ভারতের ক্ষমতায় বসতে যাওয়া বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের জন্য পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে একটি ‘পরামর্শ’ রেখে যাবে বিদায়ী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকার, যাতে বাংলাদেশ ও চীনের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক অব্যাহত রাখার আহ্বান থাকবে।
Published : 16 May 2014, 06:00 PM
মনমোহন সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন তার উত্তরসূরির জন্য এ বিষয়ক ‘সুনির্দিষ্ট পরামর্শ’ রেখে যাবেন।
রাষ্ট্রপতি নরেন্দ্র মোদিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানোর পর আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তার সঙ্গেই নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে বিদায় নেবেন মেনন।
নরেন্দ্র মোদির সরকারে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাকে করা হবে সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটা পরিষ্কার যে, মেননের দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
ভারতে প্রতিটি সরকারই নিজেদের পছন্দ মতো ব্যক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেন। প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ির সরকারে এ পদে ছিলেন ব্রজেশ মিশ্র। কিন্তু ২০০৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির হারের পর বিদায় নেন তিনি।
মনমোহনের প্রথম জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব জেএন দীক্ষিত। তার আকস্মিক মৃত্যুর পর ইনটিলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি)সাবেক প্রধান এমকে নারায়ণকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়।
কিন্তু ২০০৮ মালে বোম্বে বোমা হামলার পর তাকে সরিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শিব শঙ্কর মেননকে এ দায়িত্বে আনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার।
ব্রজেশ মিশ্র ও দীক্ষিতের পর থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মাধ্যমে ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে ভারত সরকারের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মেনন তার উত্তরসূরির জন্য যে পরামর্শ রেখে যাবেন তাতে মূলত চীন ও বাংলাদেশের ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে।
সম্প্রতি ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দিলে চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে মূল কারিগর ছিলেন মেনন।
গত বছর মে মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের বেইজিং সফরে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মেননের। এরপর একই মাসে নয়া দিল্লি সফর করেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং।
গত বছর অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বেইজিং সফর করেন এবং সে সময় দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক একটি চুক্তি সই হয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবেন মেনন।
বাংলাদেশ বিষয়ে মেননের নোটে ভারতের নিরাপত্তা ও যোগাযোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ‘ঢাকার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক’ অব্যাহত রাখার গুরুত্ব তুলে ধরা হবে।
নতুন প্রশাসন যাতে ‘বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিরক্তিকর’ কিছু না করে সেজন্য জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাদের প্রতি পরামর্শ রেখে যাবেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশে ভারতে ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ বিরুদ্ধে মোদির বক্তব্য নিয়ে বিদায়ী সরকারের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ রয়েছে।
“কিন্তু তাদের ফেরত পাঠানো হলে তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে জটিল করে তুলবে। হাসিনা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে এমন কোনো উস্কানিমূলক পদক্ষেপ চায় না বর্তমান প্রশাসন এবং এ বিষয়টি অনাগত প্রশাসনকেও অবগত করা হবে,” বলেন ওই কর্মকর্তা।
এছাড়া প্রস্তাবিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই এবং ভারত-বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়েও বিদায়ী সরকারের পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনকে বলা হবে।