কোভিড বিধিনিষেধ শিথিলে স্বস্তি ও উদ্বেগের মিশ্র প্রতিক্রিয়া চীনে

চীনের বিভিন্ন নগরীতে কোভিড বিধিনিষেধ শিথিল হতে থাকায় বাসিন্দাদের অনেকে যেমন স্বস্তি পেয়েছেন, তেমন অনেকেই কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগে আছেন।

রয়টার্স
Published : 2 Dec 2022, 01:09 PM
Updated : 2 Dec 2022, 01:09 PM

চীনের বিভিন্ন নগরীতে কোভিড পরীক্ষায় কড়াকড়ি এবং কেয়ারেন্টিনে থাকার নিয়মকানুন উত্তোরত্তর শিথিল হতে থাকায় বাসিন্দারা যেমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে তেমনি উদ্বেগেরও মিশেল দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে।

দেশের কঠোর কোভিড নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক গণঅসস্তোষ এবং বিক্ষোভের পর কর্তৃপক্ষের এই নীতি থেকে সরে আসার প্রত্যাশায় থাকা লাখো মানুষ বিধিনিষেধ শিথিলের পদক্ষেপে স্বস্তি পেয়েছে।

বিশেষ করে তিন বছর ধরে অর্থনীতিতে লকডাউনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে যে কর্মীরা হতাশ ছিল, তারা কোভিড বিধিনিষেধ শিথিলের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।

কিন্তু অন্য অনেকেই বিধিনিষেধ শিথিলের কারণে হঠাৎ করেই কোভিড সংক্রমিত হওয়ার আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ বোধ করছেন। কর্তৃপক্ষ এমনকী এই সপ্তাহ পর্যন্ত বারবারই কোভিড সংক্রমণকে প্রাণঘাতী বলে বর্ণনা করে এসেছে।

চীনের বয়স্ক মানুষেরা, যাদের অনেকেই এখনও কোভিড টিকা নেননি, তারাই সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত বোধ করছেন।

রাজধানী বেইজিংয়ের বাসিন্দা শি ওয়েই ভুগছেন ক্যান্সারে। বেশিরভাগ সময় তিনি আইসোলেশনেই কাটিয়েছেন। কিন্তু তিনি এখনও কোভিড আক্রান্ত হতে পারেন এবং তার ৮০ বছর বয়সী মা তার কাছ থেকে কোভিড সংক্রমিত হতে পারেন বলে উদ্বিগ্ন।

কারণ, ওয়েইকে প্রতি তিন সপ্তাহ পরপরই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে হয়। কোভিড বিধি শিথিল হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমি কেবল আমাকে রক্ষা করার জন্য ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারি।”

ওদিকে, এর ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা গেছে গুয়াংঝুতে। সেখানে কোভিড বিধিনিষেধ শিথিলে স্বস্তি প্রকাশ করে লিলি নামের এক বাসিন্দা বলেন, “শেষ পর্যন্ত আমরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছি।”

লিলি রেস্তোরায় রেস্তোঁরায় কাজ করেন। দীর্ঘদিনের লকডাউনের পর গুয়াংঝুর রোস্তাঁরাগুলো বৃহস্পতিবার থেকে আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। লিলি বলেন, লকডাউনের কারণে গত কয়েক বছর ধরে আয় ৩০ শতাংশ কমে গেছে তার।

তিনি বলেন, “জনগণ আর এই ভার নিতে পারছিল না। প্রত্যেকেই চাইছিল আমরা যেন আবার কাজ শুরু করতে পারি। গুয়াংঝু সরকার সম্ভবত আমাদের কথা শুনেছে এবং এটি বাস্তবায়ন করার সময় হয়েছে বলে ভেবেছে।”

চীনের সাংহাই এবং গুয়াংঝুর কয়েক ডজন জেলা এবং বিভিন্ন নগরীতে কোভিড শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাওয়ার মধ্যেও বৃহস্পতিবার গণবিক্ষোভের মুখে ওইসব এলাকা লকডাউন মুক্ত করা হয়।

তার আগে বুধবার হঠাৎ করেই প্রধান প্রধান নগরীগুলোতে কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়। গুয়াংঝুতে কঠোর কোভিড নীতি-বিরোধী সহিংস বিক্ষোভ এবং পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ার কয়েকঘন্টা পর এমন পদক্ষেপ নেয় কর্তৃপক্ষ।

চংকিং এর মতো অন্যান্য প্রধান নগরীতেও কিছু কিছু কোভিড বিধিনিষিধ শিথিল করা হয়। কর্তৃপক্ষ কিছুদিন আগেই জিরো-কোভিড নীতি চালিয়ে যাওয়া দেশের জন্য দরকার বলে যে বার্তা দিয়েছিল, এই অবস্থান তার ঠিক বিপরীত।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার রোধে গত কয়েক মাস ধরে চীন সরকার দেশজুড়ে ‘শূন্য কোভিড নীতি’ বাস্তবায়ন করেছে।

দীর্ঘদিন ধরে কঠোর লকডাউন চলার কারণে জনমনে অসন্তোষ দেখা দেওয়ার ফলে সম্প্রতি নানা এলাকায় লোকজনকে সড়কে নেমে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

গত শনিবার থেকে ‍বিক্ষোভ ক্রমেই জোরদার হয়। অনেকেই ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

উরুমছিতে সম্প্রতি একটি ভবনে আগুন লেগে ১০ জন নিহতের ঘটনা বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালে। মানুষজন ভবনে আটকা পড়ার জন্য কোভিড বিধিনিষেধকে দায়ী করা হয়। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে চীনা কর্তৃপক্ষ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘শূন্য কোভিড নীতি’ নিয়ে মানুষের অসন্তোষকে বরাবরই আমলে নেয়নি চীন সরকার। শূন্য কোভিড নীতি নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সম্প্রতি তিনি এ নীতি থেকে সরে না দাঁড়ানোর অঙ্গীকারও করেছিলেন।