বাইডেন বলছেন, এখনও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান সম্ভব।
Published : 21 Jan 2024, 01:11 PM
আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতেই থাকা উচিত।
এবং এই শর্ত ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ‘বিপরীত’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রায় ফিকে হতে বসা ‘টু-স্টেট সল্যুশন’ বা ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’ নীতি পুনরায় বিশ্বমোড়লদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে হাজির হয়েছে।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের লড়াই-সংঘাতের একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য এই ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’ নীতি নিয়ে এক সময় জোর আলোচনা চলেছিল। যেখানে ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কথা বলা হয়, যে রাষ্ট্র হবে ফিলিস্তিনিদের এবং ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা নিজ নিজ দেশে সমান মর্যাদা নিয়ে শান্তিতে বসবাস করবে।
এখন এই নীতিতে হেঁটে গাজা যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা। এ বিষয়ে তারা ইসরায়েলকে চাপও দিচ্ছেন বলে নানা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ পেয়েছে।
কিন্তু শনিবার নেতানিয়াহু যেসব মন্তব্য করেছেন তাতে স্পষ্টই বোঝা যায়, তিনি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিষয়ে সব ধরণের চাপই অগ্রাহ্য করছেন।
বিবিসি জানায়, ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে গত শুক্রবার টেলিফোনে আলাপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং নেতানিয়াহু।
প্রায় এক মাস পর এই দুই নেতার এটি প্রথম আলাপ। তাদের আলাপের পর শুক্রবার বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান এখনও সম্ভব।
বলেন, “বিভিন্নভাবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান হতে পারে। জাতিসংঘে এমন বেশ কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে যাদের নিজস্ব সেনাবাহিনী নেই।”
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য সবসময়ই বলেছে, তারা ইসরায়েলের পাশপাশি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে বিশ্বাস করে।
তবে হোয়াইট হাউজ থেকে এ সপ্তাহে এটাও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ‘স্পষ্টভাবেই ভিন্ন’।
সেই ভিন্নতা যে কতখানি তা শনিবার আবারও স্পষ্ট করে দেখালেন নেতানিয়াহু।
বাইডেনের বক্তব্যের পরের দিন শনিবার নেতানিয়াহু পুনরায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করেন। নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি যে অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং শনিবার সে কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার নীতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সেটা হলো, হামাসকে নির্মূল করার পর ইসরায়েল অবশ্যই গাজার নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখবে যাতে এটা নিশ্চিত করা যায় যে, গাজা আর কখনোই ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না। এটা এমন একটি প্রয়োজনীয়তা যা ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের দাবির সাথে সাংঘর্ষিক।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ নেতানিয়াহু শনিবার আরো লেখেন, “ইসরায়েল অবশ্যই জর্ডানের পশ্চিমের পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখবে।”
নেতানিয়াহু এখানে যে অঞ্চলের কথা বলেছেন তার মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরও অন্তর্ভুক্ত।
নেতানিয়াহুর এসব মন্তব্য ওইসব ব্যক্তিদের আশাকে ভেস্তে দিয়েছে যারা ভাবছেন, গাজা যুদ্ধের ফলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি নেতারা পুনরায় কূটনীতিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু করবেন এবং ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে প্রক্রিয়া সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে সেটা আবার উজ্জীবিত হবে।
গাজা বিষয়ে নিজের অবস্থানের কারণে নেতানিয়াহু শুধু আন্তর্জাতিক অঙ্গনেই একা হয়ে পড়ছেন না। বরং দেশেও তার জনপ্রিয়তা কমছে। হামাসের হাতে এখনো প্রায় ১৩০ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে। তাদের ভাগ্য নিয়ে নেতানিয়াহুর জুয়ার বাজির বিরদ্ধে ইসরায়েলে বিক্ষোভ হচ্ছে।
তারা হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়ে ওই জিম্মিদের মুক্ত করে নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছে।
গাজায় সাড়ে তিনমাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের হামলায় ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন
জিম্মি মুক্তি: নতুন চুক্তির ইঙ্গিত দিলেন নেতানিয়াহু
জিম্মি মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনো কোনো চুক্তি হয়নি: নেতানিয়াহু