মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা স্বীকার করলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট

ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৬৫ সাল থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে ঘটা ১২ টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট উইদোদো এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

রয়টার্স
Published : 12 Jan 2023, 11:52 AM
Updated : 12 Jan 2023, 11:52 AM

ইন্দোনেশিয়ায় অতীতে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে’ বলে স্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। ভবিষ্যতে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি রোধের অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।

বুধবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে উইদোদো বলেছেন, “রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে আমি পরিস্কার মনে এবং আন্তরিকভাবে স্বীকার করছি যে, অতীতের অনেক ঘটনায় ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এর জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত।”

১৯৬৫ সাল থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে ঘটা ১২ টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ‘দুঃখজনক’ ঘটনার উল্লেখ করে তিনি এ দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এর মধ্যে ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলার সময় গণতান্ত্রিক কর্মীদের অপহরণের বিষয়টি রয়েছে।

এছাড়া, স্নায়ুযুদ্ধের টান টান উত্তেজনার সময়ে কমিউনিস্ট-বিরোধী হত্যাকাণ্ডে বহু মানুষের মৃ্ত্যুর ঘটনাও আছে। ১৯৬০-এর দশক থেকে ২০০৩ সাল সময়ের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ৫ লাখ মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়ায় সামরিক বাহিনী, কমিউনিস্ট পার্টি ও ইসলামিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চরমে উঠেছিল। এমন পরিস্থিতিতে এক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে ৬ জেনারেলকে হত্যার অভিযোগ নিয়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

জেনারেল সুহার্তো তখন কমিউনিস্টবিরোধী অভিযান শুরু করলে হাজারো সন্দেহভাজন বামপন্থি নিহত হন। এছাড়াও, বিনা বিচারে আটক ও কারারুদ্ধ হয়েছিলেন আরও অনেকে।

ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসে এইসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার জন্য এর আগে ২০০০ সালে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছিলেন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান ওয়াহিদ। এরপর উইদোদো দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট, যিনি ১৯৬০ এর দশকের রক্তপাতের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করলেন।

বিবিসি জানায়, বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট উইদোদো পাপুয়া অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। বলেছেন, “পাপুয়া নিউগিনির পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে- একইসঙ্গে সুমাত্রা দ্বীপের উত্তরে আচেহ প্রদেশেও বিদ্রোহ চলছে। এসব অঞ্চলেও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।”

উইদোদো আরও বলেছেন, সরকার ভুক্তভোগীদের অধিকার পুনরুদ্ধার করার পথ খুঁজছে। বিচারিক প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান না করে সুষ্ঠুভাবে এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে এটি করা হবে।

তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনও ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে আমি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব।” তবে কীভাবে তা করা হবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনকিছু বলেননি তিনি।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছে, জোকো উইদোদোর স্বীকারোক্তিতে সরকারের দায়দায়িত্বের বিষয়টি সামনে আসেনি। কোনও জবাবদিহিতা ছাড়া প্রেসিডেন্টের এই স্বীকারোক্তির কোনও মানে হয়না।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর ইন্দোনেশিয়ার নির্বাহী পরিচালক উসমান হামিদ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ওইসব অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।