ছুরিকাঘাতে গুরুত আহত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে এবং তিনি ‘স্পষ্টভাবে’ তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তদন্ত সম্পর্কে জানেন এমন একজন কর্মকর্তা সোমবার সিএনএন-কে এ তথ্য জানান।
নিউ ইয়র্কের শাটাকোয়া ইনস্টিটিউটে শুক্রবার একটি অনুষ্ঠান চলাকালে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন ৭৫ বছরের রুশদি। জরুরি অস্ত্রোপচারের পর তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল।
অবস্থার উন্নতি হলে গতে রোববার তার ভেন্টিলেশন খুলে নেওয়া হয়। রুশদি তদন্ত কর্মকর্তাদের হামলার বিষয়ে কী বলেছেন তা জানা যায়নি।
হামলাকারী রুশদির ঘাড়ে তিনবার এবং পেটে চারবার ছুরিকাঘাত করেছে। এছাড়া, তার ডান চোখ ও বুকে ঘুষি মারার আঘাতের চিহ্ন এবং ডান উরুতে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।
আঘাতের কারণে রুশদি তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারতে পারেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অনেক মুসলমানের কাছে আপত্তিকর ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসের জন্য বছরের পর বছর হত্যার হুমকি মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন রুশদি।
১৯৯৮ সালে ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের পরপরই বইটি ভারতসহ বিশ্বের একাধিক দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
ওই সময়ে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহোল্লাহ খমেনি রুশদির বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে মুসলমানদেরকে তাকে হত্যা করার আহ্বান জানিয়ে ফতোয়া জারি করেছিলেন।
অনুষ্ঠান স্থলের প্রবেশ পথে ‘নিরাপত্তা তল্লাশি ছিল না’:
নিউ ইয়র্কের শাটাকোয়া ইনস্টিটিউট, যেখানে লেখক রুশদিকে ছুরিকাঘাত করা হয় সেখানে প্রবেশ পথে নিরাপত্তা তল্লাশির কোনো ব্যবস্থা ছিল না বলে জানান এক প্রত্যক্ষদর্শী।
শাটাকোয়া ইনস্টিটিউটের ওই অনুষ্ঠানে রুশদির বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই হাদি মাতার নামে এক যুবক ছুরি হাতে রুশদির উপর হামলে পড়েন এবং তার উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে রুশদি গুরুতর আহত হন।
হাদি মাতার কীভাবে ছুরির মতো একটি ধারাল অস্ত্র নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএন-কে বলেন, ‘‘সেখানে কোনও নিরাপত্তা তল্লাশির ব্যবস্থা বা মেটাল ডিক্টেটর ছিল না।’’
লেবানিজ বংশোদ্ভূত ২৪ বছরের মাতারের পরিবার অনেক আগেই অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যান। তার জন্ম ও বেড়ে উঠা সেখানেই এবং বর্তমানে তারা নিউ জার্সিতে থাকেন।
নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ এলাকার বাসিন্দা মাতারকে যারা চেনেন তারা তাকে একজন শান্ত এবং নিজের মধ্যে থাকা যুবক বলে বর্ণনা করেন।
মাতার নিয়মিত নিউ জার্সির নর্থ বার্গেনের একটি বক্সিং জিমে যেতেন। সেটির মালিক ডেসমন্ড বয়েল সিএনএন-কে জানান, গত এপ্রিল থেকে মাতার সেখানে যেতে শুরু করেন।
জিমে মাতারের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হতো এমন একজন বলেন, ‘‘সে খুবই শান্ত।’’
মাতারের বিরুদ্ধে গত শনিবার আদালতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতে তিনি নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেছেন।
মাতারের অতীত অপরাধের কোনও রেকর্ড নেই। যদি তিনি দোষীসাব্যস্ত হন, তবে তার সর্বোচ্চ ৩২ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।