নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগে সম্মত হওয়ার পর বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোর রাস্তাগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে।
Published : 10 Jul 2022, 02:31 PM
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রোববারও দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ কার্যত বিক্ষোভকারীদের দখলে থাকলেও সেখানে উত্তেজনা নেই। অনেকে ইতস্তত ঘোরাফেরা করছেন, কেউ কেউ প্রাসাদের ভেতরে সেলফিও তুলছেন।
আগের দিনের লঙ্কাকাণ্ডের স্মৃতি তরতাজা থাকলেও গোটাবায়া পদত্যাগে রাজি হয়েছেন, এই খবরে আন্দোলনকারীদের ক্রোধ যে অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে, এ চিত্রই তা বলছে।
শনিবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জলকামান, গুলি, ব্যারিকেড উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্টের ঔপনিবেশিক আমলের বাসভবনে ঢুকে পড়ে।
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সুইমিং পুলে বিক্ষোভকারীদের ঝাঁপ ও বিশাল খাটে বসে থাকার ছবি-ভিডিও দেশবিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্থান পাওয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়ে যায়।
স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার এ প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগেই দেশ ‘দেউলিয়া হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
দেশটিতে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। হাতে বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় দেশটির সরকার অতি জরুরি এসব পণ্য আমদানি করতে পারছে না।
ভয়াবহ এই পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া এবং তার ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে সরকারের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী বলে মনে করে শ্রীলঙ্কার বেশির ভাগ মানুষ। মহা প্রতাপশালী রাজাপাকসে পরিবারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে তাই গত কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চলছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশে।
ব্যাপক বিক্ষোভ, সহিংসতা আর প্রাণহানির মধ্যে গত মে মাসে মাহিন্দা পদত্যাগ করেন। কিন্তু গোটাবায়া ক্ষমতা ছাড়তে রাজি ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী পদে তিনি নিয়ে আসেন পুরনো মিত্র বিক্রমাসিংহেকে।
আইএমএফ এর সাথে ঋণ আলোচনা শুরু হওয়ায় এবং ভারত থেকে কিছু জ্বালানি পাওয়ায় সে সময় উত্তাপ কিছুটা কমলেও জ্বালানি তেলের মজুদ শূন্যে নেমে আসার পর ফের আন্দোলন চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
বিক্ষোভে অংশ নিতে দ্বীপদেশটির বিভিন্ন অংশ থেকে মানুষ গাড়ি, ভ্যান, বাসে, ট্রেনে করে রাজধানীতে ছুটে আসে।
বিরোধী দল ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর চাপে শনিবার সকালে পুলিশ কারফিউ তুলে নিলে এক পর্যায়ে কলম্বো পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
বিক্ষোভকারীরা পরে জলকামান ও গুলি উপেক্ষা করে দুপুরের দিকে কলম্বো ফোর্টের চাথাম স্ট্রিটে ব্যারিকেড টপকে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে পড়ে।
প্রেসিডেন্টের বাসভবনে তাণ্ডব চালানোর পর রাতে তারা প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাসভবনে ঢুকে পড়েন এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
জনরোষ থেকে বাঁচতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে শুক্রবারই প্রাসাদ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।
তিনি এখন কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি।
বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হানা দেওয়ার সময় রনিলও সেখানে ছিলেন না।
পরে শনিবার রাতেই স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আরেওয়ার্দানা জানান, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগে রাজি হয়েছেন।
“শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিতে প্রেসিডেন্ট আগামী ১৩ জুলাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,” জনগণকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন স্পিকার।
প্রেসিডেন্টের জায়গায় ক্ষমতা যার হাতে যাওয়ার কথা, সেই প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও সর্বদলীয় একটি সরকার গঠনের স্বার্থে ‘পদত্যাগের ইচ্ছার’ কথা জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী পদ ছেড়ে দিলে দেশটিতে শেষ পর্যন্ত কোন প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার হস্তান্তর হবে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি।