‘এন্টি-সেমেটিজম রুখতে’ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ঢেলে সাজাতে মার্কিন প্রশাসনের দেওয়া চাপ উপেক্ষা করায় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট নতুন এ হুমকি দিলেন।
Published : 16 Apr 2025, 12:36 PM
গবেষণাসহ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পুনর্বিন্যাসে মার্কিন প্রশাসনের চাওয়া প্রত্যাখ্যান করার পর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবার হার্ভার্ডের করছাড় সুবিধা বাতিলের হুমকি দিয়েছেন।
বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টি ট্রাম্প প্রশাসনের চাওয়াকে ‘বেআইনি’ অ্যাখ্যা দেওয়ার পর মঙ্গলবার ট্রাম্প এ হুমকি দেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রিপাবলিকান প্রশাসন বলেছিল, হার্ভার্ডকে তার অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ঢেলে না সাজালে কেন্দ্রীয় সরকার আর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অনুদান দেবে না।
হার্ভার্ড এই চাপ প্রত্যাখ্যান করায় ট্রাম্প এখন বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ‘ক্যাম্পাসে এন্টি-সেমেটিজমের’ জন্য ক্ষমা চাইতে বলছেন।
হোয়াইট হাউজ গত সপ্তাহে হার্ভার্ডের কাছে ‘ক্যাম্পাসে এন্টি-সেমেটিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের’ অংশ হিসেবে প্রশাসন, নিয়োগ ও ভর্তি পদ্ধতিতে পরিবর্তনসহ তাদের দাবিসম্বলিত একটি তালিকা পাঠায়।
এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে হার্ভার্ড সোমবার বলেছে, হোয়াইট হাউস তার কমিউনিটিকে ‘নিয়ন্ত্রণের’ চেষ্টা করছে।
এটাই প্রথম বড় মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়, যা তার নীতি পরিবর্তনের প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ উপেক্ষা করল, লিখেছে বিবিসি।
হোয়াইট হাউজ যে ব্যাপক পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিল, তার মধ্যে ছিল- বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভূক্তিমূলক কর্মসূচিগুলো বন্ধ করা এবং সব ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির সমারোহ নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা। এসব দাবি মানলে হার্ভার্ডের কার্যক্রম বদলে যেত এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ পোক্ত হত।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, গাজা যুদ্ধ ও ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের বিরুদ্ধে গতবছর যখন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্যাম্পাসগুলো বিক্ষোভ উত্তাল হয়ে ওঠে, তখন শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
হার্ভার্ড কমিউনিটির কাছে লেখা এক চিঠিতে এ প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার বলেন, হোয়াইট হাউজ শুক্রবার একটি ‘হালনাগাদ ও সম্প্রসারিত দাবির তালিকা’ পাঠিয়েছে এবং সরকারের সঙ্গে ‘আর্থিক সম্পর্ক’ বজায় রাখতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘অবশ্যই সেসব দাবি মানতে হবে’ বলে সতর্ক করেছে।
তিনি লেখেন, “আমরা আমাদের আইনজীবীর মাধ্যমে প্রশাসনকে জানিয়েছি, আমরা তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করব না। বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাধীনতা বিসর্জন দেবে না বা সাংবিধানিক অধিকার ত্যাগ করবে না।”
গার্বার বলেন, এন্টি-সেমেটিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বাধ্যবাধকতাকে বিশ্ববিদ্যালয় ‘হালকাভাবে নেয়নি’, তবে সরকার বাড়াবাড়ি করছে।
“যদিও সরকার বর্ণিত কিছু দাবিতে ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা রয়েছে, তবে বেশিরভাগই হার্ভার্ডের ‘বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের’ ওপর সরাসরি সরকারি নিয়ন্ত্রণের প্রতিনিধিত্ব করে।”
তার চিঠি পাঠানোর পরপরই শিক্ষা বিভাগ জানায়, তারা হার্ভার্ডের ২২০ কোটি ডলারের অনুদান এবং ৬ কোটি ডলারের চুক্তি স্থগিত করছে।
পরে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, হার্ভার্ড যদি তার ভাষায় ‘রাজনৈতিক, আদর্শিক ও সন্ত্রাসবাদ অনুপ্রাণিত/সমর্থিত ‘অসুস্থতার?’ পক্ষে চাপ’ অব্যাহত রাখে তাহলে তাদের করছাড় মর্যাদা তুলে নেওয়া যায় কিনা তা ভাবছেন তিনি।
অবশ্য কীভাবে এটা করবেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা বলেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের কর আইন অনুযায়ী, জনসাধারণের শিক্ষায় ‘বিশেষভাবে পরিচালিত’ বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই ফেডারেল আয়কর দেওয়া থেকে অব্যাহতি পেয়ে আসছে।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট পরে সাংবাদিকদের বলেন, “ইহুদি আমেরিকান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কলেক ক্যাম্পাসে যে এন্টিসেমেটিক কর্মকাণ্ড হয়েছে তার জন্য হার্ভার্ড ক্ষমা চাইছে এমনটা দেখতে চান ট্রাম্প।”
তিনি হার্ভার্ড ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নাগরিক অধিকার আইনের ষ্ষ্ঠ ধারা ভঙ্গেরও অভিযোগ আনেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আইনের এই ধারায় সম্প্রদায় বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে কারও ফেডারেল অর্থায়ন প্রাপ্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এই ষষ্ঠ ধারা অনুযায়ী, কারও ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধে দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানি চলে, কংগ্রেসকে ৩০ দিনের নোটিসও দিতে হয়। তবে কলাম্বিয়া বা হার্ভার্ডের ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির অনেক অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতায় অসাংবিধানিক আক্রমণের অজুহাত হিসেবে ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভকে অন্যায্যভাবে ‘এন্টিসেমেটিজম’ অভিহিত করা হচ্ছে।
ম্যাসাচুসেটসে অবস্থিত হার্ভার্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দাবির মুখে দৃঢ় অবস্থান নিলেও ফেডারেল সরকারের চাপের মুখে নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের নীতিমালা কঠোর করা নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন গত মাসে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ কোটি ডলারের ফেডারেল তহবিল প্রত্যাহার করেছিল।
তহবিল প্রত্যাহার নাগরিক অধিকার আইনের ষষ্ঠ ধারা ও বাক স্বাধীনতার লঙ্ঘন- যুক্তি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনেক অধ্যাপক এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। এই বিষয়ে আগামী ১ মে-র মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের জবাব চেয়েছেন নিউ ইয়র্কের এক ফেডারেল বিচারক।