বিদেশি ক্রেতাদের এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধ করতে হবে, তা না হলে গ্যাস সরবরাহই ব্ন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
Published : 01 Apr 2022, 06:06 PM
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তার এ আলটিমেটাম প্রত্যাখ্যান করেছে; জার্মানি একে ‘ব্ল্যাকমেইল’ অ্যাখ্যা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বৃহস্পতিবার পুতিনের জারি করা ডিক্রির কারণে ইউরোপ তাদের কাছে সরবরাহ হওয়া গ্যাসের এক তৃতীয়াংশ হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে।
রাশিয়ার গ্যাসের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল জার্মানি এরই মধ্যে ‘জরুরি পরিকল্পনা’ কার্যকর করেছে, যা শেষ পর্যন্ত ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশকে গ্যাস রেশনিংয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলেও অনেকের অনুমান।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার হামলার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ব্যাংক, কোম্পানি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ক্রেমলিনের সহযোগীদের ওপর যে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পুতিন জ্বালানি রপ্তানিকেই সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার করতে চাইছেন।
মস্কো ইউক্রেইনে তার কর্মকাণ্ডকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলছে।
পুতিন বৃহস্পতিবার বলেন, “রাশিয়ার গ্যাসের ক্রেতাদের অবশ্যই রাশিয়ার ব্যাংকে রুবল অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। সেসব অ্যাকাউন্টেই আগামীকাল (১ এপ্রিল) থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।”
“যদি এভাবে মূল্য পরিশোধ না হয়, তাহলে আমরা একে ক্রেতাদের অক্ষমতা বিবেচনা করবো...কেউ আমাদের কাছে বিনামূল্যে কিছু বিক্রি করে না, আমরাও দানছত্র খুলে বসিনি- মানে হচ্ছে, রুবলে মূল্য পরিশোধ না করলে বলবৎ থাকা সব চুক্তিই বাতিল হয়ে যাবে,” টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধ করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। যদিও রাশিয়া যদি তার অবস্থানে দৃঢ় থাকে তাহলে রুবল ছাড়া গ্যাসের মূল্য পরিশোধের সত্যিই আর কোনো উপায় বিদেশি কোম্পানিগুলোর আছে কিনা তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি।
ইতালি বলছে, তারা রাশিয়ার পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া দেখাতে ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে; বলেছে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হলে তাদের নিজেদের মজুদে যে গ্যাস আছে তা দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো যাবে।
এদিকে জার্মানির জ্বালানি কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে তা কীভাবে মোকাবেলা করা যায় এবং মস্কো গ্যাস রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে তার রোডম্যাপ নিয়ে বার্লিনের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
পুতিনের ডিক্রির পর বিদেশি ক্রেতাদের এখন গ্যাসের মূল্য পরিশোধে গ্যাজপ্রম ব্যাংকে বিশেষ হিসাব খুলতে হবে। গ্যাজপ্রম এরপর ক্রেতাদের পক্ষ হয়ে রুবল কিনবে এবং তা অন্য হিসাবে স্থানান্তর করবে, বলা হয়েছে রুশ আদেশে।
তবে এ লেনদেন বিষয়ক একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ডিক্রি জারি হলেও কিছু কিছু চুক্তির ক্ষেত্রে রুবলে মূল্য পরিশোধ এপ্রিলের দ্বিতীয় ভাগ থেকে শুরু হতে পারে, বাকিদেরটা শুরু হতে হতে মে মাস লেগে যাবে। এর অর্থ হচ্ছে, ইউরোপের গ্যাস সরবরাহ ১ এপ্রিল থেকে বন্ধ হচ্ছে না।
রুবলে মূল্য পরিশোধে পুতিনের নেওয়া সিদ্ধান্ত রাশিয়ার মুদ্রাকে ফের শক্তিশালী করে তুলেছে; ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে তাদের হামলার পর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় ওই মুদ্রার ভয়াবহ পতন দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ওই ক্ষতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে রুবল।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে মস্কোর প্রবেশাধিকারে লাগাম টানতে পশ্চিমারা যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, রুবলে মূল্য পরিশোধ শুরু হলে সেগুলোও ঠুনকো হয়ে যাবে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এখন রাশিয়ার বাইরে অন্য কারও কাছ থেকে গ্যাস পাওয়ার দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে এর সরবরাহ এমনিতেই খুব বেশি না থাকায় তাদের হাতে অন্য বিকল্পও নেই বলে মনে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও তা রাশিয়ার সরবরাহ করা গ্যাসের পরিমাণের ধারেকাছেও নেই।
তবে এরপরও জার্মানি জানিয়েছে, তারা ইউরোতেই গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করে যাবে।
ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহে সম্ভাব্য বিঘ্ন নিয়ে জার্মানির সঙ্গে মিলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
পুতিন বলছেন, রুবলে মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা রাশিয়ার সার্বভৌমত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।
পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, বলেছেন পুতিন।
“আমরা আমাদের সম্পদ ইউরোপীয় ভোক্তাদের পাঠাই, এই ক্ষেত্রে গ্যাসের কথাই ধরেন। তারা সেটা নেয় এবং আমাদেরকে ইউরোতে মূল্য পরিশোধ করে; পরে তারাই আবার ওই ইউরো জব্দ করে নেয়। এক্ষেত্রে এটা ধরে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে যে আমরা ইউরোপে যে গ্যাস পাঠাই তার অংশবিশেষ কার্যত বিনামূল্যেই গেছে। অবশ্যই এটা চলতে পারে না,” বলেছেন তিনি।
পুতিনের বৃহস্পতিবারের ঘোষণার পরপরই ইউরোপে গ্যাসের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে; ইস্পাত ও রাসায়নিক পণ্য নির্মাতাসহ অনেক কোম্পানিই তাদের উৎপাদনও কমিয়ে আনার কথা ভাবছে।