অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও বিদেশি বিনিয়োগ চায় তালেবান

আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নতিতে গ্রহণ করা কৌশলের অংশ হিসেবে তালেবান সরকার বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত বাণিজ্যমন্ত্রী।

রয়টার্স
Published : 2 Jan 2023, 03:05 PM
Updated : 2 Jan 2023, 03:05 PM

জনগণকে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি আফগানিস্তানে বিদেশিদের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য করার আহ্বান জানিয়েছে তালেবান।

তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত বাণিজ্যমন্ত্রী হাজি নূরুদ্দিন আজিজি বলেন, ‘‘আমরা দেশজুড়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন প্রকল্প চালু করব। আমরা সব সরকারি প্রশাসনকে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করব। একইসঙ্গে আমরা মসজিদের ‍মাধ্যমে জনগণকেও দেশীয় পণ্য ব্যবহার করে দেশকে সমর্থন করতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করব।

‘‘আমরা এরকম যে কোনো কিছুকে সমর্থন করব যেটা আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সাহায্য করবে।”

দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে গ্রহণ করা কৌশলের অংশ হিসেবে তালেবান সরকার বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।

আজিজি বলেন, ‘‘যারা বিদেশ থেকে আফগানিস্তানে পণ্য আমদানি করেন তারা আমাদের দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে বলছেন। তারা বিদেশ থেকে আমদানি না করে এখানে বিনিয়োগ করতে চান।”

ইরান, রাশিয়া ও চীনসহ আরো কয়েকটি দেশে আফগানিস্তানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানান তিনি।

আজিজি আরও বলেন, আফগানিস্তানে চীনের শিল্পাঞ্চল ও থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে। রাশিয়া ও ইরান থেকে যেখানে বিনিয়োগ হবে।

২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। গত বছরের শেষ দিকে দেশটির নারী ও মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ ও কাজের অধিকারের উপর তালেবানের একের পর এক নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংগঠন আফগানিস্তানে তাদের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে।

তালেবান ক্ষমতা দখলের পর দেশটির জন্য বরাদ্দ অধিকাংশ বৈদেশিক সহায়তা তহবিল আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দেওয়া এবং তাদের উপর আরোপ করা নানা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির ব্যাংকিং খাত প্রায় ভেঙে পড়েছে। ‍তার উপর কাবুলে বিদেশিদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনার পর বিনিয়োগকারীদের সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে।

এ মাসে কাবুলে একটি হোটেলের ক্যাটারিংয়ে হামলায় বেশ কয়েজন বিদেশি গুরুতর আহত হয়েছেন। চীনের ব্যবসায়ীদের জন্য ওই হোটেলে খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গিদল ইসলামিক স্টেট ওই হামলার দায় স্বীকার করে।

ওই হামলার পর বিনিয়োগকারীরা দেশটিতে বিনিয়োগের বিষয়ে নতুন করে ভাবছেন বলে রয়টার্সকে জানান চীনা ব্যাবসায়ীদের এক নেতা।

এ বিষয়ে আজিজি বলেন, তাদের প্রশাসন বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।

‘‘ব্যবসায়ীদের যেন ক্ষতি না হয় সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। (কাবুলে) আক্রমণের কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। তবে এটা ঠিক, যদি ক্রমাগত (হামলার ঘটনা) ঘটে থাকে তবে তারা খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।”

আজিজি তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে আরো বলেন, তাদের যেসব ভূমি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো সেগুলোকে এখন তারা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বানাতে চান।

তার মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা তালেবান মন্ত্রিসভা এবং অর্থনৈতিক কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আফগানিস্তানের খনি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানান তিনি। যার আর্থিক মূল্য এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

তিনি আরও বলেন, পশ্চিমের হেরাতে একটি লৌহ খনি এবং মধ্যাঞ্চলের গোর প্রদেশের একটি সীসা খনিতে বিনিয়োগ করতে নিলামে প্রায় ৪০টি কোম্পানি অংশ নিয়েছে। দ্রুতই তারা ওই নিলামের ফলাফল প্রকাশ করবে।

এছাড়া, তেল, গ্যাস ও গম আমদানির বিষয়ে গত বছর সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের চুক্তি সই হওয়ার কথাও জানান তিনি। শিগগির এসব পণ্য সরবরাহ শুরু হবে।

নারীদের উপর নানা নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে কথা বলেননি আজিজি।

তবে বলেছেন, তার মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে নারী নেতৃত্বাধীন ব্যবসার পণ্য প্রদর্শনের জন্য একটি স্থায়ী কেন্দ্র ও হাব তৈরি করা হবে।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা সবসময়ই নারী বিনিয়োগকারীদের সমর্থন করেছি।”