পাকিস্তানের ভোটে জালিয়াতির বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করা নির্বাচন কমিশনার লিয়াকত আলি চাত্থা এবার সব তার অভিযোগই ‘মিথ্যা ছিল’ বলে দাবি করেছেন।
Published : 22 Feb 2024, 09:26 PM
পাকিস্তানে গত ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলার পর পদত্যাগ করে তোলপাড় সৃষ্টি করা রাওয়ালপিন্ডির সেই নির্বাচন কমিশনার লিয়াকত আলি চাত্থা এবার তার সব অভিযোগ ‘পুরোপুরি মিথ্যা ছিল’ বলে দাবি করে ক্ষমা চেয়েছেন।
ভোট জালিয়াতির সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়ে লিয়াকত বলেছেন, পাকিস্তান তেহরিক ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর সঙ্গে যুক্তি করেই তিনি ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করেছিলেন। তার এ কাজের জন্য পিটিআই তাকে ভবিষ্যতে লোভনীয় পদে আসীন করার প্রস্তাব দিয়েছিল।
সেই প্রলোভনে পড়ে এমন কাজ করার জন্য লিয়াকত খুবই ‘লজ্জিত’ এবং ‘বিব্রত’ বলে জানান। তিনি বলেন, “আমি দেশের গোটা আমলা মন্ডলীর কাছে ক্ষমা চাইছি, যাদের সুনাম আমার কর্মকান্ডের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।
“আমি যা করেছি তার পূর্ণ দায় নিচ্ছি এবং এর বিরুদ্ধে যে কোনও ধরনের আইনি ব্যবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করছি।”
লিয়াকত আলি চাত্থা গত সপ্তাহে শনিবার বিরল এক সংবাদ সম্মেলনে নাটকীয়ভাবে ভোট জালিয়াতির স্বীকারোক্তি দেন। বিবেকের তাড়নায় তিনি নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে মুখ খুলেছেন বলে জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, “আমরা পরাজিত প্রার্থীদেরকে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী করিয়েছি।” লিয়াকত আরও অভিযোগ করেছিলেন, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ও প্রধান বিচারপতি কাজী ফায়েজ ইসা ভোট কারচুপিতে জড়িত। যদিও নির্বাচন কমিশন ও প্রধান বিচারপতি ফায়েজ ইসা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তবে লিয়াকতের ওই অভিযোগের পর পিটিআই, জামাত-ই-ইসলামি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ভোট জালিয়াতি তদন্ত করার দাবি তুলেছিল। এসব দল আগে থেকেই বলে আসছিল যে, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে।
পাকিস্তানের জিও নিউজ জানায়, এবার লিয়াকত বলছেন- সংবাদ সম্মেলন করে তার ভোট জালিয়াতির অভিযোগ বয়ান করার উদ্দেশ্য ছিল পিটিআইয়ের মিথ্যা ভাষ্য নিয়ে নাটক এবং চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা।
এক বিবৃতিতে লিয়াকত বলেছেন, পিটিআই-য়ের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাদের অনুমোদন সাপেক্ষেই সব পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে তাকে জানিয়েছিলেন এক পিটিআই নেতা।
এই নেতার সঙ্গে গত ১১ ফেব্রুয়ারিতে সাক্ষাৎ করতে গোপানে লাহোরে গিয়েছিলেন লিয়াকত। সেই বৈঠকেই তাকে পিটিআইয়ের ভোট জালিয়াতির অভিযোগের সপক্ষে ভূমিকা রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং এর বিনিময়ে তাকে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া নিশ্চিত করা হবে বলে জানানো হয়েছিল।
প্রস্তাব মেনে নেওয়ার বিষয়ে লিয়াকত বলেন, ৩২ বছর সরকারি চাকরি করার পর অবসর গ্রহণের সময় আসন্ন হওয়ার কারণে তিনি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন। তাই কোনও সুবিধা বা কর্তৃত্ব পাওয়ার সুযোগ ছাড়তে চাননি।
পিটিআইয়ের শাসনামলে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন জানিয়ে বিবৃতিতে লিয়াকত বলেন, “২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পিটিআই যখন সরকার গঠন করেছিল তখন তিনি ঊর্ধ্বতন প্রাদেশিক কর্মকর্তার পদে ছিলেন। পাঞ্জাব সরকারের প্রাদেশিক সেক্রেটারিও ছিলেন, প্রাদেশিক সরকারে যেটি অন্যতম শীর্ষ একটি পদ।
এই পদে থাকার সময়ই পিটিআইয়ের ঊর্ধ্বতন এবং বিশিষ্ট প্রাদেশিক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে জানান লিয়াকত।