২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর সবচেয়ে বিশিষ্ট আরবদেশ হয়ে ওঠে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
Published : 12 Nov 2023, 10:55 PM
গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে মানুষের বিক্ষোভ-সমাবেশের মধ্যে অনেক আরব দেশই যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখবে কিনা তা নিয়ে ভাবছে, সেখানে এই সম্পর্ক বজায় রাখারই পরিকল্পনা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
নিজেদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি ইসরায়েলি অভিযানের ওপর কিছুমাত্রায় প্রভাব রাখার আশা নিয়ে আমিরাত এ পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সরকারের নীতি সংশ্লিষ্ট চার কর্মকর্তা।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম চুক্তির অধীনে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর সবচেয়ে বিশিষ্ট আরবদেশ হয়ে ওঠে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
এতে করে অন্যান্য আরব দেশগুলোর জন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৃষ্টি ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক না করার প্রতিজ্ঞা ভেঙে নিজেদের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক গড়ে তোলার পথ সুগম হয়।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজায় ইসরায়েলের শুরু করা হামলায় মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি আরব দেশগুলোতে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান গত মাসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন এবং বারবার সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আমিরাতের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার হচ্ছে, একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা এবং মানবিক করিডোর চালু করা।
উপসাগরীয় আরব দেশগুলো তাদের তেল সম্পদের কারণে আঞ্চলিক কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও তারা নিরাপত্তা অংশীদার হিসাবে কাজ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চার কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত আরবদেশগুলোর নেওয়া অবস্থানকে লঘু করার জন্য কাজ করছে, যাতে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে বিস্তৃত সংলাপে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে।
শেখ মোহাম্মদ বৃহস্পতিবার আবুধাবিতে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক করেছেন। লড়াইয়ের বিরতির বিনিময়ে সীমিত সংখ্যক জিম্মির মুক্তির জন্য কাতারের মধ্যস্থতা চলার মধ্যে এ বৈঠক হয়েছে।
শেখ মোহাম্মদ আলোচনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, ‘ইউএই ও কাতার এ অঞ্চলে একটি ন্যায্য, দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যাপক শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার জন্য আহ্বান জানাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
যদিও গত তিন বছরে ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক গড়ে ওঠার পরও গাজায় হামলার লাগাম টানতে আবুধাবি দৃশ্যত সামান্যই সাফল্য পেয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের দেওয়া হিসাবমতে, গাজায় ইসরায়েলের হামলার শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১১ হাজার মানুষ মারা গেছে।
চলমান এই অচলাবস্থার মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদার ওয়াশিংটনকে নিয়ে ক্রমেই হতাশ হয়ে উঠছে। তারা যুদ্ধ শেষ করার জন্য যথেষ্ট চাপ দিচ্ছে না বলে আবুধাবির ধারণা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেছেন, ওয়াশিংটনকে দ্রুত সংঘাতের অবসান ঘটাতে হবে এবং শরণার্থী, সীমান্ত ও পূর্ব জেরুজালেমের বিষয়টি তুলে ধরে দশক পুরনো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানের জন্য একটি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, যুদ্ধ এখন আঞ্চলিক উত্তেজনা উস্কে দেওয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে চরমপন্থার একটি নতুন ঢেউ ছড়ানোর ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।