এলিমিনালিয়া: ইন্টারনেট থেকে মুছে দেয় কালো অতীত

গ্রাহকের অনাকাঙ্ক্ষিত কিংবা তার জন্য ক্ষতিকর তথ্যগুলো ইন্টারনেট থেকে সরাতে এলিমিনালিয়া যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছে, তার সবগুলো ‘নীতিসিদ্ধ বা সৎ নয়’।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2023, 03:27 AM
Updated : 19 Feb 2023, 03:27 AM

“আমরা আপনার অতীত মুছে দেব”– এটাই এ কোম্পানির স্লোগান। এ কোম্পানির নাম ‘এলিমিনালিয়া’।

বার্সেলোনা থেকে কিইভ, নানা শহরে ছড়িয়ে আছে স্পেনভিত্তিক এ কোম্পানির অফিস। এলিমিনালিয়ার মত কোম্পানির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, গ্রাহকের অনাকাঙ্ক্ষিত তথ্য বা কলঙ্কিত অতীত ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে তার প্রোফাইল ঝকঝকে রাখাই তাদের কাজ।  

কীভাবে তারা এ কাজ করে? সেই পদ্ধতির পুরোটা স্বচ্ছ বা নীতিসিদ্ধ নয়। এলিমিনালিয়ার কর্মপদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে।

এলিমিনালিয়া মুখে বলে যে- তারা এ কাজের জন্য পুরো ইন্টারনেটজুড়ে এক ধরনের ‘ডিপ সার্চ’ করে, যাতে গ্রাহক সম্পর্কে সব ধরনের তথ্যের উৎসগুলো চিহ্নিত করা যায়। সেটা কোনো আর্টিকেল কিংবা ব্লগ হতে পারে, এমনকি সোশাল মিডিয়া পোস্টেও তার সম্পর্কে তথ্য থাকতে পারে। উৎসগুলো চিহ্নিত করার পর গ্রাহককে নিয়ে সমস্ত নেতিবাচক তথ্য ‍মুছে ফেলার কাজে তারা হাত দেয়।

গার্ডিয়ান লিখেছে, গ্রাহকের অনাকাঙ্ক্ষিত কিংবা তার জন্য ক্ষতিকর তথ্যগুলো ইন্টারনেট থেকে সরাতে এলিমিনালিয়া গত কয়েক বছর ধরে ‘অনৈতিক ও অসৎ পদ্ধতি’ ব্যবহার করে আসছে বলে প্রমাণ পেয়েছে তারা। 

এই কৌশলের একটি হল কোনো সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়া অর্গানাইজেশন হিসেবে পরিচয় দিয়ে কপিরাইট লঙ্ঘনের ভুয়া অভিযোগ আনা। সাধারণত সার্চ ইঞ্জিনের কাছে আমেরিকান বা ইউরোপীয় আইনের কথা বলে ওই ভুয়া অভিযোগ করা হয় গুগলের মত সার্চ ইঞ্জিন বা অ্যামাজনের মত সার্ভার সেবা দেওয়া কোম্পানির কাছে।

কোনো একটি আর্টিকেল বা সংবাদ প্রতিবেদনের লিংক দিয়ে ওই অভিযোগে বলা হয়, সেটা আসলে অভিযোগকারীর পুরনো কোনো আর্টিকেলের হুবুহু নকল। কয়েক বছর আগে অভিযোগকারীর ওয়েবসাইটে সেটি প্রকাশ করা হয়েছিল বলে সেখানে দাবি করা হয়, যদিও খতিয়ে দেখলে বোঝা যায় বেনামে ওই ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে আসল প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার অনেক পরে।

এরকম ভুয়া অভিযোগ করার উদ্দেশ্য হল, সেই আর্টিকেল বা সংবাদ প্রতিবেদনের মালিক কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করে যথার্থ প্রমাণ করতে না পারলে ব্রাউজার বা সার্ভার থেকে ওই লিংকটি নামিয়ে ফেলা হয়। তাতে কোনো একজন ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক তথ্যও গায়েব হয়ে যায়, আর সেটাই অভিযোগকারীর মূল উদ্দেশ্য।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকেও বেশ কয়েকবার এরকম ভুয়া অভিযোগের মোকাবেলা করতে হয়েছে, যেখানে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন সরানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।

ইন্টারনেট থেকে কোনো আর্টিকেল সরাতে ব্যর্থ হলে অন্য কৌশল কাজে লাগানো হয়। যেমন নির্দিষ্ট একটি নাম যুক্ত করে ফুটবল, গাড়ি বা চটকদার নানা বিষয় নিয়ে অজস্র ওয়েবসাইটের বন্যা বইয়ে দেওয়া হয়। যাতে এলিমিনালিয়ার সেই ক্লায়েন্টকে নিয়ে নেতিবাচক তথ্য গুগলে ওই নামের হাজারো তথ্যের ভিড়ে চাপা পড়ে যায়।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, এলিমিনালিয়ার সেবা নিয়ে প্রায় ৫০ হাজার ইন্টারনেট ফাইল ফাঁস হওয়ার পর তাদের ওই অসৎ কৌশলের বিষয়গুলো আলোয় এসেছে। বিশ্বের নানা প্রান্তের গ্রাহকদের সেবা দিতে তারা কী ধরনের কাজ করে থাকে, তার বিস্তারিত বিবরণ আছে সেসব ফাইলে।

এই গ্রাহকদের কেউ হয়ত তাদের অতীতের কোনো অপ্রিয় বা নেতিবাচক তথ্য ধামাচাপা দিতে চান, কেউ কেউ আবার তাদের অপরাধের প্রমাণ গায়েব করতে চান ইন্টারনেট থেকে। মাদক পাচারকারী, জালিয়াত আর যৌন অপরাধীরাও রয়েছে এই গ্রাহকশ্রেণির মধ্যে।

এলিমিনালিয়ার ওয়েবসাইটের দাবি, প্রাথমিকভাবে তারা ইউরোপীয় ‘ইউনিয়নের রাইট টু বি ফরগটেন’ আইনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে গ্রাহকের কোনো নির্দিষ্ট তথ্য মুছে ফেলার জন্য সাহায্য করে। আদালতে দণ্ডিতরাও ওই আইনের আওতায় তার দণ্ড পাওয়ার তথ্য ইন্টারনেট থেকে সরানোর আবেদন করতে পারেন, যদি যৌক্তিক কারণ থাকে।

তবে রেপুটেশন ম্যানেজমেন্ট ফার্মগুলো কতটা অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তথ্য সরানোর এই কাজটি করে, তার ভুরি ভুরি প্রমাণ ফাঁস হওয়া ওই ফাইলগুলোতে রয়েছে বলে জানাচ্ছে গার্ডিয়ান। অবশ্য এলিমিনালিয়ার এই কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে তাদের গ্রাহকরা পুরাপুরি জানেন কি না- তা স্পষ্ট নয়।

এসব ফাইল ফাঁস করেছে ফরবিডেন স্টোরিস নামের ফ্রান্সভিত্তিক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। খুন হওয়া, হুমকি পাওয়া কিংবা জেলে যাওয়া সাংবাদিকদের কাজ তুলে এনে প্রকাশ করাই তাদের লক্ষ্য। ভুয়া তথ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের অনুসন্ধান চালাচ্ছে তারা।

৩০ বছর বয়সী ডিয়োগো ‘ডিডাক’ সানচেজ ২০১৩ সালে এলিমিনালিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। এ পর্যন্ত তাদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে বিশ্বের ৫০টি দেশের ক্লায়েন্টদের নাম।

ফাঁস হওয়া ফাইলগুলো বলছে, ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেড় হাজার ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেছে এলিমিনালিয়া; ইমেইল, বিভিন্ন চুক্তি, ক্লায়েন্টের বিস্তারিত তথ্য, জাল আইনি চিঠি এবং ক্লায়েন্ট সম্পর্কে নেতিবাচক আর্টিকেলগুলোর কপি রয়েছে এসব নথির মধ্যে।

