গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে সৌদি আরব।
Published : 20 Nov 2023, 08:22 PM
শত্রুতার অবসান এবং বিধ্বস্ত ফিলিস্তিন ছিটমহল গাজায় জরুরি ভিত্তিতে মানবিক ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মন্ত্রীরা।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে সোমবার এ বিষয়ে প্রথম দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যাতে অংশ নেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, সৌদি আরব ও জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। ওআইসির মহাসচিবও এই বৈঠক অংশ নেন।
বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গাজায় ‘মানবিক বিপর্যয়’ থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বৈঠকে কূটনীতিকরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দেখা করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র বাহিনী হামাসের হামলার বিরুদ্ধে পাল্টা জবাবের কথা বলে গাজায় প্রায় দেড় মাস ধরে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এমনকি দেশটি আত্মরক্ষার নামে এই আক্রমণের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। পশ্চিমারাও ইসরায়েলের এ দাবিতে সমর্থন জানিয়েছে।
ইসরায়েলের এই দাবির বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের বোঝাতে এবং তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চান বৈঠকে অংশ নেওয়া কূটনীতিকরা।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ বলেন, “একটি পরিষ্কার বার্তা পাঠাতেই আজ আমরা এখানে বৈঠকে বসেছি। আমরা বলতে চাই, আমাদের অবশ্যই দ্রুত এই যুদ্ধ এবং হত্যা বন্ধ করতে হবে। এবং আমাদের অবশ্যই গাজায় দ্রুত মানবিক ত্রাণ সহায়তা পাঠাতে হবে।”
এ মাসে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ইসলামিক-আরব দেশগুলোর বিশেষ যৌথ সম্মেলনেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ‘ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েল যে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে’ যে বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই বার্তাকে শক্তিশালী করতে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের একজোট করছেন বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং বলেন, বেইজিং আরব ও মুসলিম দেশগুলোর ‘একজন ভালো বন্ধু এবং ভাই’।
“এবং আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ জাতীয় অধিকার এবং স্বার্থ পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বদা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে গেছি।"
গত ৭ অক্টোবর ভোরে গাজা থেকে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস কয়েক ঘণ্টা ধরে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১৪শ’র বেশি মানুষকে হত্যা করে এবং ২৪২ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। যার জবাব দিতে ওই দিন থেকেই গাজায় তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। যা এখনো অব্যাহত আছে এবং দিনদিন তীব্রতর হচ্ছে।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশিই শিশু।
হামাস-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হওয়ার পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বার বার হামাসের নিন্দা জানানো বন্ধ করে দিয়েছে। তার পরিবর্তে দেশটি উত্তেজনা কমানো এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’ নীতি অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
সোমবারের এই বৈঠক নিয়ে বেইজিংয়ে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, তিনি আশা করছেন, ‘এই বৈঠক থেকে যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে কোনও বিবৃতি আসবে না, এখন সেই সময় না’।