গ্রিসের ট্রেন দুর্ঘটনার প্রতিবাদ মিছিলে হাজার হাজার মানুষ

গ্রিসের ধর্মঘটী রেলকর্মীরা জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে অবহেলা, কম বিনিয়োগ ও লোকবল সংকটের কারণে রেল পরিষেবা ধুঁকছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2023, 08:46 AM
Updated : 9 March 2023, 08:46 AM

সবচেয়ে প্রাণঘাতী ট্রেন দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ পর গণঅসন্তোষের বৃহত্তম প্রকাশ দেখল গ্রিস। ক্ষুব্ধ হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছে এবং রেলকর্মীরা ধর্মঘট শুরু করেছেন।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারির ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় ৫৭ জন নিহত হয়। এতে দেশটির ভঙ্গুর রেল নেটওয়ার্ক নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

ধর্মঘটী রেলকর্মীরা জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে অবহেলা, কম বিনিয়োগ ও লোকবল সংকটের কারণে গ্রিসের রেল পরিষেবা ধুঁকছে।

এটি প্রায় এক দশক ধরে চলা গ্রিসের ঋণ সংকটের প্রতিফলন বলে মত বিশ্লেষকদের।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ২০১৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এবারই তারা সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের মুখোমুখি হল।

পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, গ্রিসের বিভিন্ন শহরে বুধবারের এসব মিছিলে ৬০ হাজারেরও বেশি লোক অংশ নিয়েছে। বিক্ষোভে পরিবহন শ্রমিক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও অংশ নিয়েছেন।

শুধু রাজধানী এথেন্সেই ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ মিছিলে যোগ দেয়। নগরীর কেন্দ্রস্থলে পার্লামেন্ট ভবনের দিকে যেতে যেতে তারা ‘খুনী!’, ‘খুনী!” এবং ‘আমরা সবাই একই বগিতে’ বলে শ্লোগান দেয়।

দাঙ্গা পুলিশ পার্লামেন্ট ভবনের সামনে মিছিলে বাধা দিলে প্রতিবাদকারীদের একটি অংশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরা পেট্রল বোমা মেরে জবাব দেয় এবং পুলিশের একটি ভ্যান ও কয়েকটি ডাস্টবিনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

গ্রিসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর থেসালোনিকিতে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। এখানে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ সরকারি ভবনগুলো লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে।

যে আন্তঃনগর যাত্রীবাহী ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়েছিল সেটি এথেন্স থেকে এই থেসালোনিকিতেই যাচ্ছিল। ট্রেনটির প্রায় সাড়ে ৩০০ যাত্রীর অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। একই লাইনে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে এর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

প্রচণ্ড সংঘর্ষে যাত্রীবাহী ট্রেনটির প্রথম চারটি বগি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে প্রথম দুই বগি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।

এথেন্সের মিছিলে থাকা একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “আপনি সেখানে পৌঁছালে আমাদের বার্তা দিয়েন।”

ট্রেন দুর্ঘটনার পর থেকে গত এক সপ্তাহ ধরে চলা প্রতিবাদে এটি অন্যতম একটি শ্লোগান হয়ে উঠেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী নিকোমাথি ভাথি (১৯) বলেন, “আপনি ক্ষুব্ধ হবেন কারণ সরকার ওই সব বাচ্চাদের জন্য কিছুই করেনি। গণপরিবহন জগাখিচুড়িতে পরিণত হয়েছে।”

আরেক শিক্ষার্থী বলেন,“পরিস্থিতির পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকবো।”

দেশটির রক্ষণশীল সরকার আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি নির্বাচনের ডাক দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। বুধবার তারা রুগ্ন হয়ে পড়া রেল নেটওয়ার্ককে সারিয়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আরও খবর:

Also Read: ট্রেন দুর্ঘটনা: ক্ষমা চাইলেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী