ডুবোযানটিকে উদ্ধারের চেষ্টায় উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় ২০০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিবিড় তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
Published : 21 Jun 2023, 05:24 PM
আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে পড়ে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পর্যটকদের নিয়ে যেতো যে ডুবোযানটি সেটি পাঁচ আরোহীসহ তিন দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে।
এই পাঁচ আরোহীর মধ্যে একজন পাইলট ও অপর চারজন যাত্রী। এই যাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ, ব্রিটিশ অভিযাত্রী হামিশ হার্ডিং এবং ফ্রান্সের নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি পল হেনরি নারজুলেত।
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে আটলান্টিকের ৩ হাজার ৮০০ মিটার নিচে। ১৯৮৫ সালে ওই ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। পর্যটন সংস্থা ওশেনগেইট টাইটানিকের ওই ধ্বংসাবশেষ দেখাতে নিয়ে যায় পর্যটকদের।
এজন্য ওশেনগেইট ব্যবহার করে কার্বন-ফাইবারের তৈরি ২২ ফুট লম্বা প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কেজি ভরের একটি ডুবোযান, যার নাম টাইটান। এটি সাগরতলের ৪০০০ মিটার (১৩১২৩ ফুট) পর্যন্ত গভীরে যেতে সক্ষম।
পাঁচ আরোহীসহ এই টাইটানকে উদ্ধারের চেষ্টায় উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় ২০০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিবিড় তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
এ অভিযান চালাতে গিয়ে উদ্ধারকর্মীদের যেসব বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে তুলে ধরা হল।
ওশেনগেইট জানিয়েছে, ডুবোযানটিতে থাকা অক্সিজেন বৃহস্পতিবার ভোররাতের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এরপর আরোহীদের নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো আর কোনো অক্সিজেন যানটিতে থাকবে না।
মহাসাগরের বন্ধুর তলদেশ
যদি ডুবোযান টাইটান মহাসাগরের তলদেশে গিয়ে পড়ে থাকে তাহলে এর উদ্ধারের সম্ভাবনা প্রায় নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ আছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই মাইল গভীরে। এই দূরত্বের অর্ধেক যাওয়ার পর টাইটানের সঙ্গে পানির ওপরে থাকা নিয়ন্ত্রণ জাহাজ পোলার প্রিন্সের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
টাইটানিকের ডুবে যাওয়া ও এর ধ্বংসাবশেষ বিশেষজ্ঞ টিম মালটিন বলেন, “নিচে নিকষ কালো অন্ধকার। ঠাণ্ডায় জমে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করে। সমুদ্রতলটি ঢেউখেলানো কাদায় ভরা। অন্ধকারের কারণে মুখের সামনে হাত আনলেও তা দেখা যাবে না।”
এটা তুলে নিয়ে আসবেন?
ডুবোযানটি যদি মহাসাগরের তলদেশে চলে যায় তাহলে আরেকটি ডুবোযান দিয়ে সেটিকে তুলে নিয়ে আসার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের গভীরতায় পৌঁছানোর মতো শুধু হাতেগোনো কয়েকটি ডুবোযান আছে। যদি সেগুলোর কোনোটি নিচে পড়ে থাকা নিখোঁজ ডুবোযানটির কাছে পৌঁছায়ও সেটিকে টেনে তুলতে পারবে না, কারণ এ ধরনের কোনো ডুবোযানেরই টাইটানকে টেনে উপরে তুলে নিয়ে আসার মতো শক্তি নেই।
যদি এটি মহাসাগরের তলদেশে থাকে তবে প্রচুর অজ্ঞাত জিনিসের সঙ্গে থাকবে।
ব্রিটেনের কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেনসিক ভূবিজ্ঞানী জেমি প্রিঙ্গল বলেন, “মহাসাগরের তলদেশে কী আছে তার চেয়ে চাঁদের পিঠে কী আছে সে বিষয়ে বেশি জানি আমরা, কারণ আমরা সেখানে জরিপ চালাইনি।”
এটি যদি মহাসাগরে ভেসে ওঠে
ডুবোযানটি মহাসাগরে ওপরে ভেসে উঠে যদি একবার ডুবতে থাকে আবার ভেসে উঠতে থাকে তবে সেটি খড়ের গাদায় সুই খোঁজার মতো পরিস্থিতি তৈরি করবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। একটি ট্রাকের সমান আকারের এই যানটি যদি আংশিক ডুবে থাকে তবে এটি খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন হবে। যদি এটি বিশাল মহাসাগরের দূর কোনো প্রান্তে থাকে তবে জাহাজ ও একে খুঁজতে থাকা রবোটিক আরওভি-র (দূর থেকে চালিত যান) ডুবোযানটিকে খুঁজে পেতে অনেক সময় লাগবে।
রেডিও ও জিপিএস সিগন্যাল
রেডিও বা জিপিএস সিগন্যালের তরঙ্গ পানির মধ্য দিয়ে চলতে পারে না, তাই ডুবোযানটি যদি পানির নিচে থাকে তাহলে এগুলো কোনো কাজে আসবে না। মহাসাগরের পানিতে সব ধরনের বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ পুরোপুরি অকেজো। কিন্তু এখানে শব্দ তরঙ্গ খুব ভালো কাজ করে, তিমি ও শুশুকের মতো প্রাণী এটিই ব্যবহার করে আর মানুষও তাই করে।
পানির মধ্য দিয়ে শব্দ খুব দ্রুত যায়, প্রতি সেকেন্ডে ১৫০০ মিটার। তাই উদ্ধারকর্মীরা পানিতে সোনার (Sonar) লাগানো বয়া ফেলে নিখোঁজ টাইটানকে থেকে আসা সম্ভাব্য শব্দ শনাক্ত করে সেটির অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন:
টাইটানিক পর্যটকদের ডুবোযানের খোঁজে থাকা উদ্ধারকর্মীরা ‘শব্দ শুনেছেন’