মানি লন্ডারিং আইন লঙ্ঘনকারী সুইস ব্যাংকের ক্লায়েন্ট, যুক্তরাজ্যে কয়েক ডজন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বস্তি মালিক, ব্যবসায়ী সহযোগীকে মারতে খুনি ভাড়া করা তুর্কি টাইকুন এবং কর ফাঁকি দেওয়া ভেনেজুয়েলার এক ব্যবসায়ীর যোগাযোগ পাওয়া গেছে এলিমিনালিয়ার সঙ্গে। সেসব কাজের জন্য এক লাখ ইউরো পর্যন্ত ফি নিয়েছে এ কোম্পানি। যদিও এককালীন সেবার জন্য অধিকাংশই কয়েক হাজার ডলার করে দিয়েছে।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তারা বারবার অনুরোধ করলেও এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এলিমিনালিয়া দেয়নি। ওই কোম্পানির আইনজীবীরা বলেছেন, গার্ডিয়ানের বেশিরভাগ প্রশ্নের বিষয়বস্তু ‘পক্ষপাতমূলক ও অসম্মানজনক’ বলে তাদের মনে হয়েছে।

এলিমিনালিয়া তেমন কিছু না জানালেও এর কয়েকজন ক্লায়েন্ট কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে গার্ডিয়ানের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, তাদের একজন হার্নান গ্যাব্রিয়েল ওয়েস্টম্যান।

২০১৭ সালে আর্জেন্টিনার সরকার সিনালোয়া মাদক কারবারিদের জন্য অর্থ পাচারের অভিযোগ এনেছিল ওয়েস্টম্যানের বিরুদ্ধে, যদিও পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে দুই বছর পর সেই অভিযোগ খারিজ করে দেয় আদালত।

ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট মারিসিও ম্যাক্রির পূর্বসূরি বামপন্থি ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডি কির্চনারের সঙ্গে ব্যবসার কারণে ‘প্রতিশোধ হিসেবে’ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল ম্যাক্রি সরকার।

ওয়েস্টম্যান বলেছেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল- সেগুলো আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম থেকে সরাতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু বিদেশি গণমাধ্যম থেকে সেসব প্রতিবেদন সরাতেই তিনি এলিমিনালিয়ার শরণাপন্ন হয়েছিলেন, কারণ তার বিচারে আর্জেন্টিনার আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর সেসব প্রতিবেদন আর ‘সঠিক তথ্য দেয় না’।

গার্ডিয়ান লিখেছে, এখন ওয়েস্টম্যানকে নিয়ে জানতে সার্চ দিলে আমেরিকান ফুটবলের নিয়ম, প্রাত্যহিক জীবনে দর্শনের প্রয়োগ, চিহুয়াহুয়া কুকুরের স্বভাবের মত বিষয়বস্তু নিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে লেখা নিবন্ধ সামনে আসে। আর সেসব সাইটের সঙ্গে এলিমিনালিয়ার মূল কোম্পানির যোগ রয়েছে।

এলিমিনালিয়া কীভাবে অর্থ পাচারের অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদনগুলো সরিয়েছে, তা জানেন না বলে দাবি করেন ওয়েস্টম্যান। কোনো ধরনের স্প্যাম ছড়ানো হয়েছে কি না, সে সম্পর্কেও অবগত নন বলে তিনি দাবি করেছেন।

সুইডিশ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কুরিয়াম এরকম ৬০০ সাইট চিহ্নিত করেছে, যেগুলোতে কুকুর, গাড়ি বা খেলাধুলা সম্পর্কিত একই ধরনের প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। আর এসব প্রতিবেদনে বিশেষভাবে সেসব নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাদের নাম রয়েছে এলিমিনালিয়ার ফাঁস হওয়া ফাইলগুলোতে।

এসব প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে সেগুলো আসল বা সত্যিকারের প্রতিবেদনের ভেতরেই প্রকাশ করা করা হয়। তারপর ওই সাইটগুলো থেকে গুগলে কনটেন্টের বন্যা বইয়ে দেওয়া হয়। সতর্কভাবে শিরোনামগুলো দেওয়া হয়, যাতে সার্চ ইঞ্জিনে সেসব নাম ধরে সার্চ দিলে সবার আগে এসব স্প্যাম আর্টিকেল আসে। আসল কিন্তু নেতিবাচক কনটেন্টগুলো র‌্যাংকিংয়ে নিচে নামিয়ে রাখে এসব স্প্যাম আর্টিকেল। ফলে সেই প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

গার্ডিয়ান তাদের এক বিশ্লেষণের উদাহরণ দিয়ে বলেছে, এলিমিনালিয়ার ক্লায়েন্ট সেই বস্তি মালিকের নাম ধরে সার্চ করলে অর্ধেক লেখা কয়েক ডজন ব্লগস্পট ও আবোল-তাবোল সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল চলে আসে। এতো স্প্যামের চাপে ওই ব্যক্তির অপরাধ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো সার্চ ইঞ্জিনের পঞ্চম পৃষ্ঠায় চলে গেছে। বেশিরভাগ মানুষই অতদূর খুঁজতে যাবে না।

কপিরাইট লঙ্ঘনের ভুয়া অভিযোগ

দেখা যাচ্ছে, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের লক্ষ্য নিয়ে যে ডিজিটাল মিলেনিয়াম কপিরাইট অ্যাক্ট (ডিএমসিএ) যুক্তরাষ্ট্র করেছে, সেই আইনেরও অপব্যবহার করে আসছে এলিমিনালিয়া। কপিরাইট লঙ্ঘন হলে এ আইন অনুযায়ী সার্চ ইঞ্জিনগুলো চুরি করা তথ্য বা কনটেন্ট সরিয়ে নিতে বাধ্য থাকে।   

এসব ক্ষেত্রে গুগলের মত সার্চ ইঞ্জিনের কাছে অভিযোগ জানাতে হয়। মুশকিল হল, অভিযোগকারী কেবল কয়েকটি ঘর পূরণ করেই তার অভিযোগ জানাতে পারেন, সেজন্য তার পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপনের বাধ্যবাধকতা থাকে না। 

গার্ডিয়ান বলছে, অন্য কোনো ওয়েবসাইট বা ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে কপিরাইট লঙ্ঘনের এরকম বহু অভিযোগ এলিমিনালিয়া গুগলসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে করেছে, যেখানে নির্দিষ্ট কোনো আর্টিকেল ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওই আর্টিকেলে মিথ্যা তথ্য দেওয়ারও অভিযোগ আনা হয়েছে। 

এসব ভুয়া অভিযোগ এমনভাবে করা হয় যেন অভিযোগকারী সত্যি সত্যি কোনো বৈধ মিডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি। আর অভিযোগ করা হয় এমন একটি আর্টিকেল নিয়ে, যেটা মুছে বা সরিয়ে ফেলাই তাদের উদ্দেশ্য। 

একটি ঘটনায় এলিমিনালিয়ার এক কর্মী নিজেকে ইতালির সংবাদপত্র লা রিপাবলিকার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ওই পত্রিকারই একটি লেখা সরানোর দাবি জানান গুগলের কাছে। ওই লেখায় চৌর্যবৃত্তির ভুয়া অভিযোগ করা হয় সেখানে।

লা রিপাবলিকার মালিক গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ওই অভিযোগ তাদের পক্ষ থেকে করা হয়নি। যে নামে অভিযোগ করা হয়েছে, সেরকম কোনো কর্মীও তাদের নেই।

ফাঁস হওয়া নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে, এলিমিনালিয়া আসলে ওই ভুয়া অভিযোগ জানিয়েছিল ইতালির সফটওয়্যার কোম্পানি এরিয়া এসপিএর চাহিদা মেটানোর জন্য। ওই কোম্পানি সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারের কাছে নজরদারি প্রযুক্তি বিক্রি করেছিল বলে ২০১১ সালে খবর বেরিয়েছিল। এলিমিনালিয়াকে কাজ দেওয়ার কথা গার্ডিয়ানের কাছে স্বীকার করেছে এরিয়া এসপিএ।

সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারের কাছে প্রযুক্তি বিক্রির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার পরও সিরিয়ায় প্রযুক্তি বিক্রি করায় নিষেধাজ্ঞা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক লাখ ডলার জরিমানা দিতে সম্মত হয় এরিয়া এসপিএ।

তাদের ভাষ্য, সিরিয়ায় যখন তারা প্রযুক্তি বিক্রি করেছিল, তখনকার সব নিয়ম মেনেই করেছিল। তারপরও তারা তাদের নিয়ে প্রকাশিত ওই খবর সরাতে চেয়েছে, কারণ তাদের ভাষায় তা ‘আংশিকভাবে ভুল’।

গার্ডিয়ানকে এরিয়া এসপিএ বলেছে, এলিমিনালিয়া সব নিয়ম মেনে কাজটি করবে জেনেই তারা তাদের কাজটি দিয়েছে।

‘নতুন ভবিষ্যৎ’

আরেক গ্রাহকের ফরমায়েশে সুইস ব্যাংকের অর্থ-পাচারের বিষয়ে সিঙ্গাপুরের বিজনেস টাইমসের একটি নিবন্ধ সরাতে গুগলের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এলিমিনালিয়ার একজন কর্মী। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের ‘প্রতিনিধি’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে গুগলকে পাঠানো সেই মেইলে তিনি লিখেন, “এই নিবন্ধটি আমাদের প্রকাশিত। বিনা অনুমতিতে এটা ছাপা হয়েছে।”

এ বিষয়ে গুগলের একজন মুখপাত্র বলেন, এ ধরনের প্রতারণামূলক বিষয় যাচাইয়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে ম্যানুয়ালি পর্যালোচনা করে গুগল। কোনো তথ্য সরানোর দাবি যারা করে, তারাও যেন জবাবদিহিতার বাইরে যেতে না পারে সেজন্য স্বচ্ছতা অবলম্বন করা হয়।

কোনো লিংক সরানোর ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনার জন্য পাল্টা যু্ক্তি উপস্থাপনেরও সুযোগ রয়েছে। যদি কেউ মনে করে যে এগুলো ভুলবশত সরানো হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনার সুযোগও রাখছে গুগল।

এসব পদ্ধতি অবলম্বনে সফলতা না পেলে প্রকাশিত কোনো নিবন্ধ সরিয়ে নিতে ‘তৃতীয পক্ষের’ প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন এলিমিনালিয়ার কর্মীরা।

এর একটি উদাহরণ দিয়ে গার্ডিয়ান লিখেছে, কেনিয়ায় এক বিরোধীদলের একটি ব্লগপোস্ট মুছে ফেলতে ‘ব্রাসেলস ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কমিশন’ এর ‘রাউল সতো’র পক্ষে একটি হোস্টিং কোম্পানিকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেও ‘কাঁচা ইংরেজির’ কারণে সন্দেহ তৈরি হয়, যে কারণে এলিমিনালিয়ার মূল উদ্দেশ্য আর সফল হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় কমিশন সাংবাদিকদের বলেছে, ছদ্মবেশে এসব হুমকির জন্য ব্যবহৃত ডোমেইনটি সাইবার নিরাপত্তা বিভাগকে সরাতে বলেছে তারা।

এ বছরের শুরুতেও এলিমিনালিয়ার ট্যাগলাইন ছিল- “আমরা আপনার অতীত মুছে দেব, যাতে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ নতুন করে গড়ে নিতে পারেন।” এখন তারাই নিজেদের নাম পরিবর্তন করে ‘আইডাটা প্রটেকশন’ নতুন নাম নিয়ে অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করতে বাধ্য হচ্ছে।

গার্ডিয়ান লিখেছে, এলিমিনালিয়ার যে গোমর ফাঁস হয়ে গেছে, এ নিয়ে যত প্রতিবেদন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, ভবিষ্যতে সেসব মুছে ফেলা খুব সহজ হবে না তাদের জন্য।