বাড়তে থাকা রাজনৈতিক চাপ এবং বাজার নিয়ে বেসামাল পরিস্থিতির মধ্যে তিনি বরখাস্ত হলেন।
Published : 14 Oct 2022, 06:11 PM
যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে কোয়াসি কোয়াটেংকে বরখাস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। বাড়তে থাকা রাজনৈতিক চাপ এবং বাজার নিয়ে বেসামাল পরিস্থিতির মধ্যে তিনি বরখাস্ত হলেন।
চ্যান্সেলরের দায়িত্ব নেওয়ার পর ছয় সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে শুক্রবার তিনি চাকরি খোয়ালেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে কম সময় অর্থমন্ত্রীর পদে থাকা দ্বিতীয় ব্যক্তি কোয়াটেং।
তার আগে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে স্বল্পকালীন অর্থমন্ত্রী ছিলেন আয়ান ম্যাকলিওড। ১৯৭০ সালে তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৩০ দিনের মাথায় মারা যান।
আর কোয়াটেং বরখাস্ত হলেন দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৩৮ দিন পর। তার জায়গায় এখন চ্যান্সেলর পদে আসতে পারেন জেরেমি হান্ট, যিনি একসময় যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। সরকারের ভেতর মহল থেকে কয়েকজন এমন আভাসই দিয়েছেন।
লিজ ট্রাস এবং কোয়াসি কোয়াটেং মিলে যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দাঁড় করিয়েছিলেন তাতে যুক্তরাজ্যে বাজারের ওপর চাপ পড়ার পাশাপাশি পাউন্ডের অবমূল্যায়ন ঘটেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো থেকে সতর্কবার্তাও এসেছে।
কোয়াটেং গত ২৩ সেপ্টেম্বরে তার অর্থ পরিকল্পনা নিয়ে যে মিনি-বাজেট পেশ করেন তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তিনি সরকারের ট্যাক্সের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ছাড় দিতে ঋণ গ্রহণ বাড়ানোর পরিকল্পনা জানিয়েছিলেন, তাতেই মূলত চাপে পড়ে ব্রিটেনের বাজার। পাউন্ডের অবমূল্যায় হয় দ্রুত। বাড়ে রাজনৈতিক চাপ।
শেষ পর্যন্ত সেই মিনি-বাজেটের জেরেই চাকরি খোয়াতে হল কোয়াটেংকে। তার মতো একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সমর্থককে বরখাস্ত করার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হল লিজ ট্রাসকে।
শুক্রবার বরখাস্ত হওয়ার পর কোয়াটেং প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা তার পদত্যাগপত্র টুইটারে পোস্ট করেছেন। তাতে তিনি লেখেন, “আপনার চ্যান্সেলর হিসাবে আপনি আমাকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন। আমি তা মেনে নিয়েছি।”
চিঠিতে বিতর্কিত মিনি-বাজেট পরিকল্পনার সাফাইও গেয়েছেন কোয়াটেং। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ট্রাস নিজ দলের ভেতর থেকেই সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আরেকবার ভেবে দেখার জোর দাবির মুখে পড়েছেন।
তিনি এখন মিনি-বাজেটের প্রধান কিছু পরিকল্পনা থেকে সরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একটি সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ সংক্রান্ত ঘোষণা দিতে পারেন বলে জল্পনা বাড়ছে।
যেসব পদক্ষেপের ব্যাপারে লিজ ট্রাস ইউ-টার্ন নিতে পারেন তার মধ্যে করপোরেশন কর ছাড়ের বিষয়টি থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
কোয়াটেং আগামী এপ্রিলে করপোরেশন কর ১৯ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাস করপোরেশন কর এই বসন্তেই ২৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সিএনএন লিখেছে, ব্রিটিশ সরকারের কর-ছাড়ের মিনি-বাজেট পরিকল্পনা যতটা না কোয়াটেংয়ের ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল লিজ ট্রাসের। এই পরিকল্পনা নিয়েই ট্রাস কনজারভেটিভ দলের নেতৃত্বের লড়াইয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন।
কোয়াসি কোয়াটেংও তার পদত্যাগপত্রে বেশ জোর দিয়েই বলেছেন, সরকারের অর্থনৈতিক নীতি ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের পরিচালনা সাপেক্ষেই নেওয়া হয়েছে।
সেই মিনি-বাজেট পরিকল্পনা নিমেষেই অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনার পর এখন প্রধানমন্ত্রী ট্রাস তার গদি বাঁচাতে ছুঁড়ে ফেললেন অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়াটেংকে।
কিন্তু ট্রাস প্রধানমন্ত্রীত্ব আদৌ বাঁচাতে পারবেন কিনা সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। কোয়াটেংয়ের পরিকল্পনা ট্রাস কতটা বদলানোর চেষ্টা নেবেন আর কোয়াটেংকে সরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ তার প্রধানমন্ত্রীত্ব বাঁচাতে যথেষ্ট হবে কিনা সেটি এখনও দেখার বিষয়।