টেলিভিশনে সরাসরি ভাষণ দিতে এসে কাতালিন নোভাক নিজের ভুল করার কথা স্বীকার করেন।
Published : 11 Feb 2024, 11:27 AM
শিশু যৌননিপীড়নের একটি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপরাধে দোষীসাব্যস্ত হয়ে দণ্ড পাওয়া এক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেওয়ার কেলেঙ্কারির দায় মাথা নিয়ে পদত্যাগ করেছেন হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট কাতালিন নোভাক।
টেলিভিশনে সরাসরি ভাষণ দিতে এসে কাতালিন নোভাক নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। নিজের ভুল করার কথা স্বীকার করে ৪৬ বছর বয়সী নোভাক বলেন, “আমি আমার পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।”
বিবিসি জানায়, গত সপ্তাহে কাতালিন নোভাকের বিরুদ্ধে একটি খবর প্রকাশ পায়। যেখানে বলা হয়, তিনি এমন এক ব্যক্তিকে ক্ষমা করেছেন যিনি রাষ্ট্র পরিচালিত একটি শিশুসদনের একজন পরিচালকের বিরুদ্ধে উঠা শিশু যৌননিপীড়নের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে শিশুদের বাধ্য করেছিলেন।
এ খবর প্রকাশের পরপর কাতালিন নোভাকের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয় এবং বিক্ষোভকারীরা তার পদত্যাগ দাবি করেন।
নিজের এ কাণ্ডের জন্য নোভাক ক্ষমা চেয়েছেন এবং বলেছেন, এই ক্ষমা প্রদাণ করে তিনি ‘ভুল’ করেছেন।
সাবেক বিচারমন্ত্রী জুডিত ভার্গা যিনি ওই ক্ষমার আবেদনে অনুমোদন দিয়েছিলেন তিনিও তার বর্তমান দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
বিবিসি জানায়, গত বছর এপ্রিলে ক্যাথেলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের হাঙ্গেরি ভ্রমণ উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট নোভাক ২৫ কারাবন্দিকে সাধারণ ক্ষমা করেন। গত সপ্তাহে ক্ষমা পাওয়া ওই ২৫ কারাবন্দির নাম স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
ওই তালিকায় রাজধানী বুদাপেস্টের কাছে একটি শিশুসদনের কারাদণ্ড প্রাপ্ত উপ পরিচালকের নামও দেখা যায়। ওই শিশুসদনের পরিচালকের বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে উপ পরিচালক অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে শিশুদের বাধ্য করেছিলেন বলে আদালতে প্রমাণিত হয় এবং তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠা পরিচালকও দোষীসাব্যস্ত হন এবং তার আট বছরের কারাদণ্ডের সাজা হয়।
এমন একজনকে ক্ষমা করে দেওয়ায় নোভাকের পদত্যাগের দাবিতে হাঙ্গেরি জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিরোধীদলগুলো যে বিক্ষোভে যোগ দিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা শুরু করে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের ঘনিষ্ঠ মিত্র নোভাক। তিনিই প্রথম নারী যিনি হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। ২০২২ সালের মার্চ মাসে তিনি এ দায়িত্ব নেন। যদিও দেশটির প্রেসিডেন্ট পদটি মূলত আলংকারিক।
নোভাক এর আগে পারিবারিক নীতিবিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। টেলিভিশনে তিনি বলেন, “যাদের কষ্ট দিয়েছি এবং যেসব ভুক্তভোগীর মনে হয়েছে যে আমি তাদের সমর্থন করিনি, আমি তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
“শিশুদের ও তাদের পরিবারের সুরক্ষায় আমি আছি, আমি ছিলাম এবং আমি থাকব।”
এ ঘটনা হাঙ্গেরির দীর্ঘদিনের জাতীয়তাবাদী সরকারের জন্য একটি নজিরবিহীন রাজনৈতিক কেলেঙ্কারিতে পরিণত হয়েছে।
বিশেষ করে, এটি ক্ষমতাসীন দলের জন্য গভীর বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে, যারা ঐতিহ্যগত পারিবারিক মূল্যবোধকে তার সামাজিক নীতির ভিত্তি করে তুলেছে।