ইউক্রেইনে রাশিয়া হারলে পরমাণু যুদ্ধ: নেটোকে হুঁশিয়ারি মেদভেদেভের

নববর্ষের প্রাক্কালে দেওয়া ভাষণে ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেইন যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোকে রাশিয়ার ‘আসল শত্রু’ অ্যাখ্যা দিয়ে মস্কো যে একবিন্দুও ছাড় দেবে না তার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2023, 12:14 PM
Updated : 19 Jan 2023, 12:14 PM

রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট, ক্রেমলিনপ্রধান ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র দিমিত্রি মেদভেদেভ মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ইউক্রেইনে রাশিয়ার হার পারমাণবিক যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারে।

“প্রচলিত যুদ্ধে পারমাণবিক শক্তিধর কারো হার পরমাণু যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারে,” টেলিগ্রামে রাশিয়ার প্রভাবশালী নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

“পারমাণবিক শক্তিধররা কখনোই তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, এমন বড় কোনো যুদ্ধে হারেনি,” বলেছেন ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা মেদভেদেভ।

নেটো এবং আরও কিছু দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা শুক্রবার জার্মানির রামস্টেইন বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেইনে রাশিয়াকে হারানোর কৌশল ও কিইভকে সহায়তার বিষয় নিয়ে যে নীতি ঠিক করবেন, তার ঝুঁকির বিষয়টিও তাদের মাথায় রাখা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন রুশ এ রাজনীতিক।

রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র দুটোই পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশ। এ দুই দেশের কাছেই বিশ্বের পারমাণবিক ওয়ারহেডের ৯০ শতাংশ আছে। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হবে কি হবে না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেশদুটির দুই রাষ্ট্রপ্রধানের।

যুদ্ধাস্ত্র ও সেনার সংখ্যায় নেটো রাশিয়ার চেয়ে এগিয়ে থাকলেও সমগ্র ইউরোপের তুলনায় রাশিয়ার একার কাছেই অনেক অনেক বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। যে কারণে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা তাদের হুমকিকে সহজে উড়িয়েও দিতে পারেন না। 

ইউক্রেইনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানকে’ আগ্রাসী ও বেপরোয়া পশ্চিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবেই দেখছেন পুতিন।

যে কোনো আগ্রাসী শক্তির বিপক্ষে নিজেকে ও জনগণকে রক্ষায় রাশিয়া সম্ভাব্য সব উপায়কে কাজে লাগাবে বলে বারবার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ সেনা ইউক্রেইনে প্রবেশ করার পর ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংঘাতের সূচনা হয়; ১৯৬২ সালের ‘কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের’ পর মস্কো ও পশ্চিমা দেশগুলো আর কখনোই এত বৃহৎ পরিসরে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী অবস্থানও নেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযানকে সাম্রাজ্যবাদী কায়দায় জমি দখল হিসেবে দেখছে। কিইভ বলছে, শেষ রুশ সেনা ইউক্রেইন ছাড়ার আগ পর্যন্ত তারা লড়বে।

তার মধ্যেও ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে দেওয়া ভাষণে পুতিন ইউক্রেইন যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোকে রাশিয়ার ‘আসল শত্রু’ অ্যাখ্যা দিয়ে মস্কো যে একবিন্দুও ছাড় দেবে না তার ইঙ্গিত দেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট এরই মধ্যে আটলান্টিক সাগরে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছেন; পাশাপাশি তার শীর্ষ জেনারেলকে ইউক্রেইনে যুদ্ধ চালানোর ভারও দিয়েছেন।

বুধবার তিনি বলেছেন, যেসব কারণে রাশিয়া ইউক্রেইনে জয়ী হবে, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এর শক্তিশালী সামরিক-শিল্প কারখানায় উৎপাদনের গতি বেড়েছে। 

রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতি হচ্ছে, প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে রুশ ফেডারেশনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানো হলে, রাশিয়ার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে তারা শত্রুর বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ছুড়তে পারবে।

পুতিন শেষ পর্যন্ত সে পথে হাঁটলে যুক্তরাষ্ট্র কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা বলেনি ওয়াশিংটন। যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার প্রথম করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৪৫ সালে তারা জাপানি দুই শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আনবিক বোমার তাণ্ডব দেখায়।

৫৭ বছর বয়সী মেদভেদেভকে একসময় পশ্চিমা গণমাধ্যম সংস্কারপন্থি হিসেবে দেখাত; রুশ এ রাজনীতিক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে কাজ করতে এবং রাশিয়ার উদারীকরণে আগ্রহী বলেও বারবার বলেছিল তারা।

অবশ্য এখন তাকে পুতিনের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যুদ্ধবাজ হিসেবেই দেখা যাচ্ছে।

রাশিয়া ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর পর থেকে তিনি একাধিকবার পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি এবং পশ্চিমা সামরিক জোটকে যাচ্ছেতাই গালাগাল দিয়েছেন।

ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার হাতে ৫ হাজার ৯৭৭টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের আছে ৫ হাজার ৪২৮টি। এর বাইরে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সাড়ে তিনশ, ফ্রান্সের ২৯০, যুক্তরাজ্যের ২২৫টি।