ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম বৈঠকে মিলিত হয়ে বিশ্বের প্রতি দায়িত্বের অংশ হিসেবে সংঘাত এড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
Published : 16 Nov 2021, 08:36 AM
বাইডেনকে ‘পুরনো বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করে শি বলেছেন, মানবাধিকার এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন ক্ষে্ত্রে নিয়ে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তাদের হতে হচ্ছে, তা উৎরাতে দুই পক্ষ থেকেই যোগাযোগ আর সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
ভিডিও কনফারেন্সের অপরপ্রান্তে হোয়াইট হাউজের রুজভেল্ট রুমের কনফারেন্স টেবিলে বসে বাইডেন বলেন, “আমার হয়ত আরও আনুষ্ঠানিক রেওয়াজ মেনে শুরু করা উচত ছিল। কিন্তু আপনি আর আমি তো কখনোই নিজেদের মধ্যে অত আনুষ্ঠানিকতায় যাইনি।”
রয়টার্স লিখেছে, হোয়াইট হাইজ থেকে প্রকাশিত ছবিতে শিকে দেখা যাচ্ছিল বড় একটি স্ক্রিনে। আর টেবিলে বসা বাইডেনের মুখে ছিল চওড়া হাসি।
বাণিজ্য, মানবাধিকার এবং দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক কর্মকাণ্ড ঘিরে বেইজি-ওয়াশিংটন বিরোধ ও উত্তেজনার মধ্যে দুই নেতার এ বৈঠকে ওপর নজর রাখছে পুরো বিশ্ব।
কোভিড-১৯ এর উৎস থেকে শুরু করে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করাসহ নানান ঘটনায় ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। দুই নেতার আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশের বিরোধ খানিকটা হলেও প্রশমিত হবে বলে আশা বিশ্লেষকরা।
বাইডেন ও শি-র মধ্যে সর্বশেষ গত ৯ সেপ্টম্বর কথা হয়েছিল, দুই নেতার দেড় ঘণ্টার ওই কথোপকথনে অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি প্রাধান্য পেয়েছিল।
তবে বাইডেন গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠক। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার পৌনে ৭টার দিকে তাদের এ বৈঠক শুরু হয়।
বাইডেন বলেন, “আমার মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শুধু আমাদের দুই দেশের ওপর নয়, সত্যি কথা বলতে, পুরো বিশ্বের ওপরই এটা প্রভাব ফেলে।”
দোভাষীর মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নেওয়া শি বলেন, “বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনীতির দেশ এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ ও সহযোগিতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।”
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট শি বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে প্রাণবন্ত ও স্থিতিশীল একটি সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।
সিনহুয়া লিখেছে, “শি বলেন, চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সবার জন্য লাভজনক সহযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়া, নিজেদের ঘরের সমস্যা সামলানোর পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক দায়িত্বগুলোও পালন করা।”
বিবিসি লিখেছে, দুই দেশের প্রতিযোগিতা যেন সংঘাতে পরিণত না হয়, সেজন্য সাধারণ বিবেচনাবোধ থেকেই একটি সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন বাইডেন।
শিকে তিনি বলেন, “আপনার সঙ্গে আগেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। সব দেশকেই এ রাস্তায় একই নিয়ম মানতে হয়।”
রয়টার্স জানিয়েছে, দুই নেতার এ বৈঠক থেকে বাণিজ্য বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তিতে পৌঁছানোর আশা করছেন না মার্কিন কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে ২০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আর সেবা কেনার প্রতিশ্রুতি পূরণে অনেকটাই পিছিয়ে আছে চীন। আবার চীনা পণ্যের শুল্ক বাধা দূর করার বিষয়েও ভাবছে না যুক্তরাষ্ট্র।
আসছে ফেব্রুয়ারিতে বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকসের সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের কর্মকর্তাদের পাঠাবে কি না, সেই প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি হোয়াইট হাউজ। যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা বেইজিং অলিম্পিকস বর্জন করতে বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের চীন বিশেষজ্ঞ স্কট কেনেডি বলেন, দুই পক্ষই সম্পর্কে এক ধরনের স্থিতিশীলতা ফেরাতে চাইছে।… কিন্তু প্রশ্ন হল, আদৌ তারা কোনো বিষয়ে কোনো মতৈক্যে পৌঁছাতে পারবে কি না।”