।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ২০১৬ থেকে ২০২৩ এর মহাসচিব অধ্যাপক পেত্তেরি তালাস বলেন, “এটা শুধু পরিসংখ্যানের চেয়েও বেশি কিছু।
“চরম আবহাওয়া প্রতিদিনই জীবন এবং বাস্তুসংস্থান ধ্বংস করছে।”