বেলগোরোদে ‘নাশকতাকারীদের হামলা’, অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া

সীমান্তের বেলগোরোদে এই অনু্প্রবেশকে ১৫ মাস আগে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেইন থেকে মস্কোবিরোধী যোদ্ধাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ বলা হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2023, 11:41 AM
Updated : 23 May 2023, 11:41 AM

সীমান্তবর্তী জেলা বেলগোরোদে ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে’ রুশ বাহিনী শত্রুদের চেপে ধরেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার আঞ্চলিক গভর্নর।

মঙ্গলবার তার এই মন্তব্যের আগেরদিনই সীমান্ত টপকে সশস্ত্র যোদ্ধাদের বিরাট একটি দলের অনুপ্রবেশ ঘটে, যাকে ১৫ মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেইন থেকে সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ বলা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সোমবার রাশিয়া জানিয়েছিল, তারা সীমান্ত টপকে বেলগোরোদে প্রবেশ করা ইউক্রেইনীয় নাশকতাকারীদের সঙ্গে লড়ছে।

এরপর ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের এক উপদেষ্টা টুইটারে বলেন, কিইভের সরকার পুরো পরিস্থিতি দেখছে, কিন্তু ‘এ নিয়ে তাদের কিছুই করার নেই’।

ইউক্রেইনের সামরিক গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে ইউক্রেইনীয় সংবাদমাধ্যম হরোমাদস্কে জানিয়েছে, রুশ নাগরিকদের নিয়ে গঠিত দুটি গোষ্ঠী- লিবার্টি অব রাশিয়া লিজিয়ন ও রাশিয়ান ভলান্টিয়ার কর্পস সোমবার বেলগোরোদে ওই হামলা চালিয়েছে।

রাশিয়ার আঞ্চলিক গভর্নর ভায়াচেস্লাভ গ্লাদকভ মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে বলেছেন, সীমান্তের যে এলাকায় নাশকতাকারীরা ঢুকেছিল সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এখনও চলছে।

“অঞ্চলটি শত্রুমুক্ত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিযান চলছে,” বলেছেন তিনি।

আগের দিন তিনি বলেছিলেন, নাশকতাকারীদের হামলায় ৮ জন আহত হয়েছে, একাধিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় যোগাযোগ ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।

দুটি ভবনে ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে এবং অনেকেই তাদের বাড়িতে ফিরতে পারেননি, বলেছেন এই গভর্নর।

“গ্রাইভরন জেলার বাসিন্দা, যারা স্বল্প সময়ের জন্য বাড়িঘর ছেড়েছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, এখনও ফেরা সম্ভব নয়,” সোমবার আহত একজনকে সরিয়ে নেওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়েছে, আরও দুইজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে জানিয়ে বলেন গ্লাদকভ।

“মঙ্গলবার প্রথম কাজ হচ্ছে, তাদের (আহত) কাছে পৌঁছানো,” বলেছেন তিনি।

সোমবার রাতে রাশিয়া ভলান্টিয়ার কর্পসের দেওয়া একটি ভিডিওতে এক যোদ্ধাকে একটি দখলে নেওয়া সাঁজোয়া যান পরীক্ষা করে দেখতে দেখা গেছে। আরেকটি ভিডিও দিয়ে তারা বলেছে, তাদের যোদ্ধারা গ্রামের একটি রাস্তায় সাঁজোয়া যান চালাচ্ছে।

রাশিয়া ও ইউক্রেইনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চ্যানেলগুলোতে রাশিয়া ভলান্টিয়ার কর্পস ও লিবার্টি অব রাশিয়া লিজিয়নের হাতে ধরা পড়া রুশ সেনা ও তাদের পরিচয়পত্র দেখানো হয়েছে।

রয়টার্স সেখানকার পরিস্থিতি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের বরাত দিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রপরিচালিত বার্তা সংস্থা নভোস্তি জানিয়েছে, বেলগোরোদের ঘটনা সম্বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্টকে অবহিত করা হয়েছে, ‘নাশকতাকারীদের হটিয়ে দিতে’ অভিযান চলছে।

রুশ নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংযোগ থাকা টেলিগ্রাম চ্যানেল বাজা জানিয়েছে, রাশিয়ার একটি মূল সড়ক সংলগ্ন তিনটি এলাকায় দুই পক্ষের লড়াই চলছে।

একাধিক গ্রামের বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে, বলেছে টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘ওপেন বেলগোরোদ’।

টুইটারে লিবার্টি অব রাশিয়া লিখেছে, তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় কোজিনকা পুরোপুরি মুক্ত করেছে, অগ্রবর্তী দল আরও পূর্বে গ্রাইভরন জেলার কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে।

“এগিয়ে চলো। রাশিয়া মুক্ত হবেই,” লিখেছে তারা।

ক্রেমলিন বলছে, বাখমুতের পরাজয় থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই ‘ইউক্রেইনের এই নাশকতাকারী গ্রুপকে’ দিয়ে এই অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

রাশিয়া বলছে, নয় মাস যুদ্ধের পর তারা পুরো বাখমুত দখল করে নিয়েছে, অন্যদিকে ইউক্রেইনের দাবি, বাখমুতে এখনও লড়াই চলছে।

বাখমুত দখলের ফলে এখন দনবাসের আরও এলাকা মুক্ত করা সহজ হবে, ভাষ্য মস্কোর।

অন্যদিকে কিইভ বলছে, বাখমুতে থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ায় যতটুকু ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি লাভ হয়েছে শহরের পাশে রুশ সেনাদের কাছ থেকে অবস্থান ফেরত নিয়।

বিধ্বস্ত শহরটির দখল ধরে রাখতে রাশিয়াকে এখন যুদ্ধক্ষেত্রের অন্যান্য এলাকাকে দুর্বল করে বাখমুতে সেনা পাঠাতে হবে, যা ইউক্রেইনের পাল্টা আক্রমণের জন্য লাভজনক হবে বলেই মত কিইভের কর্মকর্তাদের।

“বাখমুত শহরের লড়াই এখনও চলছে,” মঙ্গলবার বিবৃতিতে বলেছে ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনী।

বাখমুত পরিস্থিতিও স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।