যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনটি সোমবার হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন ও চীনা কর্মকর্তারা।
Published : 12 Nov 2021, 12:00 PM
বাণিজ্য, মানবাধিকার এবং দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক কর্মকাণ্ড ঘিরে বেইজি-ওয়াশিংটন বিরোধ ও উত্তেজনার মধ্যে দুই নেতা এ বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন; এর মাধ্যমে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশের বিরোধ খানিকটা হলেও প্রশমিত হবে বলে অনেকে আশা করছেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কোভিড-১৯ এর উৎস থেকে শুরু করে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করাসহ নানান ইস্যুতে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। এ টানাপোড়েন যেন সংঘাতে না গড়ায়, তা নিশ্চিত করতে শি-র সঙ্গে মুখোমুখি বসাই ভালো হবে বলে মনে করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
চীনের কর্মকর্তারা বলছেন, তারাও সংঘা এড়াতে চান, মনোযোগ দিতে চান ‘ইতিবাচক প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’।
বেইজিং জলবায়ু সংকটের মতো বিভিন্ন বিষয় এবং করোনাভাইরাস মহামারীর অবসানে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতেও আগ্রহী, বলেছেন এক চীনা কর্মকর্তা।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান কপ২৬ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র যে কাঠামোগত চুক্তি করেছে তাও দুই দেশের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলন ঘিরে ‘ইতিবাচক সংকেতই’ দিয়েছে, বলেছেন তিনি।
“আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে গলফ খেলার মতো দেখি, যেখানে প্রত্যেকেই তার নিজের পারফরম্যান্স কীভাবে আরও ভালো করা যায় সেদিকে মনোযোগী থাকে। আমরা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বক্সিংয়ের মতো দেখি না, যেখানে একজন আরেকজনকে নক আউট করে দিতে চায়,” বলেছেন ওই চীনা কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া চাইলেও তারা তা দিতে রাজি হয়নি।
সোমবারের বৈঠকে শি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে ২০২২ সালে বেইজিংয়ে হতে যাওয়া শীতকালীন অলিম্পিকের দাওয়াতও দেবেন, বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে সিএনবিসি।
চীনে মানবাধিকার লংঘন নিয়ে উচ্চকণ্ঠ বাইডেনকে শি-র এই আমন্ত্রণ খানিকটা অস্বস্তিতেও ফেলে দিতে পারে। কোনো বৈঠকে অংশ নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেইজিংয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম; শি এমনকি মার্কিন মিত্র হিসেবে পরিচিত জাপানের টোকিওতে হওয়া গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকেও যাননি।
বাইডেন ও শি-র মধ্যে সর্বশেষ গত ৯ সেপ্টম্বর কথা হয়েছিল, দুই নেতার দেড় ঘণ্টার ওই কথোপকথনে অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি প্রাধান্য পেয়েছিল বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন এক মার্কিন কর্মকর্তা।
তাইওয়ানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের যে উত্তেজনা চলছে তা কমিয়ে আনতে বাইডেনও শি-র সঙ্গে মুখোমুখি বসতে আগ্রহী।
মার্কিন কর্মকর্তারা রোমে জি২০ সম্মেলনের সাইডলাইনেই বাইডেন-শি বৈঠক করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শি ওই বৈঠকে যাননি। করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে চীনের এই প্রেসিডেন্ট দেশের বাইরে বের হননি।
গত মাসে জুরিখে চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ইয়াং জিয়েচি ও মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভানের মধ্যে বৈঠকেই শি ও বাইডেনের মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠকের ব্যাপারটি ঠিক হয়। সুলিভান চীনা কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের কর্মকাণ্ড এবং হংকং, শিনজিয়ান ও তাইওয়ান পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন।
মার্কিন ও চীনা কয়েক কর্মকর্তা ধারণা দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, শি-বাইডেন বৈঠকের ব্যাপারে এখনও ঘোষণা দেওয়ার মতো কিছু হয়নি।
“বছর শেষ হওয়ার আগে ভার্চুয়াল দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে আমাদের মধ্যে। বিস্তারিত ঠিক করতে আলোচনা চলছে,” বলেছেন তিনি।