বিদ্যুৎ বাঁচান অথবা দেশ ছাড়ুন: ইউক্রেইনের বিদ্যুৎ কোম্পানি

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেইনের প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে দেশটিতে তীব্র বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2022, 01:38 PM
Updated : 19 Nov 2022, 01:38 PM

দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস করতে বাসিন্দাদের দেশ ছাড়ার কথা বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন ইউক্রেইনের ব্যক্তিমালিকানাধীন সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি ডিটিইকের প্রধান।

কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী ম্যাক্সিম তিমশেঙ্কো বিবিসিকে বলেন, ‘‘যদি তারা আগামী তিন থেকে চার মাস ইউক্রেইনের বাইরে অন্য কোথায় থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন তবে সেটা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য খুবই সহায়ক হবে।”

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেইনের প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে দেশটিতে তীব্র বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে।

লাখ লাখ মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। শীত মৌসুম শুরু হওয়ায় সামনে পরিস্থিতি যে আরো ভয়াবহ রূপ নেমে সে কথা বলাই বাহুল্য।

ইউক্রেইনের বেশিরভাগ অঞ্চলেই এখন কখনো বলে কয়ে বা কখনো কোনো নোটিস ছাড়াই লোডশেডিং হচ্ছে।

সম্প্রতি ইউক্রেইনের কয়েকটি অঞ্চলে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে দখলদার রুশ বাহিনী। যেটিকে বিশ্ব ইউক্রেইন যুদ্ধে তাদের পরাজয় বলে বিবেচনা করছে। যা রাশিয়ার জন্য চরম অপমানের।

এর প্রতিশোধ নিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়া ইউক্রেইনের গুরুতপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। ইউক্রেইনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

রাশিয়াও স্বীকার করেছে, প্রতিশোধ নিতেই তারা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে।

এ সপ্তাহের শুরুতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে মধ্যস্থতার প্রস্তাব ইউক্রেইন ফিরিয়ে দেয়ার ‘পরিণতি’ ওইসব হামলা।

পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, এভাবে বেসামরিক স্থাপনা হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা যুদ্ধাপরাধের সামিল।

বিবিসি জানায়, তিমশেঙ্কোর কোম্পানি ইউক্রেইনের একচতুর্থাংশের বেশি বিদ্যুতের যোগান দেয়।

তিনি বলেন, রাশিয়ার প্রতিটি হামলার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা আরো নাজুক হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়াই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু রাখার প্রধান উপায়।

ইউক্রেইন সরকারের পক্ষ থেকেও বাসিন্দাদের ওভেন বা ওয়াশিংমেশিনের মত গৃহস্থালি যন্ত্রপাতির ব্যবহার সীমিত করার অনুরোধ করা হয়েছে।

তিমশেঙ্কো বলেন, তারপরও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এখনো বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম নয়।

তাই বিদ্যুতের চাহিদা কমানোর যেকোনো উপায়...এমনকি সেটার জন্য যদি দেশ ছাড়তে হয় তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেইনের যুদ্ধ জয়ে ভূমিকা রাখার অংশ হিসেবে জনগণের সেটা করা উচিত।

বলেন, ‘‘যদি আপনি কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তবে হাসপাতালগুলোতে আহত সেনাদের চিকিৎসায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত থাকা নিশ্চিত হবে। বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় যে, সাশ্রয়ী হয়ে বা দেশত্যাগ করে তারা অন্যদের সহায়তা করতে পারে।”

ইউক্রেইনের অনেক অঞ্চলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে।

চরম উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশটির লাখ লাখ মানুষকে এবার বিদ্যুৎবিহীন এবং ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা ছাড়াই শীতকাল কাটাতে হবে।

এখন কয়েক ঘণ্টার জন্য লোডশেডিং হচ্ছে। রাশিয়া যদি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ না করে তবে লোডশেডিংয়ের সময় আরো বাড়বে।

ইউক্রেইনের যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো মেরামত করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

তিমশেঙ্কো বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের হাতে মেরামত করার মত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ নেই। যে কারণে আমরা আমাদের অংশীদার, সরকারি কর্মকর্তা, কোম্পানি ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারীদের কাছে দ্রুত আমাদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সাহায্য করার আবেদন করেছি।”

ঐতিহ্যগতভাবে ইউক্রেইন ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় নিয়ে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক বজায় ছিল। যেটি এখন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে তিমশেঙ্কো বলেন, ‘‘আগে তারা সহকর্মী ছিল। এখন তারাই শত্রুতে পরিণত হয়েছে।

‘‘তারা আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা (পাওয়ার গ্রিড ও পাওয়ার স্টেশন) সম্পর্কে সবকিছু জানে এবং এখন তারা সেইসব তথ্য রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে দিচ্ছে। তাদের শেখাচ্ছে কিভাবে কী করলে লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত হামলার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করা যাবে।”

এত এত অসুবিধার মধ্যেই শীত মৌসুমে জনগণকে বাঁচাতে ইউক্রেইনের বিদ্যুৎ প্রকৌশলীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।