দেশ কোন পথে চলবে সেই দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি এ নির্বাচন হোয়াইট হাউজে থাকা ব্যক্তি ও তার দলের ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে তারও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।
Published : 08 Nov 2022, 05:28 PM
যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রাথমিক ফল আসতে শুরু করেছে। এই ভোটের ফলাফলের মাধ্যমে বোঝা যাবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখনো ভোটারদের মধ্যে কতটা জনপ্রিয়।
তিনি ভবিষ্যতে সহজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন, নাকি প্রতিপদে রিপাবলিকানরা তাকে আটকে দেবে, তাও স্পষ্ট হয়ে যাবে ৮ নভেম্বরের ভোটের মাধ্যমে।
যদিও মধ্যবর্তী নির্বাচনে হোয়াইট হাউজে যারা থাকেন তাদের আসন হারানোর প্রবণতাই বেশি দেখা যায়।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আবারও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারবেন কিনা তাও বোঝা যাবে এই নির্বাচনের ফল থেকেই।
কীভাবে এ নির্বাচন হয়, এবারের নির্বাচনে কোন বিষয়গুলো নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে, তার একটি সহজপাঠ প্রকাশ করেছে বিবিসি।
মধ্যবর্তী নির্বাচন কী, কারা নির্বাচিত হন
যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের দুইকক্ষ–প্রতিনিধি পরিষদ ও সেনেট। মধ্যবর্তী নির্বাচনে দুই অংশেই নতুন প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। প্রেসিডেন্টের মেয়াদের মাঝামাঝিতে এ নির্বাচন হয় বলে এর নাম মধ্যবর্তী নির্বাচন।
পুরো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য নতুন আইন প্রণয়নের কাজটি করে কংগ্রেস। প্রথমে কোন বিল ভোটের জন্য সেনেটে যাবে সেই সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিনিধি পরিষদ। সেনেট ওই বিল অনুমোদন বা আটকে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দেওয়া কিছু নিয়োগের ক্ষেত্রে সেনেটের অনুমোদন লাগে। এছাড়া, বিরল কিছু ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে সেনেট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যে দুজন করে সেনেটর থাকেন, যাদের মেয়াদ ছয় বছর। অন্যদিকে কংগ্রেসের নিম্মকক্ষের প্রতিনিধিরা দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং অঙ্গরাজ্যের ছোট ডিস্ট্রিক্টের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এক কথায় দুইবছর পরপর প্রতিনিধি পরিষদের সকল আসন এবং সেনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনের প্রতিনিধি মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক হয়। গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঙ্গরাজ্যে গভর্নর ও স্থানীয় কর্মকর্তা বাছাইও হয় এ নির্বাচনের মাধ্যমে।
কারা জিততে পারেন
বিবিসি জানিয়েছে, গত দুইবছর ধরে প্রতিনিধি পরিষদ ও সেনেটের বেশির ভাগ আসন ডেমোক্রেটিক পার্টির দখলে। ফলে কোনো আইন পাশের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু মধ্যবর্তী নির্বাচন তার সেই সুবিধাজনক অবস্থান কেড়ে নিতে পারে। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রতিযোগিতা পূর্ণ হবে বলেই জনমত জরিপগুলোতে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
প্রতিনিধি পরিষদে মোট আসন ৪৩৫টি। এবার প্রতিনিধি পরিষদ রিপাবলিকানদের দখলে যাবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনেটে যে ৩৫টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে চারটিতে বাস্তবিক প্রতিযোগিতা হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। ওই চার আসন রয়েছে নেভাডা, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া ও পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে।
বড় ইস্যু কী
২০২২ সালের শুরুতে সব থেকে বড় ইস্যু হতে দেখা যায় অভিবাসন, অপরাধ, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি; এগুলো রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের ভোটে জয় পেতে ভূমিকা রাখতে পারে।
কিন্তু জুনে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট জাতীয় গর্ভপাত সুরক্ষা আইন বাতিল করলে চিত্র কিছুটা পাল্টে যায়। নারীর পছন্দের ব্যাপারে আদালতের এই রায়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ডেমোক্রেটরা। তারা নিজেদের পক্ষে ভোটের প্রচারাভিযানেও এটি ব্যবহার করেছে।
গর্ভপাত সুরক্ষা আইন বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বহু নারী ও সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন।
গর্ভপাত সুরক্ষা আইন বাতিলের তাৎক্ষণিক প্রভাব স্তিমিত হয়ে এলে রিপাবলিকনরা মুদ্রাস্ফীতি, অভিবাসন ও সহিংস অপরাধ ইস্যুতে ভোটারদের মনোযোগ ঘোরানোর চেষ্টা করেছে।
নির্বাচনের প্রভাব কী
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের একটি মাধ্যম মধ্যবর্তী নির্বাচন। যদি মধ্যবর্তী নির্বাচনে হোয়াইট হাউসে থাকা দলের আসন হারানোর প্রবণতাই বেশি থাকে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয় তার জনপ্রিয়তায় ভাটার টান। গত অগাস্ট থেকে ভোটারদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা রেটিং ৫০ শতাংশের নিচে চলছে।
নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরাই যদি উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার জলবায়ু পরিবর্তন, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি, গর্ভপাতের অধিকার ও বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন আরো কঠোর করার পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।
কিন্তু যদি রিপাবলিকানরা উভয়কক্ষের নিয়ন্ত্রণ পায়, তবে এই এজেন্ডাগুলো তারা কার্যকরভাবে আটকে দিতে সক্ষম হবে। এছাড়া, ইউএস ক্যাপিটলে ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলার ঘটনার তদন্ত কার্যক্রমও তারা আটকে দিতে পারবে। এ বছরের শেষ নাগাদ ওই তদন্ত চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে রিপাবলিকানরা আরও কিছু সংবেদনশীল বিষয় যেমন- চীনের সঙ্গে জো বাইডেনের ছেলের ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং আফগানিস্তান থেকে হঠাৎ মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়েও নতুন তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।
বাইডেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টসহ নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক জটিলতা তৈরি হবে। রিপাবলিকানদের প্রভাব তার পররাষ্ট্রনীতিতেও পড়বে। বিশেষ করে ইউক্রেইনের ক্ষেত্রে।
যদিও তখনও প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার ভিটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন এবং গর্ভপাত, অভিবাসন ও ট্যাক্স সম্পর্কিত রক্ষণশীল আইনগুলো আটকে দিতে পারবেন। এর ফলাফল হবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কংগ্রেসে অচলাবস্থা।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থীদের দৌড়ে কে ক থাকতে পারেন সে সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে এই মধ্যবর্তী নির্বাচন। মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে ট্রাম্প দলের পক্ষে বেশ জোরেশোরেই প্রচার চালিয়েছেন। ট্রাম্প যাদের সমর্থন দিয়েছেন যদি সেই প্রার্থীরা নির্বাচনে ভালো করেন তবে তার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। যাদিও আরও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করছে ট্রাম্প প্রার্থী হতে পারবেন কিনা।
অন্যদিকে, ফ্লোরিডা ও টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর রন দেসান্তিস এবং গ্রেগ অ্যাবোট প্রত্যাশা করছেন তারা পুনঃনির্বাচিত হলে হোয়াইট হাউসের লড়াইয়ে তাদের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
মিশিগান, উইসকনসিন এবং পেনসিলভেনিয়ায় ডেমোক্রেটরা ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলে সেটি তাদের আত্মবিশ্বাস যোগাবে। তারা বাইডেনকে পুনরায় নির্বাচিত করতে ২০২৪ সালের প্রচার পরিকল্পনা তৈরি করছেন।
আরও খবর
যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন: ভোটারদের উজ্জীবিত করতে মাঠে বাইডেন-ট্রাম্প