ইয়ানোমামি নৃগোষ্ঠীর ১৬ জন অভুক্ত লোককে জরুরি চিকিৎসার জন্য জঙ্গল থেকে হেলিকপ্টারে করে তুলে নিয়ে এসেছে ব্রাজিল।
জরুরি চিকিৎসা পরিস্থিতি ঘোষণার পর কর্তৃপক্ষ এ পদক্ষেপ নেয়। অপুষ্টিতে ভুগে কয়েকশ ইয়ানোমামি শিশুর মৃত্যু হলে সরকার জরুরি চিকিৎসা পরিস্থিতি ঘোষণা করে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুয়িজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা রেইনফরেস্টের নৃগোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য পূর্বসূরী কট্টর ডানপন্থি জাইর বোলসোনারোকে অভিযুক্ত করেছেন।
আদিবাসী ইয়ানোমামি নৃগোষ্ঠীর লোকজন দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় হোরাইমা রাজ্যের সংরক্ষিত এলাকায় বসবাস করে। ওই অঞ্চলের গভীর বনাচ্ছাদিত এলাকাগুলোতে সোনার সন্ধানে খনন ও গাছ কাটার জন্য পানি দুষিত হয়ে পড়েছে, এই দুষণের কারণেই শিশুগুলোর মৃত্যু হয়েছে।
এই এলাকায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাও প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
শনিবার প্রেসিডেন্ট লুলা হোরাইমা সফর করেন। এই রাজ্যটির উত্তরপশ্চিমে ভেনেজুয়েলা ও পূর্বে গিনির সীমান্ত আছে।
রাজ্যটির ইয়ানোমামি শিশুরা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে, এমন খবর প্রকাশের পর লুলা সেখানে যান। লুলা জানিয়েছেন, সেখানে তিনি যা দেখেছেন তাতে ‘মর্মাহত’ হয়েছেন।
“মানবিক সংকটের চেয়েও বেশি, হোরাইমাতে যা দেখেছি তা গণহত্যা: এটা ইয়ানোমামিদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত অপরাধ, দুর্ভোগের বিষয়ে অসংবেদনশীল একটি সরকার এটা করেছে,” পরে বলেছেন তিনি।
“আমি এখানে এসেছি এটা বলতে, আমরা আমাদের আদিবাসী লোকজনকে মানুষ হিসেবে গণ্য করবো,” বলেন তিনি।
ইয়ানোমামি সংরক্ষিত এলাকাগুলোতে আনুমানিক ২৮ হাজার আদিবাসী বসবাস করেন। তারা শিকার করে, জুম চাষ করে এবং ছোট ছোট, বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আধা-স্থায়ী গ্রামগুলোতে বসবাস করেন।
তার ক্ষমতার চার বছরে বোলসোনারো প্রায়ই আদিবাসীদের সংরক্ষিত এলাকাগুলো আকারের সমালোচনা করতেন এবং এগুলোর কিছু অংশ কৃষি ও খনির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার সরকার পরিবেশগত সুরক্ষার উদ্যোগগুলো দুর্বল করে তুলেছিল আর সমালোচকদের অভিযোগ বোলসোনারোর বাগাড়ম্বর ওই অঞ্চলে অবৈধ কার্যকলাপে উৎসাহ যুগিয়েছে।
বর্তমানে ইয়ানোমামি সংরক্ষিত এলাকায় প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক অবৈধ খনিগুলোতে কাজ করছে বলে ধারণা করা হয়। এই এলাকাটি সোনা, হীরা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। ২০২১ সালে খনির লোকজন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে ইয়ানোমামিদের ওপর গুলি চালিয়েছিল।
ফের ক্ষমতায় আসার পর লুলা সরকার জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে পারদের বিষে দুষিত হয়ে পড়া পানি পান করে পাঁচ শতাধিক আদিবাসী শিশু মারা গেছে। পানি দুষণের এই বিষয়টি সরাসরি অবৈধ সোনার খনির সঙ্গে সম্পর্কিত।
ইয়ানোমামি নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেখানে একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করবে এবং চিকিৎসা কর্মীদের ওই এলাকায় পাঠাবে বলে ঘোষণা করেছে ব্রাজিলের কর্তৃপক্ষ।