বেইজিং শেনঝেনে শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধ, বদলাচ্ছে চীনের কোভিড নীতিও

বেইজিংয়ের বাসিন্দারা তাদের শহর থেকে অনেক কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ বুথ সরিয়ে নেওয়ায় উল্লাস প্রকাশ করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2022, 10:00 AM
Updated : 3 Dec 2022, 10:00 AM

দেশজুড়ে ব্যাপক আন্দোলনের মুখে বিধিনিষেধ শিথিল করার পাশাপাশি চীন তাদের কোভিড নীতিতে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বলেও আভাস পাওয়া গেছে।

বেইজিংয়ের বাসিন্দারা তাদের শহর থেকে অনেক কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ বুথ সরিয়ে নেওয়ায় উল্লাস প্রকাশ করেছেন। যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের এখন থেকে আর কোভিড পরীক্ষার ফল দেখাতে হবে না বলে জানিয়েছে শেনঝেন কর্তৃপক্ষও।

এখন দৈনিক শনাক্ত রোগীর পরিমাণ মহামারী শুরুর পর থেকে দেখা সর্বোচ্চ সংখ্যার কাছাকাছি গেলেও অর্থনৈতিক দুর্দশা ও বিধিনিষেধ নিয়ে জনঅসন্তোষের কারণে চীন তাদের ‘শূন্য কোভিড’ নীতিকে আরও সুনির্দিষ্ট করার দিকে মনোযোগী হচ্ছে; এ কারণে বেশকিছু শহর এখন শনাক্তকরণ পরীক্ষার শর্ত এবং কোয়ারেন্টিনের নিয়মকানুনে ছাড় দেওয়া শুরু করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।  

দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শেনঝেনের মতো চেংডু ও তিয়ানজিনের কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, যাত্রীদের এখন থেকে আর গণপরিবহন ব্যবহার বা পার্কে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোভিড পরীক্ষার নেগেটিভ ফল দেখাতে হবে না।

রাজধানী বেইজিংয়ের অসংখ্য কোভিড শনাক্তকরণ বুথ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুপারমার্কেটের মতো জায়গাগুলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রে শনাক্তকরণ পরীক্ষার নেগেটিভ ফল দেখানোর বিধানও বাতিল হয়েছে। সোমবার থেকে শহরটির সাবওয়েতে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম কার্যকর হতে যাচ্ছে।

তবে বেইজিংয়ের অনেক ভেন্যুতে প্রবেশের ক্ষেত্রে এখনও শনাক্তকরণ পরীক্ষার ফল দেখানোর বিধান বলবৎ আছে।

বেইজিংয়ের কর্মীরা ক্রেনের সাহায্যে একটি শনাক্তকরণ বুথকে ট্রাকে তুলছেন- এমন একটি ভিডিও শুক্রবার চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে যায়।

“এগুলো আগেই সরিয়ে নেওয়া উচিত ছিল,” বলেছেন এক ব্যবহারকারী।

“ইতিহাসে নির্বাসিত হল,” লিখেছেন আরেকজন।

ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। তবে অনেক বুথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যেগুলো খোলা আছে সেগুলোতে বাসিন্দাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।

মহামারীর তিন বছরে চীন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো না করে নিজেদের নেওয়া কঠোর ‘শূন্য কোভিড’ নীতির মাধ্যমে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলার পথে হেঁটেছে। এই নীতিতে হুটহাট লকডাউন কার্যকর এবং নিয়মিত শনাক্তকরণ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিধান ছিল।

জীবন বাঁচাতে এবং স্বাস্থ্যখাতের ওপর চাপ এড়াতে এ ধরনের ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা বেইজিং দীর্ঘদিন ধরে বলেও এসেছে।

তবে গত মাস থেকে চীনা কর্মকর্তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল, তারা বিভিন্ন এলাকার কর্তৃপক্ষকে বিধিনিষেধের আওতাধীন এলাকা ছোট করে আনার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।

প্রথম দিকে তাদের এ নির্দেশনা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, পাশাপাশি কঠোর লকডাউনে থাকা শহরগুলোকেও দৈনিক শনাক্তের ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম টানতে হিমশিম খেতে দেখা যায়।

এরই এক পর্যায়ে দূর পশ্চিমের উরুমশি শহরে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে অগ্নিকাণ্ড ১০ জনের প্রাণ কেড়ে নিলে চীনের একাধিক শহরে বিধিনিষেধবিরোধী বিক্ষোভ দানা বাঁধে।

২০১২ সালে শি জিনপিং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চীনের মূল ভূখণ্ডে এমন নজিরবিহীন প্রতিবাদ আর দেখা যায়নি।

চীন শিগগিরই দেশজুড়ে শনাক্তকরণ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার শর্ত কমাচ্ছে এবং শনাক্ত রোগী ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট কিছু শর্তের আওতায় ঘরেই আইসোলেশনে রাখার সুযোগ দিতে যাচ্ছে বলে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র কয়েকদিন আগেই রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে শি-ও দেশব্যাপী তরুণদের বিক্ষোভের পেছনে বছর কয়েকের কোভিড-১৯ মহামারী থেকে উদ্ভূত হতাশাকে দোষারোপ করেছেন।

এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ধরন ওমিক্রন বিধিনিষেধ কমানোর রাস্তা করে দিয়েছে, শি এমনটা বলেছেন বলেও জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা।

চীনের কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ওমিক্রনের বিপদ যে কম তা বলা শুরু করেছেন; কোভিড নিয়ে ব্যাপকভাবে আতঙ্কে থাকা দেশটির ক্ষেত্রে একে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

শুক্রবার বেইজিংয়ের অনেক এলাকাকেই শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ‘পজিটিভ’ ফল আসা রোগীদের কীভাবে বাড়িতেই কোয়ারেন্টিনে রাখা যায় সে সম্পর্কিত নির্দেশনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা গেছে। এর আগে চীনের সরকারি নির্দেশনায় শনাক্ত রোগীকে কেন্দ্রীয় কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনায় পাঠানোর কথা বলা ছিল।

অবশ্য কড়াকড়ি কমার সঙ্গে সঙ্গে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি এমন গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে।

অনেক বিশ্লেষক বলছেন, খানিকটা শিথিল হলেও আগামী বছরের অন্তত মার্চের আগে চীনে বিধিনিষেধের সিংহভাগ তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।

বয়স্ক ব্যক্তিদের টিকাদানের যে কর্মসূচি দেশটি কেবলই শুরু করেছে তার ইতিবাচক ফলও দরকার বলে মনে করছেন তারা।

চীন যদি তড়িঘড়ি সব বিধিনিষেধ তুলে নেয় তাহলে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১৩ লাখ থেকে শুরু করে ২০ লাখও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা অনেকের।

তবে বেইজিং যদি টিকাদানে আরও বেশি মনোযোগী হয়, তাহলে মৃতের এই সংখ্যা অনেকখানি কমতে পারে, বলছেন তারা।

দেশটি শুক্রবার নতুন ৩২ হাজার ৮২৭ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে। এই সংখ্যা আগেরদিনের ৩৪ হাজার ৭৭২ এর তুলনায় খানিকটা কম।

মহামারী শুরুর পর শুক্রবার পর্যন্ত চীন কোভিডে ৫ হাজার ২৩৩ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে; এ সময়ের মধ্যে দেশটিতে উপসর্গধারী মোট ৩ লাখ ৩১ হাজার ৯৫২ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন:

Also Read: কোভিড বিধিনিষেধ শিথিলে স্বস্তি ও উদ্বেগের মিশ্র প্রতিক্রিয়া চীনে