আততায়ীর গুলিতে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের হত্যাকাণ্ডের পর তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আগামী মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে। তিন দিনের এ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ৭০০ জন বিদেশি অতিথিও থাকবেন।
তবে এতে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার থেকেও বেশি ব্যয় কেন হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা।
রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যয় এখনও প্রকাশ না করা হলেও ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে তা ৮ মিলিয়ন পাউন্ড বা ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আর আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ইয়েন।
এমনকি এ সম্ভাব্য ব্যয় ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও ধারণা অনেকের; গত অলিম্পিকসে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ বিলিয়ন ইয়েন, শেষ পর্যন্ত তা দ্বিগুণ ছুয়েছিল।
রাষ্ট্রীয় এসব অনুষ্ঠানে বেশি ব্যয়ের কারণ মধ্যবর্তী কোম্পানিদের জন্য হচ্ছে কি না, যারা তা আয়োজন করে, সে প্রশ্নও সামনে এসেছে।
কিয়োডো নিউজ এজেন্সির সাম্প্রতিক জরিপে ৭০ শতাংশ মনে করেন যে রাষ্ট্রীয় এ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সরকার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করছে।
বিবিসি জানায়, এর অর্ধেকেই মূলত ব্যয় হচ্ছে নিরাপত্তা জোরদারে। আর এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় হবে বিদেশিদের আতিথেয়তায়।
মঙ্গলবারে শুরু হতে যাওয়া এ অনুষ্ঠানে জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দেখা করবেন বিশ্ব নেতারা। তিন দিনের এ অনুষ্ঠানকে তাই অভিহিত করা হচ্ছে ‘অন্ত্যেষ্টি কূটনীতি’।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসসহ ২১৭টি দেশের ৭০০ অতিথি এ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এর মধ্যে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অ্যান্টনি আলবানিজও রয়েছেন।
এদিকে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়া নেতাদের অধিকাংশই বর্তমান বিশ্ব নেতা। আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার যোগ দেওয়া নেতাদের অনেকেই সাবেক।
শিনজো আবে জাপানের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী যার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। গত ৮ জুলাই জাপানের নারা শহরে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় এক বন্দুকধারীর অতর্কিত হামলায় নিহত হন তিনি। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
৫৫ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরেক প্রধানমন্ত্রী শিগেরু য়ুশিদার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়েছিল রাষ্ট্রীয় খরচে। য়ুশিদাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের কারিগর হিসেবে মনে করা হয়।
এদিকে য়ুশিদার অনুষ্ঠানের সঙ্গে ব্যয়ের পার্থক্য করে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। সে অনুষ্ঠানে তখন ব্যয় হয়েছিল ১৮ মিলিয়ন, যা এখনকার ৭০ মিলিয়ন ইয়েনের সমান। সেই বিবেচনায় এ ব্যয় অন্তত ২৩ গুণ বেশি।
জাপানে যখন মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, এ সময়ে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এত ব্যয় না করে তা নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য ব্যয়ের পরামর্শও আসছে। এতে তাদের কষ্ট কিছু্টা লাঘব হতে পারত বলে মনে করছেন জাপানের মানুষ
অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বর্তমান শাসকের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে বিবিসির ভাষ্য। কিশিদা ক্ষমতা নেওয়ার পর অজনপ্রিয়তার সর্বোচ্চতে পৌঁছেছে বলেও বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।