খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মানুর উপত্যকায় আকস্মিক বন্যায় ১০টি সেতু ও বেশ কিছু ভবন ধ্বংস হয়েছে। আটকা পড়েছেন সেখানকার নদীর অপর পারের মানুষেরা।
Published : 29 Aug 2022, 11:18 PM
“আমাদের ত্রাণ প্রয়োজন, ওষুধ প্রয়োজন। দয়া করে সেতুটি আবার গড়ে দিন। আমাদের কাছে এখন আর কিছু্ই নেই”- সংবাদকর্মীদের কাছে হাতে লেখা চিরকুট ছুড়ে দিয়ে এভাবেই সাহায্য চাইছেন পাকিস্তানে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মানুর উপত্যকায় বন্যায় সেতু ভেঙে নদীর ওপারে আটকে পড়া শত শত মানুষ।
গত শুক্রবার মানুর উপত্যকায় আকস্মিক বন্যায় ওই অঞ্চলের ১০টি সেতু ও বেশ কিছু ভবন ধ্বংস হয়েছে। আটকা পড়েছেন সেখানকার নদীর অপর পারের মানুষেরা। বিবিসি’র সংবাদকর্মীদের একটি দল ঘটনাস্থল থেকে খবর সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় লোকজন তাদের কাছে হাতে লেখা ওই চিরকুট ছুড়ে দেন।
পাকিস্তানের কাঘান পর্বত এলাকায় অবস্থিত মানুর উপত্যকা। এটি পাকিস্তানের বিখ্যাত একটি পর্যটন এলাকা। সেখানে বন্যায় এ পর্যন্ত নারী, শিশুসহ অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আকস্মিক বন্যার কারণে উপত্যকাটির সঙ্গে প্রধান শহরের একমাত্র সংযোগ সেতুটি ভেঙে পড়ায় নদীর অপর পারের গ্রামের মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সহায়তার জন্য অপেক্ষায় আছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।
বিবিসি জানায়, তাদের সাংবাদিকরা বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তায় বিপজ্জনকভাবে এক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে মানুর উপত্যকায় পৌঁছেন। মানুরে দুটি সেতু পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। কাঠ দিয়ে অস্থায়ীভাবে নদী পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সেখানে জিনিসপত্র নিয়ে বসে ছিলেন এক বয়স্ক নারী। বিবিসি-কে তিনি জানান, নদীর এপার থেকে ওপারে তার বাড়ি দেখা গেলেও সেতু ভেঙে পড়ায় তিনি সেখানে যেতে পারছেন না।
সংবাদকর্মীরা জানান, নদীর ওপারে মাটির ঘরের সামনে মানুষজনকে বসে থাকতে দেখেছেন তারা। সরকারি কর্মকর্তা ভেবে তাদের উদ্দেশে হাত নেড়েছেন ওপারের মানুষ। আর তখনই এক টুকরো কাগজের লেখনীতে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে তা পাথরভর্তি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নদীর ওপাশ থেকে ছুড়ে দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
নদীর এপার-ওপারের মানুষের মধ্যে এখন যোগাযোগের একমাত্র উপায় হয়ে উঠেছে এ পদ্ধতি। মোবাইল নেটওয়ার্কও সেখানে কাজ করছে না।
হাতে লেখা চিরকুটে ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করাসহ আটকে পড়া গ্রামবাসীদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ এবং ওষুধ সাহায্য চাওয়া হয়েছে। চিরকুটে লেখা হয়েছে, “অনেক মানুষ অসুস্থ। পায়ে হেঁটে যেতে পারবে না। দয়া করে সেতুটি তৈরি করে দিন। এটিই শহরের সঙ্গে সংযোগের প্রধান পথ।”
জুন থেকে শুরু হওয়া অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হড়কা বানও দেখা দিয়েছে। দেশটির দক্ষিণাংশেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটেছে। সিন্ধু প্রদেশের ২৩টি জেলা এখনও বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। বেলুচিস্তান প্রদেশেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ।যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) বলছে, সর্বশেষ ১১৯ জনকে নিয়ে বন্যায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ১০৩৩ জন; মৃতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৩৪৮। গত ২৪ ঘন্টায় আহত ৭১ জনকে নিয়ে মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫২৭ জনে।