জর্জিয়ার ক্ষমতাসীন দল জর্জিয়ান ড্রিম টানা দুই রাতের সহিংস বিক্ষোভের পর বিতর্কিত ‘বিদেশি এজেন্টস’ বিল প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
তারা বৃহস্পতিবার বিলটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিরোধীদের ভাষ্য, এই ‘বিদেশি এজেন্টস’ বিলটি আইনে পরিণত হলে জর্জিয়া রাশিয়া-অনুপ্রাণিত কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার দিকে ঝুঁকবে, ফিকে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার আশা।
এক বিবৃতিতে দেশটির ক্ষমতাসীন দল জর্জিয়ান ড্রিম সমাজে ‘সংঘাত’ কমানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেছে, কোনো ধরণের আপত্তি ছাড়াই তারা তাদের সমর্থিত বিলটি নিঃশর্তভাবে তুলে নিতে যাচ্ছে।
বিলটি নিয়ে ‘উগ্র বিরোধীদের’ বলা ‘মিথ্যারও’ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা।
বিলটি আইনে পরিণত হলে জর্জিয়ার কোনো সংস্থার তহবিলের মোট অর্থের ২০ শতাংশের বেশি বিদেশ থেকে ঢুকলে, সেই সংস্থাকে বিদেশি এজেন্ট হিসেবে নিবন্ধিত হতে হতো নাহলে জরিমানা গুনতে হতো।
জর্জিয়ার অর্থোডক্স চার্চের সমালোচকদের মুখোশ খুলতে এই আইনটি জরুরি হয়ে পড়েছিল বলে এর আগে দাবি করেছিল জর্জিয়ান ড্রিম।
জর্জিয়ায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদল বিলটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
“আমরা ‘বিদেশি প্রভাব’ সম্পর্কিত বিলটি প্রত্যাহারে ক্ষমতাসীন দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা জর্জিয়ার সকল রাজনৈতিক নেতাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গঠনমূলক উপায়ে ইইউপন্থি সংস্কার ফের শুরু করার উৎসাহ দিচ্ছি,” টুইটারে লিখেছে তারা।
বিলটি প্রত্যাহারে ঘোষণা আসার পর বিরোধীদের এক যৌথ ব্রিফিংয়ে দ্রোয়া পার্টির প্রতিনিধি গিগা লেমোনজালা বলেন, বিক্ষোভে আটকদের মুক্তি এবং সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিদেশি এজেন্টস’ বিলটি প্রত্যাহারের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চলবে।
মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্ট বিলটিকে প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়ার পর বাইরে লাখো বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানায়। বিক্ষোভ দেখা যায় বুধবারও। এর মধ্যে কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে পেট্রল বোমা, পাথর ও প্লাস্টিকের বোতল ছোড়ে।
সহিংসতায় পার্লামেন্ট ভবনের অন্তত একটি জানালা ভেঙেছে এবং পুলিশের একটি গাড়ি উল্টে পড়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশকে কাঁদুনে গ্যাস, স্টান গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করেছে। মঙ্গলবারের বিক্ষোভ থেকে ৭৭ জনকে গ্রেপ্তারের কথাও জানিয়েছে তারা।
বিলটির বিরোধীদের মধ্যে জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট স্যালোম জুরাবিচভিলও আছেন; পার্লামেন্ট অনুমোদন দিলেও তিনি এতে ভিটো ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন বলে সতর্ক করেছিলেন।
জুরাচভিল বিলটিকে ২০১২ সালের একটি রুশ আইনের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা ভিন্নমত দমনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
অন্যদিকে জর্জিয়ার সরকার বলছে, তাদের প্রস্তাবিত আইনটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিদেশি এজেন্টস’ আইনের আদলে করা হয়েছে, যেটি ১৯৩০ এর দশক থেকেই কার্যকর আছে।
জর্জিয়ার বিরোধী দলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই জর্জিয়ান ড্রিমের বিরুদ্ধে মস্কোর সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ করে যাচ্ছে।
অন্যদিকে রাশিয়া জর্জিয়ার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল আবখাজিয়া ও সাউথ ওসেটিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিয়ে আসছে।
বিলটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে জর্জিয়ার অন্তর্ভুক্তির পক্ষের লোকজনকে ক্ষুব্ধ করেছিল। ইইউর কর্মকর্তারাও এই বিলের নিন্দা জানিয়ে এটি জর্জিয়ার ইইউ জোটে ঢোকার পথ জটিল করে দেবে বলে মন্তব্য করেছিলেন।
ইইউ গত বছর মলদোভা ও ইউক্রেইনকে প্রার্থী সদস্যপদ দিলেও, রাজনৈতিক ও আইনি সংস্কার কার্যক্রম থমকে থাকাকে কারণ দেখিয়ে জর্জিয়াকে ওই মর্যাদা দেয়নি।