ইউএসএআইডির ওই ২ কোটি ১০ লাখ ডলার আদতে ভারতে নয়, বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল বলে ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
Published : 21 Feb 2025, 05:07 PM
ভারতের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের বরাদ্দ ২ কোটি ১০ লাখ ডলার নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের করা মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক মহলে নতুন উত্তেজনা উসকে দিয়েছে।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৃহস্পতিবার মিয়ামিতে এক সম্মেলনে বলেন, ভারতে ওই অর্থ খরচের মাধ্যমে সম্ভবত ‘অন্য কাউকে নির্বাচিত করার চেষ্টা ছিল’।
বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইউএসএআইডির কার্যক্রম সংস্কারের অংশ হিসেবে ইলন মাস্ক নেতৃত্বাধীন একটি দল বিভিন্ন দেশে সংস্থাটির নানান বরাদ্দ বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার কয়েকদিন পর ট্রাম্প এ মন্তব্য করলেন।
তার এই মন্তব্যের পর ভারতের শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বরাদ্দকৃত মার্কিন অর্থকে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’ অ্যাখ্যা দিয়ে বিরোধীদল কংগ্রেসই এই হস্তক্ষেপ চেয়েছে বলে অভিযোগ এনেছে, জানিয়েছে বিবিসি।
কংগ্রেস এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ট্রাম্পের মন্তব্য ‘অর্থহীন’।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরপরই ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের লোকবল ও বাজেট কমাতে ধনকুবের মাস্ককে প্রধান করে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই) বানান।
এই বিভাগের উদ্দেশ্যই হচ্ছে করদাতাদের অর্থ বাঁচানো, সঙ্গে দেশের ঋণ কমিয়ে আনা, বলেছেন মাস্ক।
দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমেই তিনি ইউএআইডি-র ওপর খড়্গহস্ত হন। মার্কিন এই সংস্থাটি গত শতকের ষাটের দশক থেকেই বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহযোগিতা কার্যক্রম দেখভাল করে আসছে।
কিন্তু মাস্কের দাবি, এই সংস্থাটি অহেতুক নানা প্রকল্পে মার্কিন করদাতাদের অর্থ খরচ করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কাজে তো আসেইনি, উল্টো জালিয়াতির মাধ্যমে অনেককে পকেট ভরার সুযোগ করে দিয়েছে।
ট্রাম্প ও মাস্ক এখন বলছেন, ইউএসএআইডি বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক প্রচারণা নিয়ন্ত্রণেও অর্থ ব্যয় করেছে।
রোববার তাদের ডিওজিই বাংলাদেশ, ভারত, মলদোভাসহ বেশ কয়েকটি দেশে এমন প্রকল্পে বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করে।
এই সিদ্ধান্তের পক্ষ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ভারতের এমনিতেই অনেক অর্থ, তার ওপর তারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কর আরোপকারী দেশও।
বৃহস্পতিবার ফের তিনি ‘ভারতে ভোটার উপস্থিতি’ বাড়াতে বরাদ্দের প্রসঙ্গ টানেন এবং এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
“আমার মনে হয় তারা অন্য কাউকে নির্বাচিত করতে চেয়েছিল। আমাদের অবশ্যই এটা ভারতের সরকারকে জানাতে হবে,” মিয়ামির সম্মেলনে বলেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের পর বৃহস্পতিবার বিজেপি নেতা অমিত মালব্য ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে লন্ডনের এক অনুষ্ঠানে রাহুল গান্ধীর দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেন।
ওই ক্লিপে রাহুলকে বলতে শোনা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর মতো প্রধান গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো বুঝতেই পারেনি যে ভারতের গণতান্ত্রিক মডেলের একটি বড় অংশ ভেঙে পড়েছে।
“লন্ডনে গিয়ে রাহুল গান্ধী যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপ, বিদেশি শক্তিগুলোকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন.” এক্সে দেওয়া পোস্টে এমন অভিযোগ করেন মালব্য।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো ইউএসএআইডির কী কী সহযোগিতা পেয়েছে তার বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
ইউএসআইডি কি সত্যিই ভারতকে ২১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে?
এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে একের পর এক গণমাধ্যম প্রতিবেদন করলেও ট্রাম্প কিংবা তার ডিওজিই এখন পর্যন্ত ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ইউএসএআইডির ২ কোটি ১০ লাখ ডলার দেওয়ার সপক্ষে কোনো নথিপত্র বা প্রমাণ হাজির করেনি।
এ প্রসঙ্গে ভারতের নির্বাচন কমিশনেরও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা এসওয়াই কুরেশি বলেছেন, তার মেয়াদকালীন সময়ে এমন অর্থ প্রাপ্তির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বিজেপি নেতা অমিত মালব্য এর আগে দাবি করেছিলেন, ২০১২ সালে কুরেশির মেয়াদকালেই ভারতের নির্বাচন কমিশন ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর প্রচারণায় সহযোগিতা পেতে ইউএসএআইডির পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত জর্জ সরোস ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্ট একটি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছিল।
কুরেশি ওই অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ওই চুক্তিতে কোনো পক্ষেরই যে আর্থিক বা আইনি বাধ্যবাধকতা নেই তার স্পষ্ট উল্লেখ আছে।
এদিকে শুক্রবার ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ চড়ছে তা আসলে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, ভারতের জন্য নয়।
চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত তিন বছরের ওই বরাদ্দের এক কোটি ৩৪ লাখ ডলার এরই মধ্যে খরচও হয়ে গেছে, নথিপত্রের বরাত দিয়ে বলেছে ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যম।