ফিল গফ রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টার সঙ্গে ১৯৩৮ সালের মিউনিখ চুক্তির তুলনা টেনেছিলেন, যে চুক্তি হিটলারকে চেকস্লোভাকিয়ার সুডেনটেন দখলের সুযোগ করে দিয়েছিল।
Published : 06 Mar 2025, 04:36 PM
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ইতিহাসজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলা রাষ্ট্রদূতকে বরখাস্ত করেছে নিউ জিল্যান্ড।
বরখাস্ত ফিল গফ যুক্তরাজ্যে নিউ জিল্যান্ডের হাই কমিশনার ছিলেন। মঙ্গলবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টার সঙ্গে ১৯৩৮ সালের মিউনিখ চুক্তির তুলনা টেনেছিলেন, জানিয়েছে বিবিসি।
৮৭ বছর আগের ওই চুক্তি অ্যাডলফ হিটলারকে তখনকার চেকস্লোভাকিয়ার কিছু অংশ দখলে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।
উইনস্টন চার্চিল তখন ওই চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে গফ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওভাল অফিসে চার্চিলের আবক্ষ মূর্তি ফিরিয়ে এনেছেন। কিন্তু আপনারা কী মনে করেন, তিনি সত্যিই ইতিহাস বোঝেন?”
গফের এই মন্তব্য ‘খুবই অস্বস্তিকর’ এবং তার অবস্থানকে ‘নড়বড়ে করে ফেলেছে’, যুক্তরাজ্যে নিয়োজিত সর্বোচ্চ দূতকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে বলেন নিউ জিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটারস।
লন্ডনে গফের মন্তব্যের দিনকয়েক আগে ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেইনে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা ও পরে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়াও বন্ধ করে দেয়।
গফ তার বক্তব্যে ট্রাম্পকে চার্চিলের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যিনি মিউনিখ চুক্তিকে নাৎসি জার্মানির হুমকির কাছে আত্মসমর্পণ হিসেবে দেখেছিলেন।
চার্চিল সেসময়ের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেইম্বারলিনকে টিটকারি মেরে বলেছিলেন, “যুদ্ধ ও অসম্মানের মধ্যে যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল আপনার। আপনি অসম্মান বেছে নিয়েছেন, তবুও যুদ্ধ হবেই।”
নিউ জিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটারস বলেছেন, গফের দৃষ্টিভঙ্গি মোটেও নিউ জিল্যান্ডের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে না।
“যখন আপনি এই ধরনের পদে থাকেন, তখন আপনি সরকার এবং এখনকার নীতির প্রতিনিধিত্ব করেন, আপনি স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারেন না। আপনি তখন নিউজিল্যান্ডের মুখপাত্র।
“কূটনৈতিকভাবে, একটি দেশের মুখপাত্র হয়ে আপনি এই ধরনের আচরণ করতে পারেন না,” পিটারস এমনটা বলেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্যে নিউ জিল্যান্ডের হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা গফ এর আগে দুই দফা নিউ জিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর অকল্যান্ডের মেয়র ছিলেন। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ছিলেন লেবার পার্টির নেতাও। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি আইন, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সব মন্ত্রণালয়ও সামলেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটারস নিউ জিল্যান্ডের বর্তমান সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন। প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সনের সঙ্গে আলোচনা করার আগেই তিনি গফকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
এখন নিউ জিল্যান্ডের নেতা লুক্সন, তার সঙ্গে আলাপ করা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত কীভাবে নিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে পিটারস বলেন, “আমি জানি তিনি প্রধানমন্ত্রী, আমিই তাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছি।”
নিউ জিল্যান্ড ফার্স্ট দলের ৭৯ বছর বয়সী প্রধান পিটারস এর আগে গফের সঙ্গে একই মন্ত্রিসভায় কাজও করেছেন।
তার দল লুক্সনের ন্যাশনাল পার্টি ও অ্যাক্ট পার্টির সঙ্গে জোট করে ২০২৩ সালে নিউ জিল্যান্ডে বর্তমানের মধ্য-ডানপন্থি সরকার গড়ে।
পরে লুক্সন জানিয়েছেন, তার সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই গফকে বরখাস্ত করে পিটারস ‘ঠিক কাজ করেছেন’।
এদিকে নিউ জিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক ‘খোঁড়া যুক্তিতে’ গফকে বহিষ্কারের সমালোচনা করেছেন।
“সম্প্রতি আমি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে গিয়েছিলাম, সেখানে অনেকে মিউনিখ ১৯৩৮-এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এখনকার পদক্ষেপের তুলনা করছিল,” সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া পোস্টে এমনটাই লিখেছেন তিনি।
১৯৩৮ সালের ওই মিউনিখ চুক্তি অনুসারে হিটলার চেকস্লোভাকিয়ার সুডেটেন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। তবে এরপরও হিটলারকে দমানো যায়নি, তিনি ইউরোপের আরও জায়গা দখলে অগ্রসর হন। ১৯৩৯ সালে তার বাহিনী পোল্যান্ডে আক্রমণ চালালে সূচনা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের।