গাজার যুদ্ধে সবাইকে মেরে ফেলতে পারমাণবিক বোমা ফেলাটাও একটি বিকল্প হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী এলিয়াহু।
Published : 05 Nov 2023, 11:32 PM
ইসরায়েলের লাগাতার বোমা হামলায় ধূলিসাৎ গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেই সেখানকার যুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ফেলাটাও আরেকটি বিকল্প হিসাবে হাতে রাখার কথা বলে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ইসরায়েলের ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই এলিয়াহু।
সরকারি বৈঠকগুলোয় তাকে আর রাখা হচ্ছে না। নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কট্টর-ডান দলের ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী এলিয়াহু কোনও বৈঠকে অংশ নিতে পারবেন না।
ইসরায়েলের বেতারে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজায় কাল্পনিক পারমাণবিক বোমা হামলা প্রসঙ্গে কথা বলেছিলেন এলিয়াহু। পারমাণবিক বোমা হামলার বিষয়ে তার ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
এলিয়াহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “গাজায় সবাইকে মেরে ফেলতে তিনি কোনও ধরনের আণবিক বোমা ফেলার পক্ষ সমর্থন করেন কিনা। জবাবে এলিয়াহু বলেছিলেন, “সেটি একটি বিকল্প হতে পারে।”
তার এমন মন্তব্য আরব গণমাধ্যমগুলোতে শিরোনাম হয়েছে। কলঙ্কিত হয়েছে ইসরায়েলের মূলধারার সম্প্রচারমাধ্যমগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও এমন মন্তব্য ‘আপত্তিকর’ বলেই মানছেন।
এলিয়াহু কিংবা তার দলের নেতা কেউই গাজায় যুদ্ধ পরিচালনায় নিয়োজিত মন্ত্রীদের ফোরামে নেই। ইসরায়েলের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পর্কে তাদের না আছে ভেতরকার কোনও জ্ঞান, আর না আছে এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেওয়ার কর্তৃত্ব।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, “এলিয়াহু বাস্তবতার নিরীখে কথা বলেননি। ইসরায়েল এবং ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) নিরীহ মানুষদের ক্ষতি এড়াতে আন্তর্জাতিক আইনের সর্বোচ্চ মানদণ্ড বজায় রেখে অভিযান চালাচ্ছে। আমরা জয় না পাওয়া পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত রাখব।”
গত ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে ঢুকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু এবং ২৩৯ জন জিম্মি হওয়ার পর থেকে গাজায় হামাসকে নির্মূল করতে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল।
বিমান হামলার পাশাপাশি গাজায় এখন ইসরায়েল স্থল অভিযানও চালাচ্ছে। যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৫শ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এতে ইসরায়েলের যুদ্ধ কৌশল নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
তার মধ্যে ইসরায়েলি মন্ত্রীর পারমাণবিক হামলা নিয়ে মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, “অবশ্যই এটি আপত্তিকর কথা। আর প্রধানমন্ত্রী এটি পরিষ্কার করেই বলেছেন যে, এলিয়াহু সরকারের পক্ষ থেকে কথা বলছেন না।”
এলিয়াহুর কথা নিয়ে এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসার পর এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) বিষয়টি সামাল দেওয়ার চেষ্টা নিয়েছেন মন্ত্রী নিজেই। বলেছেন, বিচক্ষণ যে কারও কাছেই এটি পরিষ্কার যে, আণবিক বোমা নিয়ে তার কথাটি ছিল রূপক অর্থে।
তবে এলিয়াহু এও বলেন, “বলিষ্ঠ হাতে এবং অনেক বেশি শক্তি দিয়ে হলেও সন্ত্রাসবাদের জবাব দেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন।”