ইউক্রেইনে বিধ্বস্ত মালয়েশীয় বিমানের নিহত যাত্রীদের শোকস্তব্ধ স্বজনেরা কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছেন তথ্যের আশায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তেমন সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
Published : 18 Jul 2014, 02:43 PM
নেদারল্যান্ডস থেকে আসা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ-১৭ এর কুয়ালালামপুরে অবতরণের কথা ছিল স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ১০ মিনিটে। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ইউক্রেইনের আকাশে বিমানটিকে ‘ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে’ ভূপাতিত করা হয়। নিহত হন বিমানের ১৫ জন ক্রুসহ ২৯৮ জন যাত্রীর সবাই।
স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পেয়ে শুক্রবার ভোরেই বিমানবন্দরে জড়ো হন হতভাগ্য যাত্রীদের উদ্বিগ্ন স্বজনরা।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন, প্রিয়জনের ভাগ্যে কি ঘটেছে নিশ্চিত জেনেও তথ্য পাওয়ার আশায় ছুটোছুটি করতে দেখা যায় অনেককে।
আকমা মোহাম্মদ নূর নামের এক নারী, যার বোন রাহিমা ওই বিধ্বস্ত বিমানটিতে ছিলেন, বলেন, “আমি টিভিতে খবরটি দেখি। আমার বোনের সঙ্গে তার ছেলেরও থাকার কথা ছিল, কিন্তু ছেলেটি আসতে চায়নি।”
রোজার ঈদ উপলক্ষে রহিমা নিজ দেশ মালয়েশিয়ায় ফিরছিলেন।
“আমরা একসঙ্গে ঈদ করতে চেয়েছিলাম,” কাঁদতে কাঁদতে জানান নূর।
তার বোন ত্রিশ বছর ধরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বসবাস করছিলেন বলে জানান তিনি। এবার পাঁচ বছর পর তিনি দেশে ফিরছিলেন।
বিমানটি ভূপাতিত করার জন্য দেশটির রুশপন্থী বিদ্রোহীদের দায়ী করেছে ইউক্রেইন সরকার, আর বিদ্রোহীরা অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনার জন্য সরকারি বাহিনীকে দায়ী করেছে।
এমএইচ-১৭’র ঘটনা চলতি বছর মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের জন্য দ্বিতীয় বিপর্যয়ের ঘটনা। এর আগে এয়ারলাইন্সটির কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংগামী ফ্লাইট এমএইচ-৩৭০ মার্চে ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়।
প্রথম ঘটনার রহস্যের সমাধান হওয়ার আগেই আবার আরেকটি বিপর্যয়কর ঘটনা। বিধ্বস্ত বিমানটির যাত্রীদের তালিকা দিতে না পারায় অন্য যাত্রীদের আত্মীয়রা নিজ দেশের এয়ারলাইন্সটির ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ছিলেন।
এক ব্যক্তি এয়ারলাইন্সটির কর্মকর্তাদের একহাত নিচ্ছিলেন।
“এমএএস (মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স স্টিস্টেম) কি স্টুপিড? আমরা শুধু যাত্রী তালিকার নামগুলো জানতে চাই,” বলেন তিনি।
তিনি জানান, ওই বিমানে তার বোন, বোনের স্বামী এবং তাদের দুই বছরের সন্তানের আসার কথা ছিল।
এক নারী আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে খবরের জন্য উৎকণ্ঠিতভাবে অপেক্ষারত অপর একজন বলেন, “এমএএস’র মিডিয়া নেটওয়ার্ক থেকে ফেইসবুক অনেক বেশি কার্যকরী।”
“এটা খুবই হাস্যকর। এরা হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছে। আমরা তালিকাটি জানতে চাই। শুধু তালিকা, আর কিছু না,” উত্তেজিতভাবে বলেন তিনি।
এর আগে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স জানিয়েছিল, ইউক্রেইন আকাশসীমা থেকে রাশিয়ার আকাশসীমার দিকে আসার পথে ১৪১৫ জিএমটি’তে তাদের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং তথ্য থেকে দেখা যায়, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় বিমানটি ভূমি থেকে ৩৩ হাজার ফুট ওপরে ছিল।