দমনপীড়ন অসহনীয় হয়ে উঠেছে: ইমরান খান

“আপনারা মনে করতে পারেন এটা আমার জন্য বড় সংকট। আমি মনে করছি না,” সাক্ষাৎকারে বলেন পিটিআই চেয়ারম্যান।

নিউজ ডেস্ক
Published : 30 May 2023, 06:58 AM
Updated : 30 May 2023, 06:58 AM

পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তুমুল চাপের কয়েকটি সপ্তাহ পার করলেন; এই সময়ের মধ্যেই তার কয়েক হাজার কর্মী জেলে গেছেন, দলও ছেড়েছেন কয়েক ডজন নেতা।

দেশের মধ্যে বিপুল জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও সামরিক স্থাপনায় হামলাকে ঘিরে তার দল নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে, নিজেও সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন- এমন সব আশঙ্কা মনে থাকলেও তেহরিক ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান কিন্তু এখনও অবিচল।

“আপনারা মনে করতে পারেন এটা আমার জন্য বড় সংকট। আমি মনে করছি না,” বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটাই বলেছেন।

লাহোরের জামান পার্কের বাড়ির উঠানে সহজে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এমন একটি কক্ষকে ইমরান এখন মিডিয়া রুম হিসেবে ব্যবহার করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি সরাসরি যত ভাষণ দেন, তার প্রায় সবই এখান থেকে হয়। বিবিসিকে সাক্ষাৎকারও তিনি একই স্থানেই দিয়েছেন।

তার চোখেমুখে দৃঢ়তার ছাপ ছিল; নির্বাচন হলে তাতে যে তিনি বিজয়ী হবেন, সেই আত্মবিশ্বাস দেখানোর চেষ্টায় কার্পণ্য করেননি পিটিআই চেয়ারম্যান।

কিন্তু দলের নেতাকর্মীরা তাতে আস্থা রাখছেন বলে মনে হচ্ছে না। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ইমরান পিটিআইয়ের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাওয়াদ চৌধুরী এবং একসময় তার মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাজারিসহ দুই ডজনের বেশি সহকর্মী হারিয়েছেন।

“প্রথমত, যারা চলে গেছে, তাদের জায়গাগুলো ভরাট করতে হবে। তরুণরা আসবে। হয়তো তারাও গ্রেপ্তার হবে,” বলেন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান।

এভাবে কোনো দল চলতে পারে- বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন,“আপনি এই ধরনের সন্ত্রাসী কৌশল অল্প সময়ে জন্যই ব্যবহার করতে পারেন। তবে পুরো পরিস্থিতিই অসহনীয় হয়ে উঠেছে।”

সরকারের এই দমনপীড়ন কমে আসবে, এমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

পরিস্থিতি যে জটিল, তা ইমরানের সমর্থকরাও স্বীকার করছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, এমন সংকটময় মুহূর্তেই ইমরানের সেরাটা বেরিয়ে আসে, লড়াই তিনি উপভোগ করেন।

তবে এখন তাকে আগের তুলনায় খানিকটা জনবিচ্ছিন্নই মনে হচ্ছে। আগে তার বাড়ির সামনে ভক্ত-সমর্থকদের বিপুল ভিড় থাকত। এখন ফটকের ভেতর থাকাদের বেশিরভাগই দলীয় আইনজীবী।

ইমরানের কণ্ঠেও আগের তেজ নেই। অনেকেরই ধারণা, সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঝামেলা পাকানোর কারণেই তাকে ক্ষমতা হারাতে হয়েছে, আর এখন ইমরান সেই সেনাবাহিনীর সঙ্গেই কথা বলতে আগ্রহী।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর কোনো ভূমিকাই থাকবে না, এমনটা বোকার স্বর্গেই ভাবা সম্ভব, বলেছেন তিনি।

“তারা কী ভাবছে, তা জানতে আগ্রহী আমি। তারা মানে, ক্ষমতা কাঠামোতে যারা আছে, তারা। এই ক্ষমতার দৌড় থেকে আমাকে হটিয়ে দিলে পাকিস্তানের কী লাভ হবে?”

সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করা কিছুদিন আগেও খুব একটা সহজ ছিল না ইমরানের জন্য, কিন্তু এখন তার রাজনৈতিক অবস্থান তো আরও দুর্বল; এই অবস্থায় সেনাবাহিনী কেনইবা তার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হবে? পিটিআই চেয়ারম্যানের ঝোলায় কী এমন আছে, যা সেনাবাহিনীকে আকৃষ্ট করবে?

ইমরান এসব নিয়ে কিছু বলতে আগ্রহী হননি। বলেছেন, তিনি কেবল আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন, অন্য কিছু নয়। 

গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ‍দুর্নীতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রদ্রোহীতা পর্যন্ত ডজনের বেশি অভিযোগ আনা হয়েছে। যে কারণে মে-র দ্বিতীয় সপ্তাহে তাকে গ্রেপ্তার করাটা খুব একটা অপ্রত্যাশিতও ছিল না।

তার আগে প্রাদেশিক ও জাতীয় নির্বাচন কখন হবে, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। সেই আলোচনা ভেঙে গেল, এরপর ইমরানকে গ্রেপ্তার পরিস্থিতি নাজুক করে তুলল।

এখন তার দলের নেতাদের যেভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তার সঙ্গে তার শাসনামলে বিরোধীদের কারাগারে পাঠানোর মিল নেই বলেও দাবি করেন গত বছর আস্থা ভোটে ক্ষমতা হারানো ইমরান। 

“বিরোধীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা ছিল, তার ৯৫ শতাংশই করা হয়েছিল, আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই। আমরা কেবল মামলাগুলো চালিয়ে নিয়েছি,” বলেন তিনি।  

দৃশ্যত, ইমরান বেশ চাপেই আছেন। এখান থেকে বের হতে কোনো বিরাট পরিকল্পনা আছে কী, নাকি তা জানাতে চান না- পিটিআই চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চায় বিবিসি।

“আমি কেবল পুরো পরিস্থিতি দেখছি, অপেক্ষা করছি। হতে পারে, তারা আমাকে জেলে পাঠাবে। তাদের ধারণা হচ্ছে, আমি হয়তো হাল ছেড়ে দেবো, বা আমি পুরো ব্যাপারটা মেনে নেবো এবং চুপ থাকবো। তেমন কিছু হবে না,” এর বেশি কিছু আর বলতে চাননি ইমরান।