পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা ফের শুরু করতে ‘সদিচ্ছার প্রমাণ’ হিসেবে ওয়াশিংটনকে আটকে রাখা অর্থের মধ্যে এক হাজার কোটি ডলার ছাড় করতে বলেছে তেহরান।
Published : 03 Oct 2021, 01:13 PM
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাব্দুল্লাহিয়ান জানিয়েছেন, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আলোচনা ফের শুরু করার কথাবার্তা বলার চেষ্টা করেছিলেন।
তখন তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, আলোচনার বিষয়ে ওয়াশিংটনের যদি আগ্রহ থাকে, তাহলে তাদেরকে প্রথমে আটকে রাখা তেহরানের টাকার মধ্যে এক হাজার কোটি ডলার ছাড় করে ‘সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে’।
এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পরমাণু চুক্তির ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করতে দুই দেশের মধ্যে যে পরোক্ষ আলোচনা চলছিল চলতি বছরের জুন থেকে তাও বন্ধ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিনিময়ে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে লাগাম টানার শর্তে ২০১৫ সালে ইরান ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এটিই ইরান পরমাণু চু্ক্তি নামে পরিচিত।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তিটি থেকে সরিয়ে নেন; ওয়াশিংটন পরে ইরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল এবং দেশটির তেল বিক্রি আটকাতে একের পর এক পদক্ষেপ নিলে তেহরানও চুক্তিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে একে একে সরতে শুরু করে।
জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ওয়াশিংটন ফের পরমাণু চুক্তিটি সক্রিয় করতে উদ্যোগী হয়।
গত মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল, শনিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এমনটাই বলেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাব্দুল্লাহিয়ান।
ইরানের ব্যাংক ও জ্বালানি খাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় তেহরান তাদের তেল-গ্যাস বিক্রির টাকাসহ বিদেশি ব্যাংকে থাকা হাজার হাজার কোটি ডলারের সম্পদ নিতে পারছে না।
“যুক্তরাষ্ট্র নিউ ইয়র্কে (জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে) ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। আমি মধ্যস্থতাকারীদের বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ যদি তীব্র হয়, তাহলে সেরকম একটা প্রমাণও দেখানো প্রয়োজন। তারা সেটা করতে পারে আমাদের আটকে থাকা অন্তত এক হাজার কোটি ডলার ছাড় করে,” বলেন আমিরাব্দুল্লাহিয়ান।
টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “তারা ইরানের এক হাজার কোটি ডলার ছাড়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না; ছাড় করলে আমরা বলতে পারতাম, যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক দশকের মধ্যে একবার ইরানের স্বার্থ বিবেচনা করেছে।”
পশ্চিমা দেশগুলো ইরানকে পরমাণু আলোচনায় ফিরতে বারবার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে; তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি চুক্তিতে থাকা সীমা অতিক্রম করে অনেকদূর অগ্রসর হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে ‘সময় শেষ হয়ে আসছে’ বলেও বারবার বলে আসছে তারা।
তেহরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে সব নিষেধাধাজ্ঞা তুলে নিলে পরমাণু কর্মসূচির ক্ষেত্রে তারা এতদিন যে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার সবগুলোর মুখই উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব।
পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ ও ইরানের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৫-র চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার আগে আরও অনেকগুলো ইস্যুর সমাধান করতে হবে।
টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমিরাব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, ইরান ‘শিগগিরই’ ভিয়েনায় থমকে থাকা পরমাণু আলোচনায় ফিরবে। তবে এ সংক্রান্ত কোনো তারিখ বলতে রাজি হননি তিনি।