রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক বন্ধুকে সুইস ব্যাংকে মোটা অংকের অর্থ জমা করার সুযোগ করে দেওয়ায় চার ব্যাংকারকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
পুতিনের ওই বন্ধুর নাম সার্গেই রাউডাগিন। যিনি ‘পুতিনস ওয়ালেট’ নামে পরিচিত। তাকে সাহায্য করায় রাশিয়ার গ্যাজপ্রমব্যাংকের জুরিখ শাখার সাবেক নির্বাহীদের মোটা অংকের জরিমানা করা হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বাদ্যশিল্পী রাউডাগিন প্রেসিডেন্ট পুতিনের বড় মেয়ে মারিয়ার ‘গডফাদার’।রাউডাগিন ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে তার ব্যাংক হিসাবে তিন কোটি মার্কিন ডলার জমা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে রাউডাগিন কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যাও দিতে পারেননি বলে দাবি করা হয়।
সুইজারল্যান্ডের আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যাংক হিসাবে জমা পড়া অর্থের উৎস বা ওই হিসাবের মালিককে নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কোনও ধরনের সন্দেহ হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই হিসাব নম্বর (একাউন্ট) বাতিল বা বন্ধ করে দেন।
যে চারজন ব্যাংকারকে দোষীসাব্যস্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে তিনজন রুশ এবং একজন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক। তাদেরকে মোট ৭ লাখ ৪১ হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক জরিমানা এবং দুই বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডে আইনি বিধিনিষেধের কারণে ওই ব্যাংকারদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তারা আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।
ওই চার ব্যাংকার পুতিনের বন্ধুর জমা করা কোটি কোটি ডলারের উৎস নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, এমনটা জুরিখ আদালতে প্রমাণিত হয়নি।
কিন্তু তারপরও তাদের দোষীসাব্যস্ত করে দেওয়া রায়ে বলা হয়, তাদের সন্দেহ হওয়া উচিত ছিল। যেটা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
একই সঙ্গে এই রায়ের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ড জুড়ে ব্যাংকারদের সতর্ক করে দেওয়া হল। বার্তা দেওয়া হল, ‘ডিউ ডিলিজেন্স আইন’ কার্যকর হচ্ছে।
২০১৬ সালে পানামা পেপার ফাঁসের ঘটনায় রাউডাগিন এবং পুতিনের মধ্যে আর্থিক সম্পর্ক থাকার বিষয়টি জনসম্মুখে চলে আসে।
‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ (আইসিআইজে) ২০১৬ সালের মে মাসে পানামার ল’ ফার্ম মোস্যাক ফনসেকার বিপুল সংখ্যক নথি ফাঁস করে দেয়, যা পানামা পেপারস নামে পরিচিতি পায়।
বিশ্বের ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়ছেন সেই তথ্য বেরিয়ে আসে সেসব নথি থেকে।
২০১৪ সালে রাউডাগিন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি লাখপতি নন।তার অত অর্থ নেই।
জুরিখ আদালতের বিচারক বলেন, এ থেকেই সন্দেহ করা হয় রউডাগিন তার নামের একাউন্টে জমা করা অর্থের প্রকৃত মালিক নন।
‘‘তাই ওই চার ব্যাংক কর্মকর্তা যারা রাউডাগিনের একাউন্ট খুলেছেন তাদের উচিত ছিল তাকে এই প্রশ্ন করা যে, ‘আপনার তো তেমন আয় নেই, তবে কোথা থেকে ওই অর্থ এল।”
দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাজা দেওয়া হলেও এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, যদি ওই অর্থ রাউডাগিনের না হয়, তবে সেগুলোর মালিক কে?
‘পুতিন বিপুল সম্পদের মালিক এবং সেগুলোর কিছু অংশ তিনি বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন’- রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে নিয়ে এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের।
ওদিকে সুইস ব্যাংক সম্পর্কে বলা হয়, বিশ্বের তাবত স্বৈরশাসক, মাফিয়া নেতা, মাদক কারবারিদের কালো টাকার নিরাপদ আশ্রয় তাদের সুইস ব্যাংক একাউন্ট।
এ রায় বলছে, হয়ত সেই দিনের শেষ হতে চলেছে।