নির্বাচনে হারায় কয়েক দশকের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে কট্টর ডানপন্থি সরকারকে বিদায় নিতে হচ্ছে, ফিরে আসছে বামপন্থি সরকার।
Published : 31 Oct 2022, 08:38 AM
রানঅফ নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জাইর বোলসোনারোকে হারিয়ে ফের ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন লুইস ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো পরাজিত হওয়ায় কয়েক দশকের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে কট্টর ডানপন্থি সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে, ফিরে আসছে বামপন্থি লুলার নেতৃত্বাধীন সরকার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ব্রাজিলের সুপ্রিম ইলেক্টোরাল কোর্ট লুলাকে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে।
রোববারের নির্বাচনে পড়া মোট ভোটের ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ পেয়েছেন লুলা, প্রতিদ্বন্দ্বী বোলসোনারো পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ।
১ জানুয়ারি ব্রাজিলের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ৭৭ বছর বয়সী লুলা।
একটি অভিনব রক্ষণশীল রাজনৈতিক জোট গঠন করে বোলসোনারো ব্রাজিলের কংগ্রেসের পেছনের সারি থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিলেন, কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর মৃত্যুর মিছিলে ব্রাজিল একেবারে প্রথমদিকে থাকায় তিনি জনপ্রিয়তা হারান। এ নির্বাচনের ফলাফলকে বোলসোনারোর কট্টর ডানপন্থি পপুলিজমের জন্য একটি তিরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
রোববার রাতে দেওয়া এক বক্তব্যে লুলা বলেছেন, বিভক্ত দেশকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করবেন এবং ব্রাজিলিয়ানরা ‘অস্ত্র নামিয়ে রাখবে যা আর কখনোই তুলে নেওয়া হবে না’ এটি নিশ্চিত করবেন তিনি। পাশাপাশি আমাজন বন সংরক্ষণের জন্য ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইবেন এবং বিশ্ব বাণিজ্যকে ন্যায্য করে’ তুলবেন।
নিজের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে লুলা বলেন, “আমি ২১ কোটি ৫০ লাখ ব্রাজিলিয়ানের শাসক হবো, যারা আমাকে ভোট দিয়েছে শুধু তাদের নয়। কোনো দুই ব্রাজিল নেই। আমরা এক দেশ, এক জনগণ, এক মহান জাতি।”
স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টার একটু পর লুলা সাউ পাউলোর একটি সমাবেশে হাজির হয়ে গাড়ির সানরুফ থেকে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। পাউলিস্তা অ্যাভিনিউতে তার অপেক্ষায় থাকা উৎফুল্ল সমর্থকরা শ্লোগান দিয়ে শ্যাম্পেন ছিটিয়ে উল্লাস করে। নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্দো আলকেমিন ও প্রচারণা শিবিরের অন্যান্য সহযোগিরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
কোনো প্রমাণ ছাড়াই ব্রাজিলের ভোটিং পদ্ধতি জালিয়াতি প্রবণ বলে কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ করে আসছিলেন বোলসোনারো (৬৭), কিন্তু ভোটের ফল ঘোষণার পর তিনি নিশ্চুপ ছিলেন। নির্বাচনে হারলে ভোটের ফলাফল মেনে নেবেন না বলে গত বছর প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন তিনি।
বিভিন্ন সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, তিনি নির্বাচনের ফলের সঙ্গে দ্বিমত করতে পারেন এমন ভাবনা থেকে তা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ আর তার সমর্থকরা প্রতিবাদে নামতে পারে আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ লুলাকে জয়ী ঘোষণার দুই ঘণ্টা পরও বোলসোনারো ও তার প্রচারণা শিবির ফলাফল নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি।
একটি ‘অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে’ জয়ী হওয়ায় লুলাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের নেতারাও লুলাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রয়টার্স লিখেছে, কলম্বিয়া ও চিলির নির্বাচনে বামপন্থিরা ঐতিহাসিক জয় পাওয়ার পর লুলার জয়ের মধ্য দিয়ে লাতিন আমেরিকায় একটি নতুন ‘গোলাপি জোয়ার’ আরও দৃঢ় হল। এর আগে ২০০৩ থেকে ২০১০ পর্যন্ত দুই মেয়াদে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন লুলা এবং ওই সময় লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের অনেক দেশে নির্বাচনের জিতে বামপন্থিরা ক্ষমতায় এসেছিল।