জাতিসংঘের আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ পরিকল্পনাটি অনুমোদন করার কয়েক সপ্তাহ পর জাপান এমন সিদ্ধান্ত নিল।
Published : 22 Aug 2023, 06:45 PM
জাপানে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি শোধন করে প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলা শুরু হবে আগামী বৃহস্পতিবারে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরোধিতার মধ্যেই নেওয়া হচ্ছে এ পদক্ষেপ। জাতিসংঘের আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ পরিকল্পনাটি অনুমোদন করার কয়েক সপ্তাহ পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০১১ সালের সুনামিতে ফুকুশিমা কেন্দ্রটি ধ্বংস হওয়ার পর ১৩ লাখ ৪০ হাজার টন তেজস্ক্রিয় পানি সঞ্চিত রাখা হয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকের পর বলেছেন, আবহাওয়া ও সাগরের পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে আগামী ২৪ অগাস্ট থেকে পানি ছাড়তে শুরু করার অনুরোধ জানাবে কর্তৃপক্ষ।
কিশিদা রোববার ওই কেন্দ্র পরিদর্শন করতে যান। এতে তেজস্ক্রিয় পানি খুব শিগগিরই সাগরে ছাড়া হতে পারে বলে জল্পনা সৃষ্টি হয়।
কেন্দ্রের দূষিত পানি সরিয়ে ফেলার জন্য এ পানি সাগরে ফেলাটা প্রয়োজন বলেই জানিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাজধানী টোকিও ২২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।
জাপান এই দূষিত পানি এক দশকের বেশি সময় ধরে সংগ্রহ করছে এবং মজুদ করে রেখে আসছে। কিনতু এখন মজুদের জায়গা সীমিত হয়ে আসছে।
২০১১ সালের ১১ মার্চ ভয়াবহ এক ভূমিকম্প এবং এ থেকে সৃষ্ট সুনামির বিশাল জলোচ্ছ্বাসে জাপানের ফুকুশিমায় অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চারটি পারমাণবিক চুল্লি প্লাবিত হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ফুকুশিমার ওই বিপর্যয়কে তুলনা করা হয় ইউক্রেইনের চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার সঙ্গে। দুটি বিপর্যয়েই প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জীবন বিপন্ন হওয়ায় আশেপাশের এলাকা থেকে লাখো মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ার বিষয়টি প্রথম ২০২১ সালের অনুমোদন করে জাপান সরকার। সেসময় জাপান সরকার বলেছিল, তেজস্ক্রিয় ১০ লাখ টন পানি শোধন করে পর্যায়ক্রমে সাগরে ফেলা হবে।
কিন্তু জাপানের এই পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। দুই বছর আগে জাপান এই পরিকল্পনা ঘোষণার পর থেকেই সেদেশের জেলে এবং সামুদ্রিক খাবার ব্যবসায় নিয়োজিতরা-সহ ব্যাপক অঞ্চলজুড়ে মানুষ জীবিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল। তাদের আশঙ্কা, তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেললে অনেকে সামুদ্রিক খাবার কেনা বন্ধ করে দেবে।
জাপানের প্রতিবেশীরাও খুশি নয়। সবচেয়ে বেশি সোচ্চার চীন। তারা জাপানের বিরুদ্ধে মহাসাগরকে তাদের ‘ব্যক্তিগত নর্দমা’ হিসাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেছে।
তবে আইএইএ বলছে, জাপান ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লির তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার মানদণ্ড অনুযায়ীই করা হয়েছে। এতে মানুষ ও পরিবেশের ওপর তেমন ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না।
জাপান সরকার এবং ফুকুশিমা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারী কোম্পানি টেপকোও গবেষণা চালিয়ে এটা দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, সাগরে ফেলা শোধন করা তেজস্ক্রিয় পানি মানুষ এবং সাগরের জীব-বৈচিত্র্যের জন্য তেমন ঝুঁকির কারণ হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রিটিয়াম পানি থেকে আলাদা করা খুব কঠিন এবং এর মাত্রা বেশি থাকলেই কেবল তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।ফলে সাগরে পানি ছাড়ার আগে এই ট্রিটিয়ামকে পাতলা করে বিপজ্জনক মাত্রার নিচে নামাতে হবে।
কিন্তু টেপকোর তেজস্ক্রিয় পানিশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছে পরিবেশবাদী গোষ্ঠী গ্রিনপিসের কর্মীরা। তারা বলছে, পানি থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ কমাতে এই প্রক্রিয়া খুব বেশি কার্যকর নয়। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরাও তাই এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন।
সমালোচকরা বলছেন, জাপানের বরং এখন এই শোধন করা তেজস্ক্রিয় পানি ট্যাংকেই রেখে দেওয়া উচিত। এতে করে পানি শোধন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করার সময় পাওয়া যাবে এবং পানিতে যতটুকু তেজস্ক্রিয়তা আছে তা প্রাকৃতিকভাবেই কমে আসতে পারে।