চীনে বিক্ষোভকারীদের খুঁজে বের করছে পুলিশ

রাজধানী বেইজিংয়ে কয়েকজন জানিয়েছেন, পুলিশ ফোন করে তাদের অবস্থান জানতে চেয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2022, 06:02 PM
Updated : 29 Nov 2022, 06:02 PM

চীনে কঠোর কোভিড বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের খুঁজে খুঁজে বের করছে পুলিশ। কর্তৃপক্ষ দমনাভিযান শুরু করার মধ্যে লোকজন বলছে, পুলিশ তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে।

রাজধানী বেইজিংয়ে কয়েকজন জানিয়েছেন, পুলিশ ফোন করে তাদের অবস্থান জানতে চেয়েছে। তবে তাদের পরিচয় পুলিশ কি করে শনাক্ত করছে সেটি পরিষ্কার নয়।

একজন নারী জানিয়েছেন, তিনি এবং তার পাঁচ বন্ধু-বান্ধব বেইজিংয়ের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছলেন। তারা প্রত্যেকেই পুলিশের কাছ থেকে ফোনকল পেয়েছেন।

এক পুলিশ কর্মকর্তা ফোনকলের উত্তর না পেয়ে ওই নারীর এক বন্ধুর বাসাতেও হাজির হয় এবং তারা বিক্ষোভস্থলে গিয়েছিল কিনা তা জিজ্ঞেস করে। ওই গণজমায়েত অবৈধ ছিল বলে পুলিশ দাবি করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আরেকজন বলেন, তাদেরকে পুলিশ স্টেশনে হাজির হতে বলা হয়েছে এবং গত রোববার রাতে কী করেছেন সে সম্পর্কে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।

বেইজিংয়ের একজন বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “আমরা মরিয়া হয়ে আমাদের চ্যাট হিস্ট্রি মুছে দিচ্ছি। পুলিশ আমার এক বন্ধুর পরিচয়পত্র দেখে তাকে ধরে নিয়ে গেছে। কয়েকঘন্টা পর তারা তাকে ছেড়ে দেয়।”

পুলিশ রাস্তায় লোকজনকে থামিয়ে তাদের ফোনও চেক করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। মানুষজনের ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) আছে কিনা কিংবা চীনে বন্ধ থাকা টেলিগ্রাম বা টুইটারের মতো অ্যাপ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার রোধে গত কয়েক মাস ধরে চীন সরকার দেশজুড়ে ‘শূন্য কোভিড নীতি’ বাস্তবায়ন করছে।

দেশটিতে কোনো এলাকায় কোভিড আক্রান্ত শনাক্ত হলে পুরো এলাকাজুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করা হচ্ছে। টানা লকডাউন দুই সপ্তাহ থেকে শুরু করে মাস পেরিয়ে যাচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে চীন সরকার কোভিডে মৃত্যু কমিয়ে আনতে পারলেও সংক্রমণের বিস্তার থামিয়ে রাখতে পারেনি। বরং গত প্রায় ছয়দিন ধরে দেশটিতে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে।

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে কঠোর লকডাউন চলার কারণে জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। যার ফলে সম্প্রতি নানা এলাকায় লোকজনকে সড়কে নেমে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ করতে দেখা যাচ্ছে।

গত রোববার রাতে বাণিজ্য নগরী সাংহাই এবং রাজধানী বেইজিংয়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয় এবং পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

কোথাও কোথাও বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পদত্যাগ দাবি করেন। চীনে যা বেশ বিরল ঘটনা। কারণ, চীনের আইনে প্রেসিডেন্ট ও সরকারের সমালোচনা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বিবিসি জানায়, সোমবারও বিক্ষোভকারীরা বেইজিংয়ে সমাবেশ করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু যেখানে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল পুলিশ ওই এলাকার পুরোটা ঘিরে রাখার কারণে তাদের বিক্ষোভসমাবেশ পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়।

সাংহাইয়েও যেখানে যেখানে বিক্ষোভ হয়েছিল পুলিশ ওই সব পথ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালেও পুলিশকে বেইজিং ও সাংহাইয়ের ওইসব এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ম্যাসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীরা পুনরায় জড়ো হওয়ার কথা বলেছিল।

দক্ষিণের নগরী হাংঝউতে সোমবার রাতে বিক্ষোভকারীদের ছোট একটি দল জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে গ্রেপ্তার শুরু করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

গত রোববার বিক্ষোভের সময় কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিককেও পুলিশ আটক করেছিল। তাদের মধ্যে বিবিসি ও রয়টার্সর প্রতিনিধিরা ছিলেন। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।