ইলিয়াস আলীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার সরকারি আশ্বাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপি বলেছে, তাদের দলের নিখোঁজ এই সাংগঠনিক সম্পাদক সরকারের কাছেই আছে।
Published : 17 Apr 2013, 07:15 AM
সিলেট হবে বিক্ষোভের নগরী: ইলিয়াস আলী
তিনি বলেন, “নিখোঁজ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জাতি ও ইলিয়াসের পরিবারকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, তাকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত দেবে। তাদের কথা-বার্তা থেকে আমরা এখনো বিশ্বাস করি, ইলিয়াস সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা কোনো এজেন্সির কাছে আছে।”
ইলিয়াস আলীকে সুস্থভাবে তার পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বিএনপির পক্ষ থেকে খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা সকাল সোয়া ১০টার দিকে বনানীর সিলেট হাউজে গিয়ে ইলিয়াসের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে সহমর্মিতা জানান।
চতুর্থ তলায় ইলিয়াস আলীর বাসার ড্রইং রুমে তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার সঙ্গে কথা বলেন তারা। ছেলে-মেয়েদের খোঁজ-খবর নেন। এ সময়ে লুনার ছোট বোন দিলারা শারমীনসহ দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস, ছোট ছেলে লাবি সারার ও ছোট মেয়ে সাইয়ারা নাউয়ালকে নিয়ে এ বাড়িতেই থাকেন তাহসিনা রুশদীর লুনা।
গত বছরের ১৭ এপ্রিল রাতে বনানীর এই বাসা থেকে নিজের গাড়ি নিয়ে বেরুনোর পর নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনছার আলী।
এরপর থেকে সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস ও তার গাড়ি চালকের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএনপির এই অভিযোগ প্রত্যাখান করে আসছে।
ইলিয়াসের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা দলের চেয়ারপারসনের পক্ষে স্বান্তনা জানাতে এখানে এসেছি। একবছর আগে গুম করা হয় আমাদের দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা সভাপতি ইলিয়াস আলীকে। আজো সরকার তার কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। অথচ তারা (সরকার) ইলিয়াস আলীর পরিবারকে কথা দিয়েছিল- জীবত অবস্থায় তাকে ফিরিয়ে দেবে।”
সরকার সারা দেশে ‘গুম-হত্যা’ চালিয়ে এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, “জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা আমাদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। উদ্দেশ্য একতরফা নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় যাওয়া।”
খন্দকার মোশাররফ বলেন, “গুম-হত্যা-নির্যাতন চালিয়ে নির্দলীয় সরকারের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। আমরা সরকারকে বলব, এই বাঁকা পথ পরিহার করে সরল পথে ফিরে আসুন। গণতন্ত্রের পথে আসুন।”
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে- এমন গুঞ্জনের বিষয়ে দলটির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “জিয়া অরফানেজ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি সরকারের দায়ের করা বানোয়াট মামলা।”
সরকারের এক মন্ত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করার কথা বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি বলব, সরকার ইচ্ছা করলেই বানোয়াট মামলায় নেত্রীকে গ্রেপ্তার করতে পারেন। ১/১১ তে জরুরি সরকারও নেত্রীকে গ্রেপ্তার করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে তারা সফল হয়নি। এই সরকারও সফল হবে না।”
এ সময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহদপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, আকবর সিরাজী, কাইয়ুম চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের নবীন আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার মারুফ হোসেন, গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক গাজী সায়েদুর রহমান বাবুল, ইলিয়াস মুক্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নয়া পল্টনে বিএনপির মহানগর কার্যালয়ে স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের এক বছর পার হওয়া উপলক্ষে এক প্রতিবাদ সভা হয়। সেখানে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।