গত কয়েক বছরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদ যেন মিউজিক্যাল চেয়ারে পরিণত হয়েছে। ২০১৬ সালের পর এখন পর্যন্ত তিনজন প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ শেষ না করেই সরে গেছেন বা সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
Published : 17 Oct 2022, 07:25 PM
যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতারা এ সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে উৎখাত করার চেষ্টা করবেন, এমনটিই দাবি করেছে দেশটির পত্রিকা ‘দ্য ডেইলি মেইল’।
যদিও ডাউনিং স্ট্রিট থেকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, সেরকম কিছু হলে তা হয়ত আগাম জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ডাক দেওয়ার কারণ হবে।
যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি টালমাটাল বাজার পরিস্থিতিতে তীব্র সমালোচনার চাপে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী ট্রাস। দায়িত্ব গ্রহণের দেড় মাসের মাথায় তার কর্তৃত্ব এখন ভেঙে পড়ার মুখে।
অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে ‘ডেইল মেইল’ এর খবরে বলা হয়, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির একশ’র বেশি পার্লামেন্ট সদস্য গ্রাহাম ব্র্যাডির কাছে প্রধানমন্ত্রী ট্রাসের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে চিঠি দিতে প্রস্তুত আছেন।
গ্রাহাম ব্রাডি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ পার্টি কমিটির প্রধান। এই কমিটিই দলের নেতা নির্বাচনের আয়োজন করে থাকে।
গত কয়েক বছরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদ যেন মিউজিক্যাল চেয়ারে পরিণত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিচ্ছেদ প্রশ্নে ২০১৬ সালে আয়োজিত গণভোটের পর এখন পর্যন্ত তিনজন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বের মেয়াদ শেষ না করেই সরে গেছেন বা সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
ডেইলি মেইলের খবরে আরও দাবি করা হয়, এমপি’রা ব্রাডির কাছে ট্রাসকে ‘তার সময় শেষ হয়ে গেছে’ এ কথা বলতে অথবা দলীয় নিয়মে পরিবর্তন আনতে অনুরোধ করেছেন। যেন এখনই ট্রাসের নেতৃত্বে উপর আস্থা ভোটের আয়োজন করা সম্ভব হয়।
কিন্তু ব্রাডি এখনই এ ধরনের কিছু করতে চাইছেন না। বরং তিনি তাদের প্রতিহত করে বলেছেন, ট্রাস এবং তার সদ্য নিয়োগ দেওয়া চ্যান্সেলর জেরেমি হান্টকে অন্তত আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া উচিত, এটা তাদের প্রাপ্য। যাতে তারা দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের কোনো কৌশল খুঁজে বের করার সুযোগ পান।
‘দ্য টাইমস’ পত্রিকায়ও এ ধরনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা ট্রাসের জায়গায় নতুন নেতা আনার বিষয়ে গোপন আলোচনা করেছেন।
চাপের মুখে কর ছাড় পরিকল্পনা থেকে সরলেন লিজ ট্রাস
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ‘ট্রাসের পতন হতে পারে বড়দিনের আগেই’
যুক্তরাজ্যে অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করলেন লিজ ট্রাস
ট্রাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যে কারণে:
আয়করের সর্বোচ্চ হার কমানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত মাসে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন ট্রাস। এখন তাকে অপমানজনকভাবে সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সম্পর্ণরূপে সরে আসতে হয়েছে। নিজ দলের মধ্যে বিদ্রোহ ও অর্থ বাজারে সৃষ্ট টালমাটাল পরিস্থিতির মুখে এ মাসের শুরুতে নিজ পরিকল্পনা থেকে সরে যান তিনি।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রাস ও তার সাবেক অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়াটেং একটি নতুন ‘উন্নয়ন পরিকল্পনা’ ঘোষণা করেছিলেন। তাতে ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ কর ছাড়ের পাশাপাশি জাতীয় বিমা পরিকল্পনা ও স্ট্যাম্প শুল্কেও ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ব্যাপক সরকারি ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা এই পরিকল্পনা স্থবির অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু পরিকল্পনাটি সরকারের ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করে, পাউন্ডের মান এবং সরকারি বন্ডের মূল্য কমিয়ে দেয়। এটি বিশ্ব বাজারকে এমন মাত্রায় ধাক্কা দেয় যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বাজারকে চাঙ্গা করার জন্য ৬৫ বিলিয়ন পাউন্ডের (৭৩ বিলিয়ন ডলার) একটি কর্মসূচি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।
বাড়তে থাকা রাজনৈতিক চাপ এবং বাজার নিয়ে বেসামাল পরিস্থিতির মধ্যে ট্রাস অর্থমন্ত্রী পদ থেকে কোয়াটেংকে বরখাস্ত করেন। তার জায়গায় দায়িত্ব নিয়েছেন জেরেমি হান্ট। যিনি একসময় যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
দলীয় নেতৃত্ব নিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির ভেতর যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে তা দলটির জনপ্রিয়তায়ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি এক জনমত জরিপে বিরোধী লেবার পার্টির পেছনে পড়ে যায় ক্ষমতাসীন দলটি